২১ নভেম্বর, ১৮৭০ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন অসমন্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যবসায়ী জন ডার্লিং ও ইসাবেলা দম্পতির ষষ্ঠ পুত্র ছিলেন। ১৮৮৩ থেকে ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত মেলবোর্নভিত্তিক স্কচ কলেজে অধ্যয়ন করেন। এরপর, অ্যাডিলেডভিত্তিক প্রিন্স আলফ্রেড কলেজে পড়াশুনো করেন। এখানে অবস্থানকালেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অনুরাগ জন্মে। সেন্ট পিটার কলেজিয়েট স্কুলের বিপক্ষে পঞ্চদশ জন্মদিন উদযাপনের পূর্বদিন খেলায় ২৫২ রান তুলে ছাত্রদের রেকর্ড গড়েন। পরের বছর অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে ক্রিকেট খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, অ্যাডিলেড ও সাবার্বান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলে অংশ নিয়ে দলকে প্রিমিয়ারশীপের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।
তবে, তাঁর পিতা ক্রীড়ায় মনোনিবেশের বিষয়ে দ্বি-মত পোষণ করেন ও বিদ্যালয় জীবন শেষে রোজওয়ার্থি এগ্রিকালচারাল কলেজে বারো মাস সময় কাটান। ব্যাংকে চাকুরী করেন ও অতঃপর পারিবারিক গমের খামারে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হন।
১৮৯৩ সালে অ্যাডিলেডে ফিরে আসেন। রান্ডল স্ট্রিটে ক্রীড়া সরঞ্জামের ব্যবসা শুরু করেন। আন্তঃঔপনিবেশিক ক্রিকেট খেলতে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ১৮৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ১৯০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৮৯৪ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৩৪ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। চার্লি ম্যাকলিওড, আর্নি জোন্স, ফ্রাঙ্ক ইরিডেল ও জন রিডম্যানের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ০ ও ৫৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ খেলায় স্বাগতিক দল নাটকীয়ভাবে ১০ রানে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৮৯৬, ১৮৯৯, ১৯০২ ও ১৯০৫ সালে ইংল্যান্ড সফর করেন। তন্মধ্যে, শেষ তিনটি সফরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়াও, ১৯০১-০২ মৌসুমে সফররত ইংরেজ একাদশের বিপক্ষে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একত্রিশ টেস্ট খেলে আঠারোটিতে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে, ১৯৪৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যান এ রেকর্ডটি ভঙ্গ করেন।
১৮৯৯ সালে অজি দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৪ আগস্ট, ১৮৯৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাটিংয়ে নেমে ৭১ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১১ অক্টোবর, ১৯০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ০ ও ১৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯০৫ সালে অজি দলের নেতৃত্বে থেকে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৪ আগস্ট, ১৯০৫ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ৫৭ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ১৯০০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ৩ মে, ১৮৯৩ তারিখে মান্ডুরায় ২৩ বছরের ছোট অ্যালিস মিনা ব্লাঙ্ক ফ্রান্সিসের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির দশ পুত্র ও পাঁচ কন্যা ছিল। ২ জানুয়ারি, ১৯৪৬ তারিখে তাসমানিয়ার হোবার্টে পেরিটোনাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ৭৫ বছর ৪২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুকালীন স্ত্রী ও বারো সন্তানকে রেখে যান। কর্নেলিয়ান বে সিমেট্রিতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
