৩১ মে, ১৯২৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী পঙ্কজ রায়ের জন্মের ঠিক দুই বছর পূর্বে তাঁর জন্ম। প্রথম উইকেট-রক্ষক হিসেবে ভারতের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ভারতের প্রথম সেরা উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা পান। এছাড়াও, প্রথম বাঙালী হিসেবে ভারতের পক্ষে খেলেন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ও শক্ত মজবুত গড়ন নিয়ে স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করতেন। প্রাণবন্তঃ ভূমিকা নিয়ে পেস ও স্পিন – উভয় ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষেই সমান দক্ষ ছিলেন।
মণি নাম্নী এক বোন এবং সমীর ও রণবীর নামীয় তাঁর অপর দুই ভ্রাতা ছিল। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুম থেকে ১৯৫৭-৫৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর তুলনায় ১৯ বছরের ছোট রণবীর পরবর্তীতে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় বাংলা দলের পক্ষে খেলেছিলেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে কলকাতার লা মার্টিনেরে কলেজে ভর্তি হন। এরপর, সিনিয়র কেমব্রিজ থেকে স্নাতকধারী হন। ১৭ বছর বয়সে বিদ্যালয় জীবন শেষ করার পরপরই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। রঞ্জী ট্রফির ঐ খেলায় প্রতিপক্ষ ছিল বিহার দল। ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ১৩ ও ২ রান তুলেন এবং তিনটি ডিসমিসাল ঘটিয়েছিলেন।
পরের খেলায় তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামেন। নিজ শহরে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় সিকে নায়ড়ু, বিবি নিম্বলকর, হীরালাল গায়কোয়াড়, মুশতাক আলীসমৃদ্ধ হোলকারের বিপক্ষে ২২৫ মিনিট ক্রিজের এক প্রান্ত আঁকড়ে থেকে ১৪২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কমল ভট্টাচার্য্যের অনবদ্য ক্রীড়াশৈলীতে হোলকার দল দশ উইকেটে পরাজিত হয়।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৪ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে লালা অমরনাথের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ভারত দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। পার্থের দ্য ডেইলি নিউজে এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, কলকাতায় ‘খোকন’ নামে পরিচিতি পান। মাঠে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে যথেষ্ট পরিপক্কতা তুলে ধরেন। ঐ সংবাদপত্রে তাঁর সীমিত অভিজ্ঞতার বিপরীতে দূর্দান্ত প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রকাশিত হয়। ১ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। কানবর রাই সিংয়ের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪ ও ২ রান সংগ্রহ করলেও একটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। স্বাগতিক দল ২৩৩ রানে জয় পেয়ে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
ভারত দলে প্রথম ১২ টেস্টে ছয়জন উইকেট-রক্ষককে খেলানো হবার পর তিনি ১৪ টেস্ট খেলেন। এ পর্যায়ে দক্ষতা ও ধারাবাহিকতার স্বাক্ষর রাখেন। ২০ ক্যাচ ও ১১ স্ট্যাম্পিং করেন। নরেন তামনে’র স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থানের পূর্ব-পর্যন্ত সেরা উইকেট-রক্ষক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান। ১৯৫২ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ইংল্যান্ড সফরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে করমর্দন করেন।
১৯৫২-৫৩ মৌসুমে নিজ দেশে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৫২ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৮২ খেলায় অংশ নিয়ে ১০৮ ক্যাচ ও ৩৬ স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। এ পর্যায়ে ৩ শতক সহযোগে ২৩.২৪ গড়ে ২৫৮০ রান তুললেও উঁচু পর্যায়ের ক্রিকেটে তা অনুপস্থিত ছিল। টেস্টে ১১.৭৮ গড়ে ১৬৫ রান তুলতে পেরেছিলেন। ক্রিকেটের বাইরে ফুটবল ও হকি খেলায় দক্ষতার ছাঁপ রাখেন। ইস্ট বেঙ্গলের পক্ষে ফুটবল ও হকিতে অংশ নিয়েছিলেন। ম্যাকলিওড এন্ড কোং লিমিটেডে কাজ করেন। এরপর, সাহু জৈন এন্ড কোম্পানীতে কাজ করার পর টাটায় চলে যান।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৯৪৮ সালে পঙ্কজ গুপ্তের ভ্রাতৃষ্পুত্রী রীনা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির অভিজিৎ ও মধুশ্রী নাম্নী সন্তান ছিল। ১৯৬০-এর দশকে কলকাতার ক্লাব ক্রিকেটে সক্রিয় ছিলেন। ২৭ জানুয়ারি, ১৯৭০ তারিখে খেলার পর স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। অতঃপর, সাউথ কলকাতায় মাত্র ৪৩ বছর ২৪১ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। কলকাতা ক্লাব ক্রিকেটে পি সেন মেমোরিয়াল ট্রফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
