Skip to content

জোয়েল গার্নার

1 min read

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৫২ তারিখে বার্বাডোসের এন্টারপ্রাইজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রভাব বিস্তারে অন্যতম ফাস্ট বোলার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ক্রিকেট জগতে তিনি জ্যামাইকার জাতীয় পাখী ডক্টর বার্ডের নামানুসরণে ‘বিগ বার্ড’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে লম্বাটে ক্রিকেটের মর্যাদা পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে, আধা ইঞ্চি বেশী উচ্চতা নিয়ে ব্রুস রিড তাঁর রেকর্ড ভঙ্গ করেন। এরপর, মোহাম্মদ ইরফান ৭ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে সকলের চেয়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ক্রাইস্টচার্চভিত্তিক বয়েজ ফাউন্ডেশন স্কুলে অধ্যয়ন করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ওয়েস হল ও চার্লি গ্রিফিথের ন্যায় কিংবদন্তীতূল্য ফাস্ট বোলারদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘বিদ্যালয় জীবনে সেম্যুর নার্স ও এভারটন উইকসকে প্রধান কোচ হিসেবে পেয়েছি। অনেক সময় ম্যানি মার্টিনডেলও প্রশিক্ষণ দিতেন। আমরা জানতাম যে তাঁরা সেরা খেলোয়াড় ও আমরা সকলেই তাঁদের ন্যায় নিজেদেরকে মেলে ধরার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতাম। তবে, চার্লি আমার বোলিং ভঙ্গীমাকে পরিবর্তন করে দেন। আমি দ্বৈত সুইং সহযোগে রাউন্ড আর্ম ভঙ্গীমায় বোলিং করতাম। এতে তিনি সব সময় না করার কথা বলতেন। কয়েক মাসের মধ্যেই আমি সঠিক পন্থায় বোলিং করতে শুরু করি।’

ওয়েস হলকে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রেখেছেন। দ্য হিন্দুতে এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, বিদ্যালয় শেষে হল তাঁর প্রথম অধিনায়ক ছিলেন এবং উজ্জ্বীবনী শক্তি যোগাতেন।

১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সময়কালে সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৫৮ টেস্ট ও ৯৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে মুশতাক মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ব্যাটিং উপযোগী পিচে কলিন ক্রফ্টের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪/১৩০ ও ২/৬০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪৩ ও ০ রান সংগ্রহসহ চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। উঁচু রানের খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। এক মাস পর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ১৬ মার্চ, ১৯৭৭ তারিখে অ্যালবিওনে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। নয় ওভারে ৩/২৭ পেয়েছিলেন।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। এ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ডুনেডিনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৪/৪৮। খেলায় তিনি ১/৫১ ও ৪/৩৬ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ১ উইকেটে নাটকীয়ভাবে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে জিবি ট্রুপকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৩৬। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ৬/৫৬ ও ১/১৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৩ ও ৭ রান সংগ্রহসহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/৩৮ পান। অদ্যাবধি এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় তাঁর বোলিং সেরার মর্যাদা পাচ্ছে।

ওডিআইয়ে দারুণ খেলেছিলেন তিনি। কমপক্ষে ১০০ উইকেট লাভকারী বোলারদের মধ্যে সেরা গড়ের অধিকারী তিনি। ১৮.৮৪ গড় নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন। এছাড়াও, কমপক্ষে ৯০০ বল করার ক্ষেত্রে সেরা মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটেও সমান কার্যকরী ভাব রাখেন। অবিস্মরণীয় টেস্ট রেকর্ড গড়লেও খেলায় কোন দশ উইকেটের সন্ধান পাননি।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। জেজে ক্রো’র তৃতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ২৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫/৫১ ও ২/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে স্টিফেন বুকের বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১২ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৭৯ ও ১/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি ও ইয়ান চ্যাটফিল্ডের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টগুলো থেকে ২০.৯৭ গড়ে ২৫৯ উইকেট দখল করেন। পরিসংখ্যানগতভাবে সর্বকালের অন্যতম সেরা কার্যকর ক্রিকেটার হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছেন। ডেরেক প্রিঙ্গল তাঁর ‘মাই ফেভারিট ক্রিকেটার’ গ্রন্থের ভূমিকায় মজা করে লিখেছেন যে, জোয়েল গার্নারের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ২৮ বছর পূর্বেই হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে বার্বাডোসের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ডেরেক প্রিঙ্গলের কাছে তাঁর প্রধান পরিকল্পনা উন্মোচন করেন। ম্যালকম মার্শালকে সাথে নিয়ে বোলিং উদ্বোধন করে শীর্ষসারিতে ভাঙ্গন ধরান। এরপর, শেষেরদিকে নিচেরসারিকে গুটিয়ে দেন। শতরানে এগিয়ে থাকার পর তাঁদেরকে পুণরায় গুটিয়ে দেই।

১৯৮০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বার্বাডোস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কা গমনার্থে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনের জন্যে মনোনীত হন। একই বছর আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।