Skip to content

জেফ ক্রো

1 min read

১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

মার্টিন ক্রো’র চার বছরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তিনি। কনিষ্ঠের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের এক বছর পর তিনি খেলার সুযোগ পান। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রাদেশিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরেন। এরপরই কেবলমাত্র অস্ট্রেলীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হলেও নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষে খেলেন। এক পর্যায়ে নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে গড়পড়তা রান সংগ্রহ করেছেন। তবে, তাঁর ফিল্ডিংয়ে দক্ষতা বেশ উঁচুমানের ছিল। এছাড়াও, উইকেট-রক্ষণে তিনি পারদর্শী ছিলেন। বেশ শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী তিনি। ক্রিজে উভয় ভ্রাতা অবস্থানকালে ধারাভাষ্যকারদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে।

১৯৭৭-৭৮ মৌসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩৯ টেস্ট ও ৭৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ৯ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে মেলবোর্নে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান। অল্প কিছুদিন পর ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে সোমাচন্দ্র ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৪ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দলের একমাত্র ইনিংসে ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ওয়ারেন লিসের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৫ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১১ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১২ রান অতিক্রম করেন। ৩৬ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিক দল ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। প্রসঙ্গতঃ এটিই নিউজিল্যান্ডের প্রথমবারের মতো উপর্যুপরী দ্বিতীয় টেস্ট জয় ছিল।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ১৬ নভেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ৪৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ইকবাল কাশিমের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ৬ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট খেলেন। জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। শোচনীয় সফরে তিনি তিন নম্বর অবস্থানে খেলেছিলেন। ২৯ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬৪ ও ২৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ৪ মে, ১৯৮৫ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রান তুলেন। এ পর্যায়ে দলীয় অধিনায়ক জিওফ হাওয়ার্থকে (৮৬) সাথে নিয়ে দূর্দণ্ড প্রতাপশালী দলটির বিপক্ষে ২১০ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন। তাসত্ত্বেও, কিউই দলকে ইনিংসের ব্যবধানে পরাভূত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে অবশ্য ২ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ম্যালকম মার্শালের দাপটে খেলায় তাঁর দল ১০ উইকেটে পরাজিত হয়। পাশাপাশি, এ সফরে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৮ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি’র অনবদ্য অল-রাউন্ড সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৪১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ৩০ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ওয়াকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১০ রানে পৌঁছানোকালে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১৭ ও ২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি’র অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

ছয় টেস্টে নিউজিল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কিউই দলকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১৬ এপ্রিল, ১৯৮৭ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১২০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে রিচার্ড হ্যাডলি’র (১৫১*) সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ২৪৬ রানের নিরবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৫ মার্চ, ১৯৯০ তারিখে ওয়েলিংটনে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ৯ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়ক জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর অনেকগুলো বিষয়ের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সময়কালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় চলে যান ও সেখানে ছুটির দিনের গল্ফের ব্যবসা পরিচালনা করেন। তবে, ক্রিকেটের দিকে পুণরায় মনোনিবেশ ঘটান ও ২০০৪ সালে আইসিসি’র ম্যাচ রেফারি হিসেবে মনোনীত হন। এ পর্যায়ে অ্যান্টিগুয়া টেস্টে ম্যাচ রেফারি মাইক প্রক্টরের সহকারী ছিলেন ও বিখ্যাত ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা’র ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০০ রানের অপরাজিত ইনিংস পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। টেস্ট সিরিজের পরপরই জর্জটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার ওডিআইয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রেফারির দায়িত্ব পালন করেন। সব মিলিয়ে ১০৭ টেস্ট, ৩০১টি ওডিআই, ১৪৯টি টি২০আই ও ছয়টি ডব্লিউটি২০আই পরিচালনা করেছেন। ২০১২ সালে ব্রিজটাউনে পঞ্চম ম্যাচ রেফারি হিসেবে ৫০তম টেস্ট ক্রিকেট পরিচালনা করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।