|

জিম লেকার

২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ তারিখে ইয়র্কশায়ারের ব্রাডফোর্ডের ফ্রিজিংহল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও অসাধারণ ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন।

ব্রাডফোর্ডে জন্মগ্রহণ করলেও সারেতে চলে যান। পরবর্তীতে, ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সকল স্পিনারদের চেয়ে সেরা বোলিং গড়ে অবস্থান করছেন। দুই বছর বয়সে পিতা তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে কাকীদের কাছে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। তাঁদেরই একজন মিসেস এলেন কেন বিদ্যালয় শিক্ষিকা ও ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪-৬৫ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স ও সারে এবং নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৫০ সালে টেস্টে অংশগ্রহণের যাচাই-বাছাইয়ে ইংল্যান্ডের সদস্যরূপে বাদ-বাকী একাদশের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ব্রাডফোর্ডে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ১৪ ওভার বোলিং করে ২ রান খরচায় ৮ উইকেট দখল করেছিলেন। ঐ মৌসুমে এটিই তাঁর একমাত্র আট-উইকেট প্রাপ্তি ছিল না। গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৮/৪৫ ও দুই মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মিডলসেক্সের বিপক্ষে ৮/২ পান। বিস্ময়করভাবে ঐ গ্রীষ্মে সনি রামাদিন ও আল্ফ ভ্যালেন্টাইনের প্রভাবকালীন একটিমাত্র টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৪৬ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে গাবি অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ডেনিস ব্রুকস, জেরাল্ড স্মিথসন, মরিস ট্রেমলেট ও উইনস্টন প্লেসের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। বল হাতে নিয়ে ৭/১০৩ ও ২/৯৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ খেলায় তিনি এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২  রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

প্রায়শঃই অন্যান্য অনেক স্পিনারের ন্যায় তিনিও তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন ব্যাটসম্যান ও মিডিয়াম-পেসার হিসেবে শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে কিশোর অবস্থায় ইয়র্কশায়ারের পক্ষে অনুশীলনকালে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পান। এছাড়াও, চমৎকার ফিল্ডার ছিলেন ও গালি অঞ্চলে অবস্থান করতেন। পরবর্তীকালে ট্রেন্ট ব্রিজে ডন ব্র্যাডম্যানের ‘অপরাজেয় দলের’ বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং প্রতিভার নমুনা লক্ষ্য করা যায়। ১০১ মিনিটে ৬৩ রান তুলে ইংরেজ ভূমিতে নিজস্ব প্রথম টেস্টে দলের সংগ্রহ ৭৪/৮ থেকে ১৬৫ করতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯৫১ সালে ডাডলি নোর্সের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৬ আগস্ট, ১৯৫১ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৬৪ ও ৬/৫৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৬ ও ১৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

যদি তিনি পুরো খেলোয়াড়ী জীবনে কোন কিছু আর না-ও করতে পারতেন, তাহলেও ১৯৫৬ সালের ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের কারণে নিজেকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে একাকী ৯০ রান খরচায় ১৯ উইকেট দখল করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর এ কৃতিত্ব অদ্যাবধি একমাত্র ঘটনা হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছে। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১০/৫৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। এটিও টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান হিসেবে টিকে আছে স্ব-মহিমায়।

১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ তারিখে ওয়ান্ডারার্সে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ১/৩৩ ও ১/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৩১ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। 

১৯৫৮ সালে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। তবে, সফরকারীরা একেবারেই খেলার বাইরে ছিল। ৩ জুলাই, ১৯৫৮ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/১৭ ও ৩/২৭ লাভ করেন। অবশ্য, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে মাঠে নামতে হয়নি। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭১ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার বল হাতে নিয়ে ৪/৯৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২ ও ৫* রান সংগ্রহ করেন। সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাভূত হলে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ২১.২৪ গড়ে ১৯৩ উইকেট দখল করেছেন। অন্যদিকে, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৮.৪১ গড়ে ১,৯৪৪টি উইকেট পেয়েছেন। অধিকাংশ খেলাই সারে দলের পক্ষে খেলেছিলেন। তন্মধ্যে, সারে দলের উত্থানে দলের প্রধান পরিচালনা শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে দলটির একাধারে সাতবার শিরোপা বিজয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। টেস্টের এক ইনিংসে দশ-উইকেট লাভের তিন মাস পূর্বে সারের পক্ষে আরও একবার ইনিংসে ১০ উইকেট লাভ করেছিলেন।

২৩ এপ্রিল, ১৯৮৬ তারিখে লন্ডনের পুটনি এলাকায় ৬৪ বছর ৭৩ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    চার্লস কভেন্ট্রি

    ৮ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে মিডল্যান্ডসের কেউইকেউই এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। তবে, একদিনের ক্রিকেটে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক ও উইকেট-রক্ষণে পারদর্শী। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে মাতাবেলেল্যান্ড, মাতাবেলেল্যান্ড তুস্কার্স, ওয়েস্টার্নস…

  • | | |

    বেভান কংডন

    ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮ তারিখে তাসমানের মতুয়েকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতি মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। অল-রাউন্ডারের ভূমিকা পালনসহ তুখোড় নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং কৌশল গ্রহণের অধিকারী ছিলেন। দলের প্রয়োজনে নিজেকে যথোচিত মেলে ধরতেন। বেশ…

  • | | | |

    আমির সোহেল

    ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। হার না মানার মানসিকতাসম্পন্ন বামহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন। পিছনের পায়ের উপর ভর রেখে খেলতেন। সহজাত প্রকৃতির আক্রমণাত্মক ধাঁচে খেলতে পছন্দ করতেন…

  • | |

    ডেভ হোয়াটমোর

    ১৬ মার্চ, ১৯৫৪ তারিখে সিলনের কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। খুবই ছোটবেলা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। কার্যকর ব্যাটসম্যান ও অসাধারণ ফিল্ডার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রেখেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া…

  • | | |

    গুলাম আহমেদ

    ২৮ জুলাই, ১৯২২ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের প্রথম সেরা অফ-স্পিনার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটিয়েছেন। বেশ দেরীতে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে সংযুক্তি ঘটে। ১৯৩৯-৪০ মৌসুম থেকে…

  • | |

    মুশফিকুর রহিম

    ৯ জুন, ১৯৮৭ তারিখে বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ডানহাতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।