|

করুণ নায়ার

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯১ তারিখে রাজস্থানের যোধপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে থাকেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, কলকাতা নাইট রাইডার্স, মাঙ্গালোর ইউনাইটেড, রাজস্থান রয়্যালস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন। ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে হাব্বালিতে পাঞ্জাব বনাম কর্ণাটকের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।

২০০০-এর দশক থেকে কর্ণাটক দল থেকে ব্যাটসম্যানদের ভারত দলে নিয়মিতভাবে খেলতে দেখা যায় ও করুণ নায়ার এ তালিকায় নিজেকে যুক্ত করতে সমর্থ হন। শক্তিমত্তা প্রদর্শন না করে কেবলমাত্র ব্যাট স্পর্শেই নিয়মিতভাবে স্ট্রোক মেরে খ্যাতি লাভ করেন। মালয়ালী দম্পতি কালাধরন নায়ার ও প্রেমা নায়ারের সন্তান। কেরালায় জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর পরিবার অনেকগুলো বছর ব্যাঙ্গালোরে বসবাস করছে। উদ্বোধনী মৌসুমেই ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে স্মরণীয় অভিষেক ঘটে। কেবলমাত্র বেশ কয়েক বছর বিরতি দিয়ে কর্ণাটকের রঞ্জী ট্রফির শিরোপা এনে দেননি। পাশাপাশি ইরানী কাপের শিরোপা বিজয়েও শক্ত ভূমিকা রাখেন।

এক পর্যায়ে আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের সাথে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। পরবর্তীতে, ভারত ‘এ’ দলে খেলার পথ সুগম হয়। উভয় স্তরের ক্রিকেটেই প্রতিভার বিচ্ছূরণ ঘটান। দৃশ্যতঃ জাতীয় পর্যায়ে খেলার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার ছিল।

২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের পক্ষে ছয়টিমাত্র টেস্ট ও দুইটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০১৬ সালে দলের সাথে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ১১ জুন, ২০১৬ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে অংশ নেয়ার মাধ্যমে তাঁর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। কয়েকটি ওডিআইয়ে অংশ নেন।

একই বছরের শেষদিকে নিজ দেশে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ হয় তাঁর। ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে মোহালীতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে তাঁর দল ৮ উইকেটে জয়লাভ করেছিল ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

শুরুটা তেমন ভালো না হলেও একই সিরিজে মনোমুগ্ধকর ত্রি-শতক হাঁকান। এরফলে, বীরেন্দ্র শেহবাগের পর দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তিনশত রান সংগ্রহের কৃতিত্বের অধিকারী হন। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ তারিখে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে এ সাফল্য পান। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭৪ রানে জয় পেয়ে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।

পেশাগত দিক দিয়ে ২০১৬ সাল সৌভাগ্যের বছর হলেও ব্যক্তিগতভাবে প্রায় মর্মান্তিক ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কেরালার মন্দিরের উৎসব পরিদর্শনে বন্ধুদের সাথে নৌ-দূর্ঘটনায় কবলিত হন ও স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার পান। এরপর থেকে বড় ধরনের ধাক্কা পান। পরবর্তী ইনিংসগুলোয় তাঁর খেলার মান নিচেরদিকে চলে যেতে থাকে। ভারত দলে পাঁচজন ব্যাটসম্যান খেলানোর ফলে তাঁকে বসে থাকতে হয়। অজিঙ্কা রাহানে’র আঘাতের কারণে তাঁকে প্রথম একাদশে যুক্ত করা হয়। ভারতের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পাশাপাশি ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটেও এ ধারা অব্যাহত থাকে।

২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৫ মার্চ, ২০১৭ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিক দল ৮ উইকেটে জয়লাভ করে ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।

২০২৫ সালে শুভমান গিলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ৩১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫৭ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ সিরাজের বল হাতে নিয়ে অপূর্ব বোলিং কৃতিত্বের কারণে স্বাগতিকরা নাটকীয়ভাবে ৬ রানে পরাভূত হলে সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ হয়।

দুই বছর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে খেলেন। ২০১৩ সালে আরসিবির পক্ষে মাত্র দুই খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান। ২০১৪ সালে রাজস্থান রয়্যালসে চলে যান। দল পরিবর্তনের সুফল পান। শীর্ষসারিতে নেমে তিনটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ১৪২.২৪ স্ট্রাইক রেটে ৩৩০ রান তুলেন। পরের মৌসুমে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও প্লে-অফে খেলা রয়্যালস দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন।

দুই বছর রাজস্থান রয়্যালস নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে ২০১৬ মৌসুমকে ঘিরে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের পক্ষ খেলেন। এক পর্যায়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। দল ভালো না খেললেও তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৩৫০ রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। জহির খানের অনুপস্থিতিতে আইপিএলের দশম আসরে কয়েক খেলায় দলকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। ২০১৭-১৮ মৌসুমে পুণরায় ছন্দ ফিরে পান। ২০১৮ সালের আইপিএল নিলামে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এ মৌসুমে তিন শতাধিক রান তুলেন।

Similar Posts

  • | |

    মার্ক রামপ্রকাশ

    ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে হার্টফোর্ডশায়ারের বুশে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘র‍্যাম্পস’ কিংবা ‘ব্লাডেক্স’ ডাকনামে ভূষিত মার্ক রামপ্রকাশ ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারের ন্যায় তিনিও হ্যারোভিত্তিক গেটন হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। এরপর হ্যারো…

  • | |

    মোহাম্মদ হাফিজ

    ১৭ অক্টোবর, ১৯৮০ তারিখে পাঞ্জাবের সারগোদায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। পাকিস্তান দলের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নেয়াসহ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সচরাচর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কৌশলগতভাবে প্রয়োজনমাফিক রক্ষণাত্মক ঢংয়েও অগ্রসর হয়ে থাকেন। পাকিস্তান দলের অন্যতম অনুসঙ্গ তিনি। বেশ কয়েকবার বোলিং…

  • | |

    চেতন শর্মা

    ৩ জানুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটার যশপাল শর্মা সম্পর্কে তাঁর কাকা। শীর্ণকায় মজবুত গড়নের ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। ভারতীয় ক্রিকেটে ‘লিটল হারিকেন’ নামে পরিচিতি পান। হরিয়াণা হারিকেন নামে পরিচিতি…

  • | | |

    ডাডলি নোর্স

    ১২ নভেম্বর, ১৯১০ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, লেখক ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিং করতে পারতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাসূলভ স্ট্রোকপ্লে মারতেন। ১৯৩১-৩২ মৌসুম থেকে ১৯৫২-৫৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান…

  • | | | |

    গ্রেগ চ্যাপেল

    ৭ আগস্ট, ১৯৪৮ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আনলে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নিজের সেরা দিনগুলোয় নান্দনিক ও দর্শনীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন। প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড়দের কাছে দুর্বোধ্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতাসুলভ ও…

  • |

    কেন ওয়াডসওয়ার্থ

    ৩০ নভেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে নেলসনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের অল্প কিছুদিন পরই জুলাই, ১৯৬৯ সালে…