| |

ইকবাল কাসিম

৬ আগস্ট, ১৯৫৩ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে আম্পায়ার ও স্ট্যাম্পের মাঝখান দিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। আলতোভাবে বলকে পিচে ফেলতেন। মিতব্যয়ী বোলিং করলেও সূক্ষ্মতার সাথে বামহাতে স্পিন বোলিং করতেন। অন্য ধীরগতিসম্পন্ন বোলারদের মধ্যে কেবলমাত্র আব্দুল কাদির পাকিস্তানের পক্ষে তাঁর তুলনায় অধিক টেস্ট উইকেট পেয়েছিলেন। ছোটখাঁটো গড়নের অধিকারী ছিলেন। বলকে শূন্যে ফালানোর চেয়ে নিখুঁতভাব আনয়ণেই অধিক তৎপরতা দেখিয়েছেন। মাঝে-মধ্যে ওভারে দুইয়ের অধিক গুগলি ছুঁড়তেন। তাসত্ত্বেও এক দশকের চেয়েও অধিক সময় দলে নিয়মিতভাবে খেলেছেন। কিন্তু, তাঁর ব্যাটিংয়ের মান খুবই দূর্বল প্রকৃতির ছিল। তবে, উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং মাঝে-মধ্যেই দর্শনীয়তার পর্যায়ে উপনীত হতো।

১৯৭১-৭২ মৌসুম থেকে ১৯৯২-৯৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী, পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক ও সিন্ধুর প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮৮ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৫০ টেস্ট ও ১৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে মুশতাক মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। মুদাসসর নজরের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ০/৫৬ ও ৪/৮৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৭৮ সালে বব উইলিসের বলে আঘাত পেলে তাঁকে রিটায়ার হার্টের কবলে পড়তে হয়েছিল। নাইট-ওয়াচম্যান হিসেবে মাঠে নামেন। ঐ দিনের খেলার পরিবেশ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয় যে, ‘অধিনায়কদেরকে অবশ্যই স্বীকৃতিবিহীন ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে দ্রুতগতিসম্পন্ন, শর্ট-পিচ বল ছোঁড়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া উচিৎ ছিল’। ইংরেজ অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি এ ঘটনার পরও খেলা চালিয়ে যাবার চেষ্টা চালান। তবে, টিসিসিবি তাঁর ভূমিকার বিষয়ে হতবাক হয়ে পড়ে ও মন্তব্য করে যে, বিষয়টি ‘ক্ষমার অযোগ্য’। উইজডেনে মন্তব্য করা হয় যে, ইংল্যান্ডের কৌশল অবলম্বন অনেকাংশেই ‘অপ্রয়োজনীয় হঠকারীসূলভ আচরণবিশেষ’।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ১৬ নভেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ৪/৪১ ও ৪/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তাঁর দূর্দান্ত অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

একই সফরের ১০ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৫* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/১৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সেলিম মালিকের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। এ সিরিজে ৭৫ রান সংগ্রহসহ ১৮ উইকেট দখল করে স্টিফেন বুকের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৭ অক্টোবর, ১৯৮৮ তারিখে লাহোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২/৪২ ও ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৪ ও ১০* রান সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জিওফ মার্শের জোড়া অর্ধ-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে জয় পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১ মার্চ, ২০১২ তারিখে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে পিসিবি ক্রিকেট কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হন। এরপর, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে পিসিবি ক্রিকেট কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।

Similar Posts

  • | | |

    সৌরভ গাঙ্গুলী

    ৮ জুলাই, ১৯৭২ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেহালায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। সেন্ট জাভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনো করেছেন। বাংলা ক্রিকেট দলের পক্ষাবলম্বনকারী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা স্নেহাশীষের পদাঙ্ক অনুসরণে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ…

  • | |

    ম্যাথু হেইডেন

    ২৯ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে কুইন্সল্যান্ডের কিঙ্গারয়ে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। শক্ত-মজবুত গড়নের বামহাতি ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। ‘হেডোস’ ডাকনামে পরিচিতি পান। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে ভীতিহীন অবস্থায় বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরাতেন। স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব নিয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলা প্রদর্শন করতেন।…

  • | | |

    গ্রেগ ক্যাম্পবেল

    ১০ মার্চ, ১৯৬৪ তারিখে তাসমানিয়ার লঞ্চেস্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর উত্থান পর্ব বেশ দর্শনীয় ছিল। তবে, আঘাতের কারণে খেলোয়াড়ী জীবন স্বল্প স্থায়ী হয়ে পড়ে। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর…

  • |

    এজাজ প্যাটেল

    ২১ অক্টোবর, ১৯৮৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ বোলার হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে বামহাতে ব্যাটিংয়ে নামেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীপক প্যাটেল ও জীতেন প্যাটেলের পদাঙ্ক অনুসরণে নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষে খেলেন। খুবই ছোটবেলায় ১৯৯৬ সালে মুম্বই থেকে নিউজিল্যান্ডে অভিবাসিত হন। ২০১২ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর…

  • |

    ব্রুস মিচেল

    ৮ জানুয়ারি, ১৯০৯ তারিখে ট্রান্সভালের ফেরেইরা ডিপ গোল্ড মাইন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লম্বাটে গড়নের অধিকারী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। প্রায়শঃই অনড়, অটল, অবিচল…

  • |

    চামারা দুনুসিংহে

    ১৯ অক্টোবর, ১৯৭০ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯৯০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে অ্যান্টোনিয়ান্স স্পোর্টস ক্লাব, নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাব ও সারাসেন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৫…