১৪ এপ্রিল, ১৯৮৪ তারিখে কেপ প্রভিন্সের স্ট্রান্ডফন্তেইন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘জেপি’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ১.৭০ মিটার উচ্চতার অধিকারী। জন ডুমিনি ও জুনিটা বার্গম্যান দম্পতির সন্তান তিনি। কিশোর বয়সেই প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন। মাঠের সর্বত্র শট খেলতে পটু ছিলেন ও তাঁর ড্রাইভগুলো বেশ দর্শনীয় ছিল। এছাড়াও, তড়িৎকর্মা ফিল্ডার হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। ২০০১-০২ মৌসুম থেকে ২০১৭ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, কেপ কোবরাস, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস, ডেকান চার্জার্স, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, ডেভন, ইসলামাবাদ ইউনাইটেড, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স বোল্যান্ড ও উইনিপেগ হকসের পক্ষে খেলেছেন।
১৭ বছর বয়সে ২০০১ সালে পেশাদারী পর্যায়ে খেলতে শুরু করেন। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। এ সফরে ৭২ গড়ে রান তুলে সকলের নজর কাড়েন। পায়ে টানপড়ায় এমএসএলের ২০১৯ সালের আসর থেকে বাদ পড়েন।
২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৪৬ টেস্ট, ১৯৯টি ওডিআই ও ৮১টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০ আগস্ট, ২০০৪ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে, দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্তকরণে আরও তিন বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। তজ্জন্যে অবশ্য ছন্দহীন ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের পাশাপাশি শক্তিধর ব্যাটিং বিভাগের উপস্থিতি দায়ী ছিল।
২০০৭ সাল থেকে ওডিআই দলে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১ ও ৫০* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এবি ডি ভিলিয়ার্সের অনন্য ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এমজে প্রায়রকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ১/৭। খেলায় তিনি ৩/৮৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। গ্রায়েম সোয়ানের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৯৮ রানের ব্যবধানে জয় পেয়ে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৪ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডেল স্টেইন ও মরনে মর্কেলের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭৪ রানে জয় পেলে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০১১-১২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৩ মার্চ, ২০১২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১০৩ ও ৩৩* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ০/২৩ ও ০/৫১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
২০১৩-১৪ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত খেলেন ও ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১২৩ ও ১৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/২৪ ও ১/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে স্বাগতিকরা ২৩১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ের গমন করেন। ৯ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৫ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২৬ ও ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অভিষেক ঘটা ডেন পাইতের বোলিং কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় পায়।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাট্রিক করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। ২০১৬ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রতিযোগিতা চলাকালীন মাংসপেশীতে টান পড়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন। বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা শেষে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
২০১৬ সালে নিজ দেশে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৭ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৬৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮৮ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। কুইন্টন ডি ককের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ২০৪ রানে পরাভূত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৫ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১১৮ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই মৌসুমে ফাফ ডু প্লিসি’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৬ মার্চ, ২০১৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৭৩। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৪/৪৭ ও ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৬ ও ১৫* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। কেশব মহারাজের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০১৭ সালে ডিন এলগারের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৬ জুলাই, ২০১৭ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ১৫ ও ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মঈন আলী’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ২১১ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন। ১৪ জুলাই, ২০২০ তারিখে লুঙ্গি এনগিডি’র বিএলএম অবস্থানে মাখায়া এনটিনি, ভার্নন ফিল্যান্ডার ও হার্শেল গিবসের সাথে একত্রে স্বাক্ষর করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। সু ডুমিনি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।
