|

জসুভাই প্যাটেল

২৬ নভেম্বর, ১৯২৪ তারিখে গুজরাতের আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

অফ-স্পিন বোলিং করতেন। তবে, মিহির বসু তাঁকে সিম সহযোগে বোলিং করার কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে গুজরাতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৫৫ থেকে ১৯৬০ সময়কালে ভারতের পক্ষে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে বিনু মানকড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫ তারিখে করাচীতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। প্রকাশ ভাণ্ডারী’র সঙ্গে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৩/৪৯ ও ০/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও ০-০ ব্যবধানে সিরিজটি শেষ হয়।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। ঐ মৌসুমে হ্যারি কেভের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৬ জানুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে তাঁকে মাঠে নামতে হয়নি। বল হাতে নিয়ে ৩/৬৩ ও ১/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ১০৯ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সেরা বোলিং রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন ও দীর্ঘদিন নিজের করায়ত্ত্বে রেখেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি এ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। কানপুর টেস্টে তরুণ অল-রাউন্ডার কৃপাল সিংয়ের পরিবর্তে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি লালা অমরনাথ ৩৫ বছর বয়সী জসু প্যাটেলকে দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ পর্যায়ে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি কোন টেস্টে অংশ নেননি ও ৪ টেস্ট থেকে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। দলে ফেরার আমন্ত্রণ পেয়ে অনেকটা বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন। সচরাচর ম্যাটিং উইকেটের উপযোগী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।

প্রথম দিনে ১৫২ রানে মামুলী সংগ্রহে গুটিয়ে গেলে দ্বিতীয় দিনে গ্যাভিন স্টিভেন্সকে কট এন্ড বোল্ডে বিদেয় করে প্রতিপক্ষের সংগ্রহকে ১২৮/১ করান। দৃশ্যতঃ ভারত দল আরও একটি ইনিংস পরাজয়ের অপেক্ষা করছিল। মধ্যাহ্নভোজনে লালা অমরনাথ অধিনায়ক জিএস রামচাঁদের সাথে আলাপচারিতার পর তাঁকে বোলিংয়ের সুযোগ দেন। যাদুর ন্যায় প্রভাব পড়ে। প্রথম বলে কলিন ম্যাকডোনাল্ডের প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে। নিখুঁত নিশানা বরাবর অফ-ব্রেক বোলিং করে ক্রমাগত প্রভাব ফেলে উইকেট নড়বড়ে করে ফেলেন।

তারকা ব্যাটসম্যান নীল হার্ভে ও নরম্যান ও’নীল তাঁর বিপক্ষে অসহায় হয়ে পড়েন। নরম্যান ও’নীল বাপু নদকর্ণীর হাতে মিড-অনে ধরা পড়া থেকে বেঁচে যান। তবে, চান্দু বোর্দে’র বলে নরম্যান ও’নীল বোল্ড হন। সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দল ২১৯ রানে তাদের ইনিংস শেষ করে। একাধারে বোলিং করে ৮/২৪ পান ও ইনিংসে তাঁর বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ৩৫.৫-১৬-৬৯-৯। অনিল কুম্বলে’র ১০/৭৪ লাভের পূর্ব-পর্যন্ত এটিই ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা বোলিংয়ের মর্যাদা পায়। প্রাপ্ত নয়-উইকেটের মধ্যে ৮টিতেই কারও সহায়তা নেননি। ৫টি বোল্ড, ২টি এলবিডব্লিউ ও একটি কট এন্ড বোল্ড ছিল।

পরবর্তীতে নরি কন্ট্রাক্টর (৭৪), চান্দু বোর্দে (৪৪), রামনাথ কেনি (৫১) ও বাপু নদকর্ণী’র (৪৬) ব্যাটিংয়ের কল্যাণে ৬৭ রানে পিছিয়ে থেকেও দলকে ২৯১ রানে নিয়ে যান। গ্যাভিন স্টিভেন্সকে আবারও বিদেয় করেন তিনি ও চতুর্থ দিন শেষে অস্ট্রেলিয়া দলের সংগ্রহ ৫৯/২ হয়। কলিন ম্যাকডোনাল্ডকে বিদেয় করে ইনিংসে পাঁচ-উইকেট পান। এ ইনিংসে তাঁর বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ২৫.৪-৭-৫৫-৫। এরফলে, প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ১৪ উইকেটের সন্ধান পান। ঐ খেলায় ১২৪ রান খরচায় তাঁর সংগৃহীত ১৪ উইকেট লাভের রেকর্ড পরবর্তীকালে নরেন্দ্র হিরবাণী ১৩৬ রানের বিনিময়ে ১৬ উইকেট নিয়ে নিজের করে নেন। ঐ টেস্টে ভারত দল ১১৯ রানে জয় পায়। দশবার প্রচেষ্টার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারত দল প্রথমবারের বিপক্ষে টেস্ট জয়ে সক্ষম হয়। এছাড়াও, ৬৪তম টেস্টে এটি ভারতের ষষ্ঠ জয় ছিল।

ঐ টেস্টে বীরোচিত ভূমিকা পালনের পর ঐ সিরিজে আরও দুই টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এরপর আর কোন টেস্টে তাঁকে খেলতে দেখা যায়নি। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে নিজ দেশে রিচি বেনো’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে কলকাতায় সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। ৩/১০৪ ও ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। এরপর, আরও দুই বছর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ভারতের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিজয় হাজারে’র সাথে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়াও, ভারতীয় ডাক বিভাগ থেকে বিশেষ প্রচ্ছদে তাঁকে রাখা হয়। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ৬৮ বছর ১৬ দিন বয়সে গুজরাতের আহমেদাবাদে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | | |

    কিথ ফ্লেচার

    ২০ মে, ১৯৪৪ তারিখে ওরচেস্টারে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ‘নোম’ ডাকনামে ভূষিত কিথ ফ্লেচার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্রিকেটীয় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর বেশ সুনাম ছিল।…

  • |

    ম্যাট হর্ন

    ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭০ তারিখে অকল্যান্ডের টাকাপুনা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ওতাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৭ থেকে…

  • | | | |

    শেন ওয়ার্ন

    ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে ভিক্টোরিয়ার ফার্নট্রি গালি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে লেগ-ব্রেক কিংবা লেগ-স্পিন বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রিকেট জগতে পদার্পণকালীন পুরো ক্রিকেট বিশ্ব পেস ও…

  • | |

    আর্চি ম্যাকলারিন

    ১ ডিসেম্বর, ১৮৭১ তারিখে ল্যাঙ্কাশায়ারের হোয়ালি র‍্যাঞ্জ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। দলে মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তুলা ব্যবসায়ী জেমস ম্যাকলারিন ও এমিলি কার্ভার দম্পতির সপ্তম পুত্রের দ্বিতীয় ছিলেন। পরবর্তীতে, ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পিতার উদ্দীপনায় ক্রিকেট খেলতে উৎসাহিত হন।…

  • |

    টমাস গ্রুব

    ২ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৭ তারিখে নিউজিল্যান্ডের নিউ প্লাইমাউথ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। মেলবোর্নে ভিক্টোরিয়ার অষ্টাদশের সদস্যরূপে অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো খেলেন। ফ্রাঙ্ক অ্যালানের তোপে পড়ে তাঁর দল। ২ ও ১৩ রান তুলেছিলেন। এমসিজিতে একই…

  • |

    উইলি ওয়াটসন, ১৯৬৫

    ৩১ আগস্ট, ১৯৬৫ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অন্যতম মিতব্যয়ী বোলার হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। স্ট্যাম্প বরাবর নিখুঁততার সাথে বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকে ‘ডিবলি ডবলি পেসার্স’ ডাকনামে আখ্যায়িত ক্রিস হ্যারিস ও…