Skip to content

১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ব্লুমফন্তেইনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, আম্পায়ার, রেফারি ও কোচ। ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্স, গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট, নর্দার্ন ট্রান্সভাল, অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ভ্যালি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।

১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৪০ টেস্ট ও ১০৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে বব উইলিসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৮২ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কার্ল রেকেম্যানের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। ত্রয়োদশ অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট অভিষেকে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। ১৬২ ও ৪৬ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তাঁর অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের সুবাদে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, প্রথম ওডিআইয়ে ৭৯ রান তুলেছিলেন। প্রথম তিন টেস্ট থেকে দুইটি অর্ধ-শতক ও একটি শতরানের ইনিংস খেলেন।

পরের বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া দল প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলে। এবারও তিনি স্বীয় ছন্দ ধরে রাখেন। ১৪১ রানের ইনিংস খেলে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসরে অংশ নেন। তবে, গ্রুপ পর্বে দল ছিটকে যায়। ১৯৮৪ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অস্ট্রেলিয়া দল শোচনীয় পরাজয়ের কবলে পড়লেও নিজের প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটান। শুরুটায় তেমন সুবিধে করতে পারেননি ও দল থেকে বাদ পড়ার পর্যায়ে চলে আসেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন বোলারদের দাপটে অস্ট্রেলিয়ার পুরো ব্যাটিংস্তম্ভ গুড়িয়ে গেলেও তিনি স্ব-মহিমায় ভাস্বর ছিলেন। পুরো সিরিজে ৫৬.১১ গড়ে ৫০৫ রান তুলেন। সংখ্যার দিক দিয়ে অন্য যে-কোন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানের তুলনায় দ্বিগুণের অধিক ছিল।

বর্ণবৈষম্যবাদের অবসান ঘটলে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নেতৃত্বদানের সুযোগ পান। ১৯৯২ সালে স্প্রিংবকের নেতৃত্বে থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ তারিখে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। পিটার কার্স্টেন, অ্যান্ড্রু হাডসন, অ্যাড্রিয়ান কুইপার, ডেভিড রিচার্ডসন, অ্যালান ডোনাল্ড, মার্ক রাশমেয়ার, মেরিক প্রিঙ্গল, রিচার্ড স্নেল, টারটিয়াস বস ও হান্সি ক্রোনিয়ে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৫৯ ও ৭৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অ্যান্ড্রু হাডসনের অসাধারণ শতক সত্ত্বেও খেলায় সফরকারীরা ৫২ রানে পরাজিত হয়।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর নিজ দেশে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১১৮ রানের শতক হাঁকিয়ে দুইটি দলের পক্ষে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কীর্তিগাঁথা রচনা করেন। এ পর্যায়ে ১০৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৪ সালে স্প্রিংবককে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৪৫ ও ২৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ডেভন ম্যালকমের অনবদ্য বোলিংশৈলী প্রদর্শনের সুবাদে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টের তুলনায় ওডিআইয়ে অধিক সরব ছিলেন। অংশগ্রহণকৃত ওডিআইয়ের কোনটিতেই শূন্য রানে বিদেয় নেননি। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন। এক পর্যায়ে রেফারি ও কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। রেফারি হিসেবে পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট, দুইটি লিস্ট-এ ক্রিকেট ও নয়টি টি২০ খেলা পরিচালনা করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। স্যালি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এমএইচ ওয়েসেলস নামীয় সন্তানের জনক।