কেন উইলিয়ামসন
৮ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে তৌরাঙ্গা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করে থাকেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৭ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ার ও ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস, এডমন্টন রয়্যালস ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের পক্ষে খেলেছেন। তন্মধ্যে, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ১০ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখে ১৭ বছর বয়সে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের পক্ষে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় প্রতিপক্ষ ছিল অকল্যান্ড দল।
সন্দেহাতীতভাবে বিখ্যাত তারকা ক্রিকেটার মার্টিন ক্রো’র পর নিউজিল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। শৈশবকাল থেকেই বিস্ময়কর বালকের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। স্পিনের বিপক্ষে দারুণভাবে মোকাবেলা করাসহ ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষেও রুখে দাঁড়াতে তৎপরতার পরিচয় দিয়েছেন। ক্রীড়া পরিবারের সন্তান। বাবা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন, মাতা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন ও ভগ্নীরা ভলিবলে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। স্বভাবতইঃ খেলাধূলার প্রতি অনুরাগ প্রকাশ ঘটিয়েছেন ও ক্রিকেট খেলাকে বেছে নেন। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেট থেকেই তাঁর মাঝে অধিনায়কত্বের গুণাবলীর পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের প্রধান ব্যাটিং চালিকাশক্তির গুণাবলী লক্ষ্য করা যায়। ব্যাটিংয়ের ন্যায় তাঁর নেতৃত্বের দক্ষতাও সবিশেষ লক্ষ্যণীয়।
২০১০ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১০ সালে কিউই পোষাকে তাঁকে দেখা যায়। শ্রীলঙ্কার অংশগ্রহণে ত্রি-দেশীয় সিরিজে ভারতের বিপক্ষে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ১০ আগস্ট, ২০১০ তারিখে ডাম্বুলায় অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।
২০১০-১১ মৌসুমে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অধিনায়কত্বে কিউই দলের সাথে ভারত গমন করেন। ৪ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। হামিশ বেনেটের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩১ রানের মনোরম শতক হাঁকান। এরফলে, অষ্টম নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার হিসেবে ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ শতকধারীর মর্যাদা পান। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪৯ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, হরভজন সিংয়ের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন। ৭ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৫০ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, আব্দুর রেহমানের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০১১-১২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেট খেলেন। এ মৌসুমে রস টেলরের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪৯ ও ৬৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিকরা ৩৪ রানে পরাজয়বরণ করে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৭ মার্চ, ২০১২ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর বদান্যতায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০১২-১৩ মৌসুমে রস টেলরের নেতৃত্বে থেকে কিউই দলের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৫ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৩১ রান অতিক্রম করেন। ১৩৫ ও ১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ১৬৭ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ করতে সক্ষম হয়।
একই মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৩ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ভার্নন ফিল্যান্ডারের বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ২৭ রানে পরাজয়বরণ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০১৩-১৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ৯ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে চট্টগ্রামে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১১৪ ও ৭৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/৮৩ ও ০/২৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, সোহাগ গাজী’র অপূর্ব অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০১৪ সালে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ৮ জুন, ২০১৪ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১১৩ ও ২ রান তুলেছিলেন। এছাড়াও, ১/১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেছিলেন। তবে, অভিষেকধারী মার্ক ক্রেগের অনবদ্য বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১৮৬ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। এরফলে, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নিউজিল্যান্ড দল দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভে সমর্থ হয়।
২০১৪-১৫ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যান। ২৬ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৫৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৬১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৯২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মার্ক ক্রেগের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে নিউজিল্যান্ড দল ইনিংস ও ৮০ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৩ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন ও কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৯২ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে ২০৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৬৯ ও ২৪২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে সফরকারীরা ১৯৩ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৫ সালে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২১ মে, ২০১৫ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৩২ ও ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, বেন স্টোকসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১২৪ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০১৫-১৬ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১ ও ১০৮* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পায় ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
২০১৬-১৭ মৌসুমে কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ভারত সফরে যান। ৮ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৭ রানে পৌঁছানোকালে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮ ও ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২১ বছর ৩৩২ দিন বয়স নিয়ে টেস্টে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদা পান। ২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে ফাফ ডু প্লিসি’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৫ মার্চ, ২০১৭ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে পৌঁছানোকালে ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৭৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৮-১৯ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কিউই দলকে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। এ টেস্টে দারুণ খেলেন। ৮৯ ও ১৩৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ১২৩ রানের ব্যবধানে কিউইরা বিজয়ী হয় ও ২-১ ব্যবধানে রাবার জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিয়ে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। দল রানার্স-আপ হলেও তিনি প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কারে ভূষিত হন।
২০১৯-২০ মৌসুমে নিজ দেশে জো রুটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৯ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৪ ও ১০৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২০২০-২১ মৌসুমে নিজ দেশে জেসন হোল্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২৪৩ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা ২৫১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত ব্যাটিং সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৩৪ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর, একই মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। তৌরাঙ্গায় বক্সিং ডে টেস্টে আরেকটি শতক উপহার দেন।
একই সফরের ৩ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দ্বি-শতক হাঁকিয়ে দলকে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। ২৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কাইল জেমিসনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৭৬ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। এ সিরিজে ৩৮৮ রান সংগ্রহসহ এক উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন। সব মিলিয়ে ঐ গ্রীষ্মে নিউজিল্যান্ড দল ২০ খেলার ১৭টিতে জয় পায় ও সাতটি সিরিজের সবকটি করায়ত্ত্ব করে।
টেস্টে সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিংধারী তিনি। ২০১৮ সালে প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে ৯০০ র্যাটিং পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৯ মার্চ, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের বিপক্ষে কঁনুইয়ে আঘাতের কারণে দলের বাইরে থাকেন। আঘাতের কারণে মাত্র দুই টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পান ও আইসিসি পুরুষদের টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে চলে আসেন। এছাড়াও, বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলোয়াড় ও প্রথম-শ্রেণীর ব্যাটিংয়ে রেডপাথ কাপ লাভ করেন। মাত্র চার ইনিংসে ১৫৯ গড়ে ৬৩৯ রান তুলেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে টিম সাউদি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ২০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে দিমুথ করুণারত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৯ মার্চ, ২০২৩ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১ ও ১২১* রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ ও একটি রান-আউটের সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। তবে, ড্যারিল মিচেলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৭ মার্চ, ২০২৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৯১ রানে পৌঁছানোকালে ৮০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, হেনরি নিকোলসের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৮ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে নীল ব্র্যান্ডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে টেস্টে ১০ রানে পৌঁছানোকালে ৮৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ঐ টেস্টে ৪৩ ও ১৩৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অভিষেকধারী উইলিয়াম ও’রোর্কের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ঐ খেলায় ৭ উইকেটে জয়লাভসহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। এ সিরিজে ৪০৩ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৪ সালে টিম সাউদি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৭ ও ৪৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, কামিন্ডু মেন্ডিসের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৫৪ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৯০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৯৩ ও ৬১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ব্রাইডন কার্সের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪৪ ও ১৫৬ রান সংগ্রহ করেন। তবে, মিচেল স্যান্টনারের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪২৩ রানের বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৩ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে ছয় বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো স্যার রিচার্ড হ্যাডলি পদক লাভ করেন।
সব মিলিয়ে তাঁরা চার ভাই-বোন। তিনি ও অপর যমজ ভ্রাতা লোগান সর্বকনিষ্ঠ। শৈশবে উভয়েই রাগবি, ফিল্ড হকি, বাস্কেটবল, ভলিবল, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতেন।