২০ মে, ১৯৪৪ তারিখে ওরচেস্টারে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
‘নোম’ ডাকনামে ভূষিত কিথ ফ্লেচার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্রিকেটীয় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর বেশ সুনাম ছিল। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। সচরাচর স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষেই নিজেকে বেশ মেলে ধরতেন। এছাড়াও, শর্ট বলেও স্বীয় দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ গটিয়েছেন।
১৯৬৮ থেকে ১৯৮২ সময়কালে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে সর্বমোট ৫৯ টেস্ট ও ২৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। এ পর্যায়ে যথাক্রমে ৩২৭২ ও ৭৫৭ রান তুলেছেন। সব মিলিয়ে সাত টেস্টে ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্বে ছিলেন। তাসত্ত্বেও, টনি লুইস ও টনি গ্রেগের ন্যায় তিনিও পরামর্শকের ভূমিকা গ্রহণে স্বীয় সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। সহজাত বিচারবুদ্ধির প্রয়োগ ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার অধিকারী তিনি। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে ভারত সফরে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৬৮ সালে নিজ দেশে ব্যারি জার্মনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৫ জুলাই, ১৯৬৮ তারিখে লিডসের হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। রজার প্রিডো’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকাতে বিংশতিতম টেস্ট পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছিল। খেলায় তিনি ০ ও ২৩* রান সংগ্রহ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে স্বাগতিকরা পিছিয়ে পড়ে।
১৯৭০-৭১ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে রে ইলিংওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফর করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪ ও ২ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে রিচার্ড কলিঞ্জের শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। বল হাতে নিয়ে ৬/১২ ও ৬/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৭৩ সালে লর্ডসে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৮ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে অবধারিত পরাজয় থেকে দলের উত্তরণ ঘটান। এরফলে, লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। সোয়া ছয় ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে ২১ চার ও ২ ছক্কায় এ রান তুলে চূড়ান্ত দিনের প্রায় পুরোটা সময় খেলেন। খেলা শেষ হবার পাঁচ মিনিট পূর্বে তাঁর উইকেটের পতন ঘটে। ঐ খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে মাইক ডেনিসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৭৮ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ পর্যায়ে চতুর্থ উইকেটে দলীয় অধিনায়ক এমএইচ ডেনিসের (১৮১) সাথে ২৬৬ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে নতুন রেকর্ড গড়েন। পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ইনিংস ও ৮৩ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে এমসিসি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ভারত সফরে যান। ১ জানুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি ৬০ ও ৬০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে এমসিসি দলের দায়িত্বে থেকে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। স্মর্তব্য যে, শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্ট ছিল। খেলায় তিনি ৪৫ ও ০* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জন এম্বুরি’র অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
মাইক ব্রিয়ার্লি’র অবসর গ্রহণের ফলে অধিনায়কের দায়ভার তাঁর কাঁধে চলে আসে। কিন্তু, এ সময়কালে তিনি বেশ ব্যর্থতার পরিচয় দেন। স্বল্পকালীন দলকে নেতৃত্ব দিলেও ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ড দল সিরিজে পরাজিত হয়েছিল। এরফলে, দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে আস্থা হারান।
এসেক্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন শেষে অবসর গ্রহণ করেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৯০-এর দশকে ইংল্যান্ডের কোচ হবার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সময়কালে ইংল্যান্ড দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন।
