জ্যাক ফিঙ্গলটন
২৮ এপ্রিল, ১৯০৮ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ওয়াভার্লি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৩০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
ট্রাম কন্ডাক্টর জেমস ফিঙ্গলটন ও বেলিন্ডা মে দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ১৯১৩ সালে তাঁর পিতা নিউ সাউথ ওয়েলসের আইনসভায় ওয়াভার্লির লেবার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ওয়াভার্লির ক্রিস্টিয়ান ব্রাদার্স কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। সেখানে সাহিত্যের প্রতি বেশ ঝুঁকে পড়েন। ১৫ বছর বয়সে দ্য সিডনি ডেইলি গার্ডিয়ানে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। পরবর্তীতে, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পিক্টোরিয়াল, দ্য সান ও ১৯২৮ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে কাজ করেন।
ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ইস্পাত কঠোর মনোবল ও সাহসী ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়াও, শর্ট-লেগ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। বিল ও’রিলি’র বল থেকে অনেকগুলো দূর্দান্ত ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছেন। ১৯২৮-২৯ মৌসুম থেকে ১৯৩৯-৪০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৩২ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১৮ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৩১-৩২ মৌসুমে নিজ দেশে জক ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। লরি ন্যাশের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৪০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। একচেটিয়া ঐ খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭২ রানে জয় পেলে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ভিক রিচার্ডসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২ ও ৩৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ৯ উইকেটে জয়লাভ করলে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১০৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ১৮৪ রানে জয়লাভ করলে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১১২ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১১৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৬ রানে জয়লাভ করলে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৩৮ সালে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২০ আগস্ট, ১৯৩৮ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আঘাতের কারণে স্বীয় অধিনায়কসহ খেলায় তিনি কোন ইনিংসেই ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়ে সিরিজে সমতা আনতে সক্ষম হয়। একটি টেস্ট পরিত্যক্ত হলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি ড্র হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে ৪২.৪৬ গড়ে পাঁচ শতক সহযোগে ১১৮৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৪ গড়ে রান পেলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর রান তোলার গড় ছিল ৩১.৯৫। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪৪.৫৪ গড়ে বাইশ শতক সহযোগে ৬৮১৬ রান তুলেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৪১ সালের শেষদিকে সেকেন্ড অস্ট্রেলিয়ান ইম্পেরিয়াল ফোর্সে তালিকাভুক্ত হন। গোলন্দাজ বিভাগে যুক্ত হন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ওয়ারউইক ফার্মে চলে যান। তবে, তাঁর অভিজ্ঞতা বেশ তিক্তময় ছিল। পরবর্তীতে, প্রেস রিলেশন্স ইউনিটের গোয়েন্দা বিশ্লেষণ ও সেন্সরশিপ বিভাগে যোগ দেন। এরপর, বিলি হিউজের বার্তা সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
ক্রিকেটের পাশাপাশি গল্ফ খেলায়ও সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ক্রিকেটবিষয়ক অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। ‘অ্যাপার্ট ফ্রম ক্রিকেট ক্রাইসিস’ (১৯৪৬) ও ‘ব্রাইটলি ফেডস দ্য ডন এন্ড ব্যাটিং ফ্রম মেমোরি’ অন্যতম। এছাড়াও, ‘দ্য ট্যুর ই অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়া ১৯৫০-৫১)’, ‘দি অ্যাশেজ ক্রাউন দি ইয়ার (ইংল্যান্ড ১৯৫৩)’, ‘মাস্টার্স অব ক্রিকেট’, ‘ফোর চাক্কাস টু অস্ট্রেলিয়া’, ‘দ্য গ্রেটেস্ট টেস্ট অব অল (ব্রিসবেন ১৯৬০)’, ‘ফিঙ্গলটন অন ক্রিকেট’ ও ‘দ্য ইমমোর্টাল ভিক্টর ট্রাম্পার’ প্রকাশ করেছেন।
১৯৭৬ সালে সাংবাদিকতা ও ক্রিকেটে অনবদ্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ওবিই উপাধীতে ভূষিত হন। ১৯৮২ সালে ক্যানবেরার মানুকা ওভালের স্কোরবোর্ড মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে স্থানান্তর করা হয় ও তাঁর নামানুসরণে রাখা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৭ জানুয়ারি, ১৯৪২ তারিখে ফিলিপ্পা লিলিংস্টন হুইসলার স্ট্রিটের সাথে ওয়াভার্লির মেরি ইমাকুলেট ক্যাথলিক চার্চে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির দুই কন্যা ও তিন পুত্র রয়েছে। ২২ নভেম্বর, ১৯৮১ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট লিওনার্ডস এলাকায় ৭৩ বছর ২০৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ওয়াভার্লি সমাধির ক্যাথলিক অংশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।