২১ নভেম্বর, ১৯৭০ তারিখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনসহ থার্ড স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘জেএল’ কিংবা ‘অ্যাল্ফি’ ডাকনামে ভূষিত জাস্টিন ল্যাঙ্গার ১.৭৮ মিটার উচ্চতার অধিকারী। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ইয়ং ক্রিকেটার্সের পক্ষে টেস্ট খেলেছেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুম থেকে ২০০৯-১০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সচল রেখেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্স ও সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৮ সালে মিডলসেক্স ও ২০০৭ সালে সমারসেটের ক্যাপ লাভ করেন। এছাড়াও, ২০০০ সালে মিডলসেক্স ও ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সমারসেটের অধিনায়কত্ব করেন। পাশাপাশি, রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে পার্থের ওয়াকায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ১৯৯৮ সালে মিডলসেক্সের পক্ষে ক্যাপ লাভের পর ঐ মৌসুমে দূর্দান্ত খেলেন। তন্মধ্যে, সাউথগেটে এসেক্সের বিপক্ষে ১৬৬ রানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে প্রথম উইকেটে মাইক গ্যাটিংয়ের (২৪১) সাথে ৩৭২ রানের রেকর্ডসংখ্যক জুটি গড়েন। ঐ মৌসুমে চার শতক সহযোগে ৬২.৯৫ গড়ে ১৪৪৮ রান তুলেন। লর্ডসে সমারসেটের বিপক্ষে ২৩৩ রানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। লর্ডসে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে একটি উইকেট লাভসহ ১৫ ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।
১৯৯৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১০৫ টেস্ট ও আটটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে রিচি রিচার্ডসনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে সফররত ক্যারিবীয় দলের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ২০ ও ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, কার্টলি অ্যামব্রোসের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় নিয়ে আসতে সমর্থ হয়।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। প্রসঙ্গতঃ, এটিই উভয় দলের মধ্যকার উদ্বোধনী টেস্ট ছিল। ১৪ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র-টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করে।
একই মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৩১ মার্চ, ২০০০ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪ ও ১২২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৮ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১০৪ ও ১৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ব্রেট লি’র প্রাণান্তঃকর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ৩০ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ওয়াকায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ৭৫ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ফলাফলবিহীন অবস্থায় সিরিজের সমাপ্তি ঘটে। এ সিরিজে ৩২০ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
একই মৌসুমে নিজ দেশে শন পোলকের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ২০০২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি ১২৬ ও ৩০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ম্যাথু হেইডেনকে সাথে নিয়ে স্বাগতিকদের ১০ উইকেটে জয়লাভে ভূমিকা রাখেন ও তাঁর দল ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। ম্যাথু হেইডেনের সাথে তিনি যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর, ফিরতি সফরে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
এরপর, ৮ মার্চ, ২০০২ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। নিজস্ব ৫০তম টেস্টে অংশগ্রহণকে ঘিরে স্মারকসূচক উপহার লাভ করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৩৭ ও ৫৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শেন ওয়ার্নের দূর্দান্ত অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিক দল ৪ উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০০৩-০৪ মৌসুমে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৪ মার্চ, ২০০৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৯ ও ১৬৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ড্যারেন লেহমানের অসাধারণ সাফল্যে সফরকারীরা ১২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২১৫ ও ৪৬ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় দিনে খেলার প্রথম ইনিংসে ড্যারেন লেহমানের (৮১) সাথে ১৮৪ রানের জুটি গড়েন। চতুর্থ উইকেটে তাঁদের এ জুটিটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ছিল। এরফলে, ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে পার্থে এমই ওয়াহ-এসআর ওয়াহ’র মধ্যকার ১৫৩ রানের জুটির সংগ্রহটি ম্লান হয়ে যায়। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা খেলায় ২১৩ রানে পরাজয়বরণসহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই মৌসুমে নিজ দেশে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ১৯১ ও ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪৯১ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর, একই মৌসুমে ফিরতি সফরে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৮ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৪৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০০৬-০৭ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৬ ও ২০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্টুয়ার্ট ক্লার্কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া সাফল্যে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে ৪৫.২৭ গড়ে ৭৬৯৬ রান সংগ্রহ করেছেন। তারকা খেলোয়াড়ের প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছিলেন। তুলনামূলকভাবে দ্রুতলয়ে রান সংগ্রহে অগ্রসর হতেন। স্ট্রাইক-রেটও অনেক পরিচিত মুখের চেয়ে ভালোমানের ছিল। বেশ মানসিক শক্তিমত্তা ও কাজের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন।
ড্যামিয়েন মার্টিন, গ্ল্যান ম্যাকগ্রা ও শেন ওয়ার্নের সাথে একযোগে অবসর গ্রহণ করেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ২০০১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০০৮ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মাননায় অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদকে ভূষিত হন।
