| |

জসপ্রীত বুমরা

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে গুজরাতের আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করে থাকেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

জসবীর সিং ও দলজিৎ বুমরা দম্পতির সন্তান। সাত বছর বয়সে পিতৃহারা হন। মাতা দলজিৎ বুমরা বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল। জুলিকা নাম্নী এক ভগ্নী রয়েছে। ১.৭৫ মিটার উচ্চতার অধিকারী। ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের মাধ্যমে অনেক উদীয়মান তরুণ খেলোয়াড়ের অন্যতম তিনি। মুম্বই দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। স্বল্প দূরত্ব থেকে দৌঁড়ে অদ্ভূত ও অস্বাভাবিক অথচ সহজাত পেস বোলিংয়ে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। ভীতিকর ইয়র্কারসহ পিচে বলকে বাউন্স করাতে সক্ষমতা দেখান। ক্রমাগত ১৪০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে বোলিং করতে সক্ষম। এরফলে, তাঁকে বৈশ্বিক ক্রিকেট পরিমণ্ডলে দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারসহ ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত করেছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেকের পর থেকে সন্দেহাতীতভাবে সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে ভারতের সেরা বোলার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। শেষদিকের ওভারে কার্যকরী বোলার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটান। লিকলিকে গড়নের পেসার হিসেবে তাঁর বোলিংয়ের ধরন অনেকাংশেই লাসিথ মালিঙ্গা’র অনুরূপ এবং বোলিংশৈলীতে যথোপযোগী সঠিকমানের ইয়র্কার মেরে থাকেন।

২০১৩ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে গুজরাতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও ওয়েস্ট রিজিওনের পক্ষে খেলেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্রমাগত সফলতার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন। ২৭ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে নাগপুরে গুজরাতের সদস্যরূপে বিদর্ভের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। খেলায় তিনি ৭ উইকেট নিয়ে নিজের প্রতিভার উন্মোচন ঘটান। ঐ প্রতিযোগিতা শেষে দলের শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন।

রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় অভিষেকের পর থেকে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন। দ্রুতগতিতে বোলিংয়ের বৈচিত্র্যতা আনয়ণের বিষয়টি প্রায়শঃই অনির্ণিত অবস্থায় থাকে। শুরুতে ধীরগতিতে বোলিংয়ের পর শেষদিকে ইয়র্কার সহযোগে রিভার্স-সুইং প্রয়োগ করে থাকেন। আঘাতের কারণে ২০১৪-১৫ মৌসুমে খেলা থেকে বিরত থাকেন। তবে, খেলার জগতে ফিরে এসে পুণরায় স্বরূপ ধারণ করেন। দৃশ্যতঃ জাতীয় দলে খেলার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র ছিল।

২০১২-১৩ মৌসুমের সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে গুজরাতের সদস্যরূপে টি২০ খেলায় অভিষেক ঘটে তাঁর। গুজরাতের বোলিং আক্রমণের মূল হোতা তিনি। মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলে দলের শিরোপা বিজয়ে সহায়তা করেন। ঐ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ভারত ‘এ’ দলের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পান। দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হলেও ২০১৪ সালের শেষদিকে বাম পায়ের হাঁটুতে আঘাতের কারণে তাঁকে সাড়ে চার মাস মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়। পরবর্তীতে অবশ্য এক বছর পরই জাতীয় দলে খেলার পথ সুগম হয়।

২০১৬-১৭ মৌসুমে গুজরাতের প্রথম রঞ্জী ট্রফির শিরোপা বিজয়ে অংশ নেন। এ পর্যায়ে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন ও বিজয় হাজারে ট্রফিতে বোলিংয়ের শীর্ষে অবস্থান করেন। এ পর্যায়ে লিস্ট-এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় পাঁচ-উইকেট নিয়ে গুজরাতকে প্রথমবারের মতো একদিনের শিরোপা লাভে বিরাট ভূমিকা রাখেন।

১৯ বছর বয়সে ২০১৩ সালের আইপিএলের আসরে প্রথম বিচ্ছুরণ ঘটান। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সদস্যরূপে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিপক্ষে প্রথম চার বল থেকে তিনটি বাউন্ডারি খরচ করলেও বিরাট কোহলি’র উইকেটসহ ৩/৩২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এরফলে, প্রতিযোগিতার ইতিহাসে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে অভিষেক খেলায় তিন উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে মুম্বইভিত্তিক বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলে খেলে দারুণ সফল হন। এরপর থেকেই দলের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হন। পরের বছরেও ₹১.২ কোটি রূপীর বিনিময়ে মুম্বইয়ের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

২০১৭ সালে দলের সম্মুখসারির বোলারে পরিণত হন। লাসিথ মালিঙ্গাকে পাশ কাটিয়ে গুজরাত লায়ন্সের বিপক্ষে সুপার এগিয়ে অংশ নেন। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও আরন ফিঞ্চের বিপক্ষে ১২ রান খরচ করেন। একই বছর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে তিন ওভারে ৩/৭ পান। ২০১৮ সালে তিনজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে রয়ে যান। ঐ মৌসুমে দলের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন। প্রথমবারের মতো ওভারপ্রতি ৭-এর কম রান খরচ করেন।

অপ্রত্যাশিত কৌণিক অবস্থান থেকে বোলিংয়ের কারণে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন। ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীও এ বিষয়ে নজর রাখতে শুরু করেন। দক্ষতা, নিয়ন্ত্রণ ও নিখুঁততার কারণে ২০১৬ সালে ভারতের টি২০আই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমনের সুযোগ পান।

২০১৬ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। মোহাম্মদ শমী ও পরবর্তীতে ভুবনেশ্বর কুমারের আঘাতের কারণে টি২০আইয়ে অংশগ্রহণের পূর্বেই সিডনিতে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ খেলেন। ২৩ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআই অভিষেকে ২/৪০ লাভ করেন।

দারুণ খেলা প্রদর্শনের কারণে চারদিনের ব্যবধানে টি২০আইয়ের প্রথম একাদশে তাঁকে রাখা হয়। তিনি নিরাশ করেননি। পেস, নিয়ন্ত্রণ ও ইয়র্কারে সকলকে বিমোহিত রাখেন। ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক টি২০আইয়ে ৩/২৩ পান। ক্যাঙ্গারুদের ৩-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাইকালে উভয় দলের পক্ষে সর্বাধিক ছয় উইকেট পেয়েছিলেন।

অধিনায়ক এমএস ধোনি তাঁর এ অর্জনকে সফরের সেরা দিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অস্ট্রেলিয়ায় সীমিত-ওভারের খেলায় স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন ও দুই বছর পর সম্মুখসারির টেস্ট বোলার হিসেবে পুণরায় সফর করেন। আগস্ট, ২০১৬ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিক ২৮টি টি২০আই উইকেট নিয়ে ডার্ক নানেসের সাফল্যকে ম্লান করে দেন।

অস্ট্রেলিয়া সফরের পক্ষে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের টি২০আইয়ে দুই নম্বর অবস্থানে নিজেকে নিয়ে আসেন। একই বছরে অর্থাৎ ২০১৫ সালের এশিয়া কাপ ও টি২০আই বিশ্বকাপে অংশ নেন। পেস আক্রমণে দূরন্ত ভূমিকা রাখেন ও দলে স্বীয় স্থান নিশ্চিত করেন। শেষেরদিকের ওভারগুলোয় তাঁর নিয়ন্ত্রণ রক্ষার কারণে দল নির্বাচকমণ্ডলী ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করে। ৫ খেলায় অংশ নিয়ে মাত্র ৪ উইকেট দখল করেন। তবে, ওভারপ্রতি মাত্র ৫ রান খরচ করেন। উইকেট পেলেও নো-বলের কারণে শতকধারী ফখর জামানকে বিদেয় করতে ব্যর্থ হন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম সফর করেন। নিজস্ব তৃতীয় খেলায় পাঁচ-উইকেট পান ও দীর্ঘ সংস্করণের খেলার উপযোগী করে তুলেন।

২০১৭-১৮ মৌসুমে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে কেপটাউনে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এবি ডি ভিলিয়ার্সকে বোল্ড করে নিজস্ব প্রথম উইকেটের সন্ধান পান। ১/৭৩ ও ৩/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ভার্নন ফিল্যান্ডারের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭২ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই সিরিজে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট পান। ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে ৫/৫৪ পেয়েছিলেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এএল ফেললুকাওককে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৩৯। দ্বিতীয় ইনিংসে ২/৫৭ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০* ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তবে, ভুবনেশ্বর কুমারের অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে সফরকারীরা ৬৩ রানে জয়লাভ করলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এরপর, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় পাঁচ-উইকেট লাভ করেন।

২০১৮-১৯ মৌসুমে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে এমসিজিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। বক্সিং ডে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিংশৈলী প্রদর্শন করেন। ৬/৩৩ বোলিং পরিসংখ্যান করে প্রথম এশীয় বোলার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৩৭ রানে জয় তুলে নেয় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন।

এছাড়াও, একই বছরে দক্ষিণ আফ্রিকায় এ সাফল্যের অধিকারী হন। এক পঞ্জিকাবর্ষে বিদেশের মাটিতে যে-কোন ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সর্বাধিক উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী হন।

২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের প্রধান বোলার ছিলেন। ৯ খেলা থেকে ওভারপ্রতি ৪.৪১ রান খরচ করে ১৮ উইকেট দখল করেন। এরফলে, প্রতিযোগিতায় ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ও প্রতিযোগিতায় পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। আইসিসি তাঁকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট অভিষেকে পাঁচজন প্রতিভাবান ক্রিকেটের অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০০তম ওডিআই উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, মোহাম্মদ শমী’র পর দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে এ সাফল্য পান। এছাড়াও, ঐ প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চসংখ্যক ৯ ওভার মেইডেন দেন। তাঁর ইয়র্কারগুলো বুলেটের ন্যায় মৃত্যু সমতুল্য ছিল ও তাঁকে উইকেট লাভে সহায়তা করে। পাশাপাশি অনুশীলনীকালে ইয়র্কারে বিজয় শঙ্করের পায়ে আঘাত হানলে জখমের কবলে পড়ে।

এরপর, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে ভারতের দ্বিতীয় খেলায় অংশ নেন। জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ টেস্টে ড্যারেন ব্র্যাভো, শামারা ব্রুকস ও রোস্টন চেজকে বিদেয় করে হরভজন সিং ও ইরফান পাঠানের পর তৃতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে হ্যাট্রিক লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।

পাঁচ বা এর কম খেলা নিয়ে গড়া দ্বি-পক্ষীয় ওডিআই সিরিজে ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সর্বাধিক উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৫ উইকেট নিয়ে এ সফলতা লাভ করেছিলেন। ভারতীয়দের মধ্যে ওডিআইয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম ১০০ উইকেট পেয়েছেন।

ক্রিকবাজ কর্তৃক ২০১৭ সালের আইপিএল একাদশে ও টি২০ একাদশে তাঁকে ঠাঁই দেয়া হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ইএসপিএনক্রিকইনফো কর্তৃক টি২০ একাদশে স্থান পান। ২০১৮ সালে আইসিসি কর্তৃক বিশ্ব টেস্ট একাদশ ও বিশ্ব ওডিআই একাদশে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় আইসিসি ও ইএসপিএনক্রিকইনফো কর্তৃক প্রতিযোগিতার সেরা দলে ঠাঁই পান।

২০১৯-২০ মৌসুমে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৮৮ ও ০/১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ০* রান সংগ্রহ করেন। তবে, টিম সাউদি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০২২ সালে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১ জুলাই, ২০২২ তারিখে বার্মিংহামে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে তিনি দলের নেতৃত্বে থেকে ৩১* ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ৩/৬৮ ও ২/৭৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-২ ব্যবধানে সমতায় নিয়ে আসে। ১২৫ রান ও ২৩ উইকেট দখল করে জো রুটের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০২৩-২৪ মৌসুমে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। এ সিরিজে চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/২৫ ও ৬/৬১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও একবার ব্যাটিংয়ে নেমে লুঙ্গি এনগিডি’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তবে, মোহাম্মদ সিরাজের দূর্দান্ত বোলিংয়ের স্বাগতিকরা তিনদিন বাকী থাকতেই ৭ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এ পিচটিকে খেলার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়। এ সিরিজে ১২ উইকেট দখল করে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ডিন এলগারের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৬/৪৫ ও ৩/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে দলের ১০৬ রানের বিজয়ে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-১ ব্যবধানে দলকে সমতায় ফেরান। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ৭ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ধর্মশালায় সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ০/৫১ ও ২/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ খেলায় কুলদীপ যাদবের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কারণে তাঁর দল ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়লাভ করে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়ী হয়।

২০২৪-২৫ মৌসুমে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে টিএম হেডের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৪/৯৯ ও ৫/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, উভয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ১৮৪ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া ২-১ সিরিজে পিছিয়ে যায়।

একই সফরের ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে খেলায় তিনি ২২ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্কট বোল্যান্ডের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৪২ রান সংগ্রহসহ ৩২ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

২০২৫-২৬ মৌসুমে নিজ দেশে তেম্বা বাভুমা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২২ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/৭৫ ও ০/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মার্কো জানসেনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাভূত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

Similar Posts

  • |

    জিম ক্রিস্টি

    ১২ ডিসেম্বর, ১৯০৪ তারিখে ট্রান্সভালের প্রিটোরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বেশ দীর্ঘকায় ও শক্ত-মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন। জেপ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করতেন। ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন ও ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতেন। সময়ের সাথে সাথে…

  • | | |

    মিসবাহ-উল-হক

    মে, ১৯৭৪ তারিখে পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভসহ সর্বাপেক্ষা সফল টেস্ট অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। ওয়াসিম আকরামকে পাশ কাটিয়ে ওডিআইয়ে…

  • | |

    ফিল হর্ন

    ২১ জানুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে ওয়েলিংটনের আপার হাটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। দলে মূলতঃ ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, কভার অঞ্চলে অসাধারণ ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ম্যাট হর্নের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তিনি। তবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে ১৯৯০-৯১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে…

  • | |

    হার্শেল গিবস

    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ তারিখে কেপ প্রভিন্সের গ্রীন পয়েন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। সর্বোচ্চমানের ফিল্ডিং ও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে ক্রিকেট জগতে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।…

  • | |

    নিপ পেলিও

    ২১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট পিরি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন। ১৯২০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘নিপ’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। অ্যাডিলেডভিত্তিক সেন্ট পিটার কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯১২ সালে ক্রিকেটে সেন্টস দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফুটবলেও পর্যাপ্ত…

  • |

    কলিন ম্যাককুল

    ৯ ডিসেম্বর, ১৯১৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্যাডিংটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও লেখক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৩৯-৪০ মৌসুম থেকে ১৯৬০ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ…