৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ তারিখে গুজরাতের বরোদায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
ক্ষুদ্রকায় গড়নের অধিকারী তিনি। ১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বরোদার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮০ সালে বরোদার পক্ষে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। কয়েক মৌসুম দারুণ খেলার সুবাদে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টিগোচরে পড়েন। নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্যে তাঁকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৪৯ টেস্ট ও ৯৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে পুনেতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে, সীমিত-ওভারের দলে নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পাননি।
১৯৮৬ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৫ জুন, ১৯৮৬ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। পাঁচটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীসহ একমাত্র ইনিংসে ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলনায়কের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এ সিরিজে তিনি ১৬ ক্যাচ লাভ করেন। সংখ্যার দিক দিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটি যে-কোন ভারতীয় উইকেট-রক্ষকের সর্বোচ্চ ছিল। এরপর থেকে দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় ভারতের মূল উইকেট-রক্ষক হিসেবে চিত্রিত হন।
ভারতের সেরা ও বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা পেয়েছেন। দারুণ উইকেট-রক্ষক ছিলেন। সর্বদাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। মাঝে-মধ্যেই নিজেকে বিরাটভাবে উপস্থাপন করতেন। তবে, দূর্ভাগ্যের সাথেও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। ৩৬ রানে গ্রাহাম গুচকে ফেরৎ পাঠাতে ব্যর্থ হলে ইংরেজ অধিনায়ক ৩৩৩ রান তুলেন। এটিই ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা মাসুল হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকবে ও গ্রাহাম গুচের খেলোয়াড়ী জীবনকে আরও উজ্জ্বীবিত করে তুলে। পরবর্তীতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ক্যাঙ্গারুর ন্যায় লাফিয়ে পড়ে জাভেদ মিয়াঁদাদ তাঁকে বিদেয় করেছিলেন। সময়ের পরিবর্তনে ভারত দলের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হন ও সৌরভ গাঙ্গুলীকে দল থেকে বাদ দেন।
সব মিলিয়ে খুব সম্ভবতঃ সৈয়দ কিরমানিকে পাশ কাটিয়ে ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা পাবেন। নিজ দেশেই অধিক সফল ছিলেন। ক্ষীপ্রগতিতে স্পিনারদের বল গ্লাভসবন্দী করতেন। মাদ্রাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদেরকে নরেন্দ্র হিরবাণী’র শিকারে পরিণত করা ও বিশ্বরেকর্ড গড়াকালীন উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনি নিত্য অনুষঙ্গ ছিলেন। বিদেশের মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিছু অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিয়েছিলেন। অন্য যে কারও তুলনায় দৌঁড়ে বল সংগ্রহ করার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর।
স্ট্যাম্পের সামনে অবস্থান করে সর্বদাই নিজেকে মেলে ধরা প্রয়াস চালান ও কখনোবা আরও দূর্দান্ত ভূমিকা রাখতেন। রিলায়্যান্স কাপে কপিল দেবের সাথে সমানতালে খেলেন। এরফলে রবি চতুর্বেদী অমর হিন্দি সংলাপে বলেন, ‘বড়ে মিয়া টু বড়ে মিয়া, ছোটে মিয়া সুবহান-আল্লাহ।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের ন্যায় পেসের স্বর্গভূমিতে খেলেছেন। নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দুইটি অর্ধ-শতক হাঁকান। ইংল্যান্ডের মাটিতে সিম উপযোগী পরিবেশেও একই সাফল্য পান।
কোটলায় নিম্নমূখী রানের খেলায় ৪৯ রান তুলেছেন। এ পর্যায়ে কোর্টনি ওয়ালশ, প্যাট্রিক প্যাটারসন, উইনস্টন বেঞ্জামিন ও উইনস্টন ডেভিসের বল মোকাবেলা করতে হয়েছে। ব্রিজটাউনে দলের সংগ্রহ ৬৩/৬ থাকা অবস্থায় ইনিংস পুণর্গঠনে নামেন। ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপ ও কোর্টনি ওয়ালশের বল মোকাবেলান্তে অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। করাচীতেও একই সাফল্য পেতে তাঁকে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।
ন্যাপিয়ার ও অকল্যান্ডে এ অর্জনের পুণরাবৃত্তি ঘটাতে রিচার্ড হ্যাডলি ও ড্যানি মরিসনের বলের মুখোমুখি হয়েছেন। মেলবোর্নে অস্ট্রেলীয় তারকা বোলার ক্রেগ ম্যাকডারমট, ব্রুস রিড ও মার্ভ হিউজের বিপক্ষে লড়ে অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ডারবানে অ্যালান ডোনাল্ড, মেরিক প্রিঙ্গল, ক্রেগ ম্যাকমিলান ও ব্রেট শ্যূলজের বল পাঁচ ঘণ্টা ধরে লড়েছেন।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ৪ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। একমাত্র ইনিংসে ৪ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সফরকারীরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালেম্বিকের সহযোগিতা নিয়ে বরোদরার জেটলপুরে কিরণ মোরে-অ্যালেম্বিক ক্রিকেট একাডেমি গঠন করেন। এছাড়াও, আইসিসি ডেভেলপম্যান্ট প্রোগ্রামের আওতায় উইকেট-রক্ষক কোচ হিসেবে বাংলাদেশ, কেনিয়া ও উগান্ডায় কাজ করেন। এক পর্যায়ে প্রশাসনের দিকে ধাবিত হন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সময়কালে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। তরুণদের দলে প্রবেশের ক্ষেত্র সৃষ্টিকরণে কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের সাথে একযোগে অগ্রসর হন ও সৌরভ গাঙ্গুলীকে দল থেকে বাদ দেন। ২০০৬ সালে আইসিএলে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে মনোনীত হন।
