২৮ মে, ১৯৫৬ তারিখে জ্যামাইকার কিংস্টনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ফাস্ট বোলারদের বল অসাধারণ ভঙ্গীমায় গ্লাভস বন্দী করতেন। কখনোবা লেগ-সাইডের বলগুলো একহাতে আটকিয়েছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবেও সফল ছিলেন। দলের সঙ্কটময় মুহূর্তে ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হতেন ও ইনিংস পুণর্গঠনে অগ্রসর হতেন। প্রশ্নাতীত ক্ষমতাধর উইকেট-রক্ষক হিসেবে নিজেকে পরিচিতি ঘটিয়েছেন।
ক্রিকেটীয় পরিমণ্ডলে নিজেকে গড়ে তুলেন। পিতা লিরয় রাজ্য দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন। কিংস্টনভিত্তিক উলমার্সে পড়াশুনো করেন। সাবিনা পার্কে প্রশিক্ষণ নিতেন। বিদ্যালয়ের অষ্টম প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ১৯৯২-৯৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।
১৯৮১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৮১ টেস্ট ও ১৬৯টি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এ পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল কোন সিরিজে পরাজিত হয়নি। কেবলমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুলে আঘাতের কারণে একটি টেস্টে অনুপস্থিত ছিলেন। অভিষেকে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। তবে, উইকেটের পিছনে তাঁর সরব উপস্থিতি দলে স্থান পাকাপোক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ৫ ডিসেম্বর, ১৯৮১ তারিখে অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮১ তারিখে মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টটিতে ৪১ ও ৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। কিম হিউজের শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৮৪ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে যান। জুলাই, ১৯৮৪ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে চমকপ্রদ শতক হাঁকান।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ১২ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দল পরাজিত হলেও ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ রানে পৌঁছানোকালে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ ও ৩৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি ও ইয়ান চ্যাটফিল্ডের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৯১ সালে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৮ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ৫ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ডেভিড লরেন্সের শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, রবিন স্মিথের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এ পর্যায়ে ২৬৭ ক্যাচ ও পাঁচটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। তন্মধ্যে, প্রথম দুই টেস্টে ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে পাঁচ শতক সহযোগে ৩১.৯৪ গড়ে ৩৩২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, ২১১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছেন। ৪৪৭ ক্যাচ ও ২২টি স্ট্যাম্পিংসহ দশ হাজারের কাছাকাছি রান তুলেছিলেন।
১৯৮৮ সালে বর্ষসেরা জ্যামাইকীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৮৯ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯১ সালে জ্যামাইকার অর্ডার অব ডিস্টিংক্টশন লাভ করেন। ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জুবিলি লিজেন্ড হিসেবে মনোনীত হন। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ তারিখে সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত জ্যামাইকা ৫০ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ইউটন ডো ও রিচার্ড অস্টিনের সাথে অংশ নেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার মাইক হুইটনি তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে লাল-বলের ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ডব্লিউআইসিবি’র সাথে ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। জ্যামাইকার যুব দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সহকারী কোচ হিসেবে মনোনীত হন। টেলিভিশনে ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এছাড়াও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখেন।
