|

জন স্নো

১৩ অক্টোবর, ১৯৪১ তারিখে ওরচেস্টারশায়ারের পিপলস্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আট বছর ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। অস্ট্রেলীয় হলে হয়তোবা সুস্থ থাকা অবস্থায় প্রত্যেক টেস্টেই নিশ্চিতভাবে খেলতে পারতেন। একরোখা মনোভাব ও জটিল প্রকৃতির কারণে ইংরেজ দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর নাখোশ ছিলেন। ফলশ্রুতিতে মাত্র ৪৯ টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, মাত্র তিনবার বিদেশ গমন করতে পেরেছিলেন। ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন সিমার ছিলেন। চাতুর্য্যতাবিহীন অবস্থায় দৌঁড়ের শেষ মুহূর্তে বলে বেশ গতি সঞ্চারিত করতেন। অপ্রত্যাশিত বাউন্সে ঐ সময়ের অধিকাংশ ব্যাটসম্যানকেই ব্যতিব্যস্ত রাখতেন।

ফ্রেড ট্রুম্যান ও বব উইলিসের সাথে তিনিও ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে ইংল্যান্ড দলের অবিস্মরণীয় ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নিজের সেরা দিনগুলোয় অন্য যে-কোন বোলারের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতেন ও দলের বিজয়ে দারুণ ভূমিকা প্রদর্শন করতেন। সময়ে সময়ে শিশুসুলভ আচরণ প্রদর্শন করতেন ও বেশ কয়েকজন অধিনায়কের সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়েছেন। দুইবার অনাকাঙ্খিত ঘটনায় দল থেকে বাদ পড়েন। সাসেক্সের জন্যে ‘জয়ের চেষ্টা না করা’ ও ১৯৭১ সালে লর্ডসে সুনীল গাভাস্কারের সাথে পা উঁচিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। এর দুই বছর পূর্বে পাকিস্তান সফরে লাহোর টেস্টের পূর্বদিন দলীয় সহঃঅধিনায়ক টম গ্রেভনিকে লক্ষ্য করে বিপজ্জ্বনক বাউন্সার মারলে খেলতে পারেননি। এছাড়াও, কবি হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন।

স্কটিশ ফুটবল লীগ ক্লাবের গোলরক্ষক ও ইংল্যান্ড চার্চের পাদ্রী উইলিয়াম নামীয় স্কটল্যান্ডীয় ভিকারের সন্তান তিনি। চার বছর বয়সে অপর তিন ভগ্নির সাথে উঠোনে ক্রিকেট খেলেন। পিতামহ ক্রিকেট কোচ ছিলেন ও জন্মকালীন তাঁকে কিশোর ক্রিকেটার হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং শৈশবকালে তাঁকে ক্রিকেট ব্যাট উপহার দেন।

ভিকারেজের তিন একর জমিতে পিতার সাথে ক্রিকেট খেলায় হাতেখড়ি ঘটে। ক্রাইস্টস হসপিটালে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর, বালকদের চিচেস্টার হাই স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ভিকার হিসেবে স্বীয় পিতার নিযুক্তি লাভের পর বোগনর রেজিসে চলে যান। এখানে অবস্থানকালীন ওয়ারউইকশায়ারের ব্যাটসম্যান লেন বেটসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। বিদ্যালয় জীবন শেষ করার পর কালহাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন। তবে, ক্রিকেটের প্রতি আসক্তি থাকায় শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়। এছাড়াও, হোরশ্যামের কাছাকাছি ক্রাইস্ট হসপিটাল ও চিচেস্টার হাইস্কুলের প্রথম পঞ্চদশে অবস্থান করে রাগবি খেলতেন। তবে, ক্রিকেটকেই পরবর্তীতে বেছে নেন।

সাসেক্সের কোচ কেন সাটল তাঁকে ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, বলে তিনি মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তবে, তাঁর বোলিং দূর্দান্ত হলেও আশাপ্রদ নয়। ১৯৬১ সালে সাসেক্সের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। এরপূর্বে সাসেক্স ইয়ং অ্যামেচার ও জুনিয়র মারলেটস দলে খেলেন। ঐ সময়ে মিডিয়াম-পেস বোলিং করতেন। নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় ১৫ ও ৩৫ রান তুলেন। সাসেক্সে অবস্থানকালে শিক্ষকতা পেশার জন্যে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকেন। ব্রাইটনভিত্তিক উডিংডিন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।

১৯৬৩ সালে সাসেক্সের পক্ষে বারোটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ফলশ্রুতিতে, জিলেট কাপে খেলার জন্যে মনোনীত হন। লর্ডসে সাসেক্সের ইতিহাসে জিলেট কাপের প্রথম শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখেন। আট ওভারে ৩/১৩ নিয়ে ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে দলকে জয় এনে দেন। পরের বছরও একই সফলতা অব্যাহত রাখেন। শিরোপা ধরে রাখে তাঁর দল।

কলিন মিলবার্ন তাঁর বলে হুক মেরে বাউন্ডারি পেলে সাসেক্স অধিনায়ক টেড ডেক্সটারের পরামর্শ অগ্রাহ্য করেন। পরের বলেই লেগ-স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান টেড ডেক্সটারের মুঠোয় বল পুড়লে কলিন মিলবার্নকে বিদেয় নিতে হয়। তাঁদের মধ্যকার মতবিরোধ থাকলেও পরবর্তীকালে টেড ডেক্সটার তাঁকে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে খেলার সুযোগ লাভে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে যথাক্রমে ৭৭ ও ১০০ উইকেটের সন্ধান পান। ফলশ্রুতিতে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ বার্তা পান।

১৯৬৫ সালে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৭ জুন, ১৯৬৫ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/২৭ ও ২/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এছাড়াও, ঐ বছরে ট্রেন্ট ব্রিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলেছিলেন। তবে, গ্রায়েম পোলকের হাতে বেশ নাস্তানুবাদের শিকার হন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বীয় বোলিং নিয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন ও মিডিয়াম-পেসার থেকে প্রকৃতমানসম্পন্ন দ্রুতগতির বোলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেন।

অধিনায়কদের সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। সাসেক্সের দলীয় অধিনায়ক পতৌদি জুনিয়রের কাছ থেকে অধিক ওভার বোলিং করার নির্দেশনা অগ্রাহ্য করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি স্নো সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, ‘আদর্শ বোলার হিসেবে তিনি স্বল্প সময়ের জন্যে দারুণ পেস বোলিং করতেন ও কার্যকর ফলাফল বয়ে আনতো। আমি এ বিষয়টি জানি, পাশাপাশি আমি তাঁকে সহযোগিতা করতে চাইতেন। তবে, তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক মধুময় ছিল না। প্রায়শঃই আমি তাঁকে দীর্ঘসময় ধরে বোলিং করাতে চাইতাম ও দলের সাফল্য বয়ে আনতো।’

১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ডের পক্ষে দুই টেস্টে অংশ নেয়ার পর নিজ কাউন্টি দল সাসেক্সের সদস্যরূপে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে খেলে দলের বিজয়ে ভূমিকা নেন। বল হাতে নিয়ে সফলতা লাভ করেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৭/২৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪/১৮ পান। ফলশ্রুতিতে, পুণরায় তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজে অবশেষে নিজেকে টেস্টমানের উপযোগী হিসেবে তুলে ধরেন। ওভালে অনুষ্ঠিত টেস্টে অর্ধ-শতক হাঁকান ও দ্বিতীয় ইনিংসে গ্যারি সোবার্সের উইকেট পান।

এরপর থেকেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে গতি ফিরে আসে ও পরবর্তী সাত বছর দলে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। ছন্দহীনতায় থাকলেও কেউ তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। পরবর্তী বছরগুলোয় মাঝেমধ্যেই আঘাতের কবলে পড়তেন। তবে, সুস্থ হয়ে উঠার পরপরই নিজেকে মেলে ধরতেন, চমৎকারভাবে ইংরেজ দলের বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিতেন। ১৯৬৬ সালে সাসেক্সের পক্ষে ১১৪ উইকেট দখল করেন ও বোলিং গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। এ পর্যায়ে ইংল্যান্ড দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। বোলিংয়ের দিকে মনোনিবেশ ঘটালেও মাঝে-মধ্যেই চমৎকার ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। কাউন্টি দলের পক্ষে অর্ধ-শতক হাঁকান। এরপর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চূড়ান্ত টেস্টে কেন হিগসের সাথে ১২৮ রানের জুটি গড়েন। ৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।

ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলার ফলে সাসেক্সের পক্ষে কম খেলায় অংশ নিতে হয়। আর ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেননি। তবে, অংশগ্রহণকৃত খেলাগুলোয় উইকেট লাভে তিনি কম রান খরচ করতেন। প্রায়শঃই খেলায় ২০-এর কম গড়ে রান দিতেন।

ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রথম দুই বছর মিডিয়াম পেস সিম বোলার হিসেবে খেললেও স্বল্প দূরত্ব নিয়ে দৌঁড় দেয়াসহ গতি কমিয়ে ফেলেন। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অতিবাহিত করেন। অস্ট্রেলিয়া সফরে যাননি ও বোলিং ভঙ্গীমা পরিবর্তন করে ফেলেন। ১৯৬৬ সালের গ্রীষ্মে খেলার জগতে ফিরে আসেন। এ পর্যায়ে আরও ধ্রুপদী ভঙ্গীমায় বলের উপর নিয়ন্ত্রণ ও পিচে বলকে অফের দিকে কাটের দিকে নিয়ে যান।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমের শীতকালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে আগ্রাসী ভূমিকা অবলম্বন করেন। এ পর্যায়ে নিজের স্বর্ণালী সময়ে অবস্থান করেন। চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ থেকে ২৭ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, সাবিনা পার্কে ৭/৪৯ পান। পরবর্তী গ্রীষ্মে আরও ১৭টি অস্ট্রেলীয় উইকেট পান। এ সময়ে তিনি পেসে বৈচিত্র্যতা আনেন ও আকস্মিকভাবে শর্ট পিচ বল ফেলতেন।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে অধিনায়কদের সাথে আচরণগত সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানের লাহোর টেস্ট থেকে তাঁকে বাদ দেয়া হয়। অনুশীলনীকালে অধিনায়ক কলিন কাউড্রে তাঁকে পুরোপুরি নিখুঁততার সাথে বোলিং করার পরামর্শ দিলে তিনি তা করতে অস্বীকার করেন ও পরবর্তী খেলার জন্যে সঞ্চিত করার কথা বলেছিলেন। ১৯৬৯ সালে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট থেকেও বাদ পড়েন।

১৯৬৯ সালে লর্ডসে দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভের প্রথমটি লাভ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫/১১৪ নিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। স্টিভ কামাচো, জন শেফার্ড, মাইক ফিন্ডলে, ভ্যানবার্ন হোল্ডার ও গ্রেসন শিলিংফোর্ডের উইকেট পান। এরফলে, খ্যাতনামা অনার্স বোর্ডে ঠাঁই হয় তাঁর। সফরকারী দল ৩৮০ রান তুলতে সমর্থ হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ক্লাইভ লয়েডকেও বিদেয় করেছিলেন তিনি। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অধিকতর সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭০-৭১ মৌসুমের শীতকালে অ্যাশেজ সিরিজে নিজের স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। তাঁর উপস্থিতি এবং জিওফ বয়কট ও এডরিচের সহায়তা নিয়ে রে ইলিংওয়ার্থের দলটিতে উজ্জ্বীবনী শক্তি জোগায়। নিখুঁত নিশানা বরাবর বল ফেলে সাফল্য পান ও এ সিরিজে ৩১ উইকেট দখল করেন। পাশাপাশি ইংল্যান্ড দল সিরিজ করায়ত্ত্ব করতে সমর্থ হয়। তৃতীয় টেস্টে ৭/৪০ পেলে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া দল ১১৬ রানে গুটিয়ে যায় ও ইংল্যান্ড দল ২৯৯ রানে বিজয়ী হয়। তবে, নিচেরসারির ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বোলিংয়ের ফলে আম্পায়ারদের রোষানলে পড়েন। অন্যতম আম্পায়ার ল্যু রোয়ান পুরোপুরি সন্তুষ্ট ছিলেন না ও বেশ কয়েকবার তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার টেরি জেনারকে লক্ষ্য করে বাউন্সার ছুঁড়েন। এরফলে, বলটি তাঁর মাথায় আঘাত হানে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের জনৈক দর্শক বেশ ক্ষীপ্ত হয়ে পড়েন ও বাউন্ডারি সীমানায় ফিল্ডিংকালে তাঁর শার্ট টেনে ধরেন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে ৮০ বছর বয়সী জনৈক ট্রেভর গাই সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে নিজেকে এ ঘটনায় জড়ানোর কথা তুলে ধরেন।

১৯৭০-এর দশকে কিছু সময় দলের বাইরে থাকেন। অন্যান্য খেলোয়াড়কে কমিটির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত করার পর তাঁকে দ্রুত দল থেকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে তিন খেলা থেকে ২৩২ রান খরচায় মাত্র তিন উইকেট লাভের পর কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে অগ্রসর হয়। বোলিংশৈলীর পাশাপাশি তাঁর ফিল্ডংয়ের মান জবুথবু হলে দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে এর কোন বিকল্প ছিল না। এ সমালোচনাকে মাথা পেতে নেন। তবে, এসেক্সের বিপক্ষে ১১ উইকেট নিয়ে দলকে জয় এনে দিলে ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্যে পুণরায় তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়।

সফরকারী ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। লর্ডসে সুনীল গাভাস্কার ও ফারুক ইঞ্জিনিয়ার জুটি গড়ে ১৭৪ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবিত হন। ফারুক ইঞ্জিনিয়ার বল ঠেলে এক রান নেয়ার পথে সুনীল গাভাস্কারকে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে দেন। এর জের ধরে, পরের দুই টেস্টে তাঁকে খেলানো হয়নি। এ ঘটনায় তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন। ওভাল টেস্টে ফিরে এসে গাভাস্কারকে লক্ষ্য করে পুণরায় বাউন্সারে জর্জরিত করেন ও উইকেট থেকে বিদেয় করেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের উইকেট পেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে ভারত প্রথমবারের মতো জয় পেয়েছিল।

তাসত্ত্বেও, ১৯৭২ সালে অ্যাশেজ সিরিজে তাঁকে রাখা হয় ও চমৎকার সময় অতিবাহিত করেন। লর্ডস অনার্স বোর্ডে দ্বিতীয়বারের মতো নিজের স্থান নিশ্চিত করেন। সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৫/৫৭ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। একই খেলার প্রথম ইনিংসে ৮/৮৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে অভিষেক টেস্টে সফরকারী দলের বব ম্যাসি নিজেকে স্মরণীয় করে রাখলে এর প্রত্যুত্তরে তিনিও এ পরিসংখ্যান গড়েন। ব্রুস ফ্রান্সিসকে শূন্য রানে ফেরৎ পাঠানোর পর ইয়ান চ্যাপেল, ডগ ওয়াল্টার্স, রড মার্শ ও বব ম্যাসিকে বিদেয় করে ঐতিহাসিক টেস্টে নিজেকে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৬ রানে গুটিয়ে গেলে প্রতিপক্ষের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ৮১ রানের হয়। ২৬.৫ ওভারে আট উইকেট হাতে রেখেই অস্ট্রেলিয়া দল বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ২৪ উইকেট পান।

১৯৭২ সালে নিজ দেশে অ্যাশেজ সিরিজ ও ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সেরা ছন্দে অবস্থান করলেও ধীরে ধীরে নিজেকে পর্দার অন্তরালে নিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৭৬ সালে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে অংশ নেন। ২২ জুলাই, ১৯৭৬ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৭৭ ও ২/৮০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২০ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫৫ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। তিন টেস্টে অংশ নিয়ে ১৫ উইকেট দখল করেন।

এরপর, ১৯৭৭ সালে সাসেক্স ত্যাগ করেন। ঐ একই বছর ক্যারি প্যাকারের পরিচালনায় বিশ্ব সিরিজে খেলতে থাকেন। ১৯৮০ সালে সানডে লীগে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে কয়েকটি খেলায় অংশ নেয়ার পর অবসর গ্রহণ করেন। অর্জিত অর্থ দিয়ে ক্রিকেট সফরভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্সি খোলেন। সাসেক্স ক্রিকেট ক্লাবের সদস্য হবার পর সহঃসভাপতিত্ব করেন।

বিতর্কিত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন ও আচরণের কারণে সমালোচনার পাত্রে পরিণত হন। তবে, কোন ব্যাটসম্যানকে উৎপাত করেননি। স্বীয় আত্মজীবনী ‘ক্রিকেট রেবেলে’ এমসিসি ও সাসেক্সের কর্মকর্তাদের সমালোচনায় মুখরিত হন। ১৯৭১ সালে ‘কন্ট্রাস্টস’ এবং ১৯৭৩ সালে ‘মোমেন্টস এন্ড থটস’ শিরোনামীয় দুইটি কবিতার বই প্রকাশ করেন। ইংল্যান্ড ‘ক্রিকেট সিক্স অব দ্য বেস্ট: দ্য সেভেন্টিজ’ শীর্ষক ডিভিডিতে ১৯৭০-৭১ মৌসুমে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে তাঁর ৭/৪০, ১৯৭২ সালে হেডিংলিতে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ৪৮ ও ১০৭৫ সালে হেডিংলিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৩/২২ বোলিং পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রাপ্ত ২০২টি টেস্ট উইকেটের মধ্যে ৮৩টি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ৭২টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছিল। ইংল্যান্ডের পক্ষে অংশগ্রহণকৃত ৪৯ টেস্টের মধ্যে মাত্র একটি টেস্টে উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করেছিলেন।

Similar Posts

  • | | |

    ভিক রিচার্ডসন

    ৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে অ্যাডিলেডের পার্কসাইড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। স্টার্ট ক্লাবের পক্ষে ১৯১৫ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে ১১৪ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এ সময়ে ক্লাব ও রাজ্য দল – উভয়টির পক্ষে অধিনায়কের…

  • | |

    লিটন দাস

    ১৩ অক্টোবর, ১৯৯৪ তারিখে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০-১১ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও রংপুর বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ঢাকা…

  • | | |

    রিকি পন্টিং

    ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। গ্রায়েম পন্টিং ও লরেইন পন্টিং দম্পতির সন্তান ছিলেন। খুব সহজেই ক্রিকেটের…

  • | |

    নরি কন্ট্রাক্টর

    ৭ মার্চ, ১৯৩৪ তারিখে গুজরাতের গোধরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দাহুদ থেকে বোম্বে গমনকালে তাঁর মাতা অনুধাবন করেন যে, দ্রুত তিনি সন্তান প্রসব করবেন। রেলগাড়ী চালক কাকা জরুরীভিত্তিতে তাঁকে গোধরায় নামিয়ে দেন। সেখানেই নরি কন্ট্রাক্টরের জন্ম। নাসিকে শৈশবকাল…

  • | | |

    স্যামি উডস

    ১৩  এপ্রিল, ১৮৬৭ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের অ্যাশফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। দলে মূলতঃ বোলার হিসেবে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড – উভয় দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৮৩ সালে ১৪ বছর বয়সে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে চলে আসেন। শিক্ষা গ্রহণের পর আর তিনি দেশে ফিরে যাননি।…

  • | |

    ঋষিকেশ কানিতকর

    ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে মহারাষ্ট্রের পুনেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হেমন্ত কানিতকর ভারত ও মহারাষ্ট্রের পক্ষে খেলেছেন। ভ্রাতা আদিত্য গল্ফ এবং বৌমা ও শ্যালিকা রাধিকা তুলপুলে টেনিস খেলোয়াড়…