কেন ওয়াডসওয়ার্থ
৩০ নভেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে নেলসনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের অল্প কিছুদিন পরই জুলাই, ১৯৬৯ সালে জাতীয় দলের সদস্যরূপে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩৩ টেস্ট ও ১৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৯ সালে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জুলাই, ১৯৬৯ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ডেল হ্যাডলি ও হ্যাডলি হাওয়ার্থের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৪ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, পাঁচটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ২৩০ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭০-৭১ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে রে ইলিংওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
এরপর থেকেই নেলসনের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটাতে সচেষ্ট হন। ব্যারি মিলবার্নের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐ সিরিজে তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকার স্বাক্ষর রাখতে না পারলেও পরবর্তীকালে ব্যাট হাতে তৎপর হন। এছাড়াও, গ্লাভস হাতে নিয়েও দারুণ সফল হন। প্রথম ১১ টেস্ট শেষে তাঁর ব্যাটিং গড় সাতের অল্প বেশী ছিল।
১৯৭৩ সালে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৫ জুলাই, ১৯৭৩ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।
১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৮০ ও ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ও ২৫ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নিলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ সালে সাবিনা পার্কে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন। স্বাগতিকদের ৫০৮ রানের জবাবে দলের সংগ্রহ ১০৮/৫ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। গ্লেন টার্নারের (২২৩*) সাথে ২২০ রানের জুটি গড়েন। নিজে করেন অমূল্য ৭৮ রান। এ পর্যায়ে এটি নিউজিল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির মর্যাদা পায় ও ১৫ বছর টিকেছিল।
দুই বছর পর ওডিআইয়েও ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। ক্রাইস্টচার্চে বেভান কংডনের সাথে ১৩০ রান তুলেন। তাসত্ত্বেও দল অবশ্য জয়ের সন্ধান পায়নি। ঐ খেলায় তিনি ১০৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। এরফলে, ওডিআইয়ের ইতিহাসে প্রথম উইকেট-রক্ষক হিসেবে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। অস্ট্রেলিয়া তাঁর প্রিয় প্রতিপক্ষে পরিণত হয়। কয়েকমাস পরই নিজের সেরা টেস্ট রানকে ৮০ রানে নিয়ে যান। এরফলে, নিউজিল্যান্ড দল তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের সন্ধান পায়।
১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ব্যাট হাতে তেমন ভূমিকা রাখতে না পারলেও রিচার্ড হ্যাডলি, রিচার্ড কলিঞ্জ ও হ্যাডলি হাওয়ার্থের বলগুলো নিপুণ দক্ষতার সাথে গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হয়েছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় তাঁর দল সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত অগ্রসর হলেও শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পেড়ে উঠেনি।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে নিজ দেশে বিষেন বেদী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ২৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, গ্লাভস হাতে নিয়ে ছয়টি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। ইনিংস ও ৩৩ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট ছিল।
এরপর, একই সফরের ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে ৫৬ বল মোকাবেলায় ৪৬ রান তুলে স্বাগতিকদের ৮০ রানের বিজয়ে অংশ নেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ আন্তর্জাতিকে পরিণত হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। জেনা ওয়াডসওয়ার্থ নাম্নী এক কন্যা রয়েছে। ১৯ আগস্ট, ১৯৭৬ তারিখে নেলসনে মাত্র ২৯ বছর ২৬৩ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।