কিম হিউজ
২৬ জানুয়ারি, ১৯৫৪ তারিখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মার্গারেট রিভার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তাঁর সহজাত প্রতিভা লক্ষ্য করা যায়। স্ট্রোকপ্লে মারতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুডি রাইবারজিক মন্তব্য করেছিলেন যে ২০ বছর বয়সেই তিনি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলবেন। তবে, কিম হিউজ ২১ বছর বয়সে দলটিতে যুক্ত হয়েছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকে ১১৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৯০-৯১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে সরব ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নাটালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২৬ খেলায় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৭০ টেস্ট ও ৯৭টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৭ সালে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৪ জুন, ১৯৭৭ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। একই সফরের ২৫ আগস্ট, ১৯৭৭ তারিখে লন্ডনের কেনসিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। মিক ম্যালনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১ রান সংগ্রহ করে মাইক হেনড্রিকের বলে বিদেয় নিয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
অ্যাশেজ সিরিজের ২২ টেস্ট খেলেছিলেন। এ পর্যায়ে ৩৮.৪৩ গড়ে তিন শতক সহযোগে ১৪৯৯ রান তুলেন।
ছয় বছর অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কত্ব করেন। সব মিলিয়ে ২৮ টেস্টে দলনেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তন্মধ্যে, নিজ দেশে মাত্র সাত খেলায় এ দায়িত্বে ছিলেন। অ্যাশেজ সিরিজে ৬ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ১ জয়, ৩ পরাজয় ও ২টিতে ড্র করেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন। তবে, লর্ডসে ১৯৮০ সালের শতবার্ষিকী টেস্টের সাফল্যকে ছাঁপিয়ে যেতে পারেননি। ঐ টেস্টে কেবলমাত্র তিনিই একটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। ১১৭ ও ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন। ক্রিকেটের ইতিহাসের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টের পাঁচদিনই ব্যাট হাতে নেমেছিলেন।
১৯৮০-৮১ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩৮ রানে পৌঁছানোকালে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫১ ও ৩০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। রিচার্ড হ্যাডলি’র অনবদ্য বোলিংশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
ভারতের বিপক্ষে সেরা ইনিংসগুলো খেলেছিলেন। ভারতের মাটিতে সর্বাধিক রান সংগ্রহের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। ছয় টেস্ট থেকে ৫৯৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে মাদ্রাজ টেস্টের প্রথম ইনিংসে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ১০০ রান তুলেছিলেন। অ্যালান বর্ডারের (১৬২) সাথে ২২২ রানের জুটি গড়েছিলেন।
১৯৭৯ ও ১৯৮৩ – এ দুইবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে ওয়েলিংটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটিতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম দিন খেলাটি মাঠে গড়ায়। তন্মধ্যে, কেবলমাত্র পঞ্চম দিন পুরোটা সময় খেলা সম্ভব হয়। তিনি ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে জহির আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে অ্যাডিলেডে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ৩০ ও ১০৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ চার ইনিংস থেকে তিনি কেবলমাত্র দুই রান যুক্ত করতে পেরেছিলেন। শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে পরাজয়ের পর অশ্রুসিক্ত নয়নে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকেন। ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি উভয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তবে, অ্যান্ড্রু হিলডিচের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে ৩৭.৪১ গড়ে নয় শতক সহযোগে ৪৪১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
তৎকালীন নিষিদ্ধ ঘোষিত দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রেলিয়ার বিদ্রোহী দলের সদস্যরূপে গমন করেন। দুইটি সফরে দলের নেতৃত্বে ছিলেন। এরফলে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড থেকে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, বেতারে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পার্থভিত্তিক হেল স্কুলের প্রধান ছিলেন। তাঁর কীর্তিকে ঘিরে ক্রিস্টিয়ান রায়ান ‘গোল্ডেন বয়’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ওয়াকা কর্তৃপক্ষ তাঁর সম্মানার্থে মাঠের ভোজনালয় কক্ষের নামকরণ করে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। জেনি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। শন ও সিমন হিউজ নামীয় যমজ সন্তানসহ ব্রাডলি ও ক্লেয়ার নাম্নী এক কন্যা সন্তানের জনক।