Skip to content

৩ মার্চ, ১৯৭০ তারিখে পাঞ্জাবের মুলতানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূখ্যতঃ ব্যাটসম্যান ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। মাঝে-মধ্যে স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

উইকেটের চতুস্পার্শ্বে শট খেলতেন। লেগ অঞ্চলে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ভয়ঙ্কর প্রকৃতির পুল ও উঁচু হয়ে আসা বলগুলোকে ছাড় দিতেন না। পাকিস্তানী ক্রিকেটে সর্বকালের খেলোয়াড়দের তালিকায় অন্যতম সম্মানীয় ও জনপ্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছেন। শুরুরদিকে সামনের প্যাডে কিংবা অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের বলে নিজের বিপদ ডেকে আনতেন। স্পিনারদের বিপক্ষে পায়ের সদ্ব্যবহার করতেন। দলের বিপর্যয়কালীন স্থিরচিত্তে পরিস্থিতি সামাল দিতেন ও পাকিস্তানের প্রধান ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদের যোগ্য উত্তরসূরীতে পরিণত হন। কিন্তু, উইকেটের মাঝে আলসে ভঙ্গীমায় দৌঁড়ানোর বিষয়টি কল্পলোকে ঠাঁই পেয়েছে ও তাঁর সঙ্গীর জন্যে বিপজ্জ্বনক ছিল।

৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৯১ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ক্রিকেট বিশ্বে ‘ইঞ্জি’ ডাকনামে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। পাকিস্তানের পক্ষে ওডিআইয়ের সর্বকালের তালিকায় শীর্ষে ও টেস্ট ক্রিকেটে ইউনুস খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে রয়েছেন। ইমরান খানের সহযোগী থেকে নব্বুইয়ের দশকে পাকিস্তানী ক্রিকেটের ভিত রচনা করে গেছেন। ইমরান খান তাঁকে পেস বোলারদের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানো সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিহিত করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন ও পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়কের মর্যাদা পেয়েছেন।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে সরব ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে ফয়সালাবাদ, মুলতান, পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক, রাওয়ালপিন্ডি ও ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশীয় একাদশ, আইসিসি বিশ্ব একাদশ, আইসিএল পাকিস্তান একাদশ, লাহোর বাদশাহের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮৫ সালে পনেরো বছর বয়সে নিজ শহরের ক্লাব দল মুলতানের পক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।

১৯৯১ থেকে ২০০৭ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ১২০ টেস্ট, ৩৭৮টি ওডিআই ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হন। ২২ নভেম্বর, ১৯৯১ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ২০ ও ৬০ রান তুলে দুই খেলায় অংশ নিয়ে একটিতে অর্ধ-শতরানের সন্ধান পেয়েছিলেন। এরপর, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। চার খেলার দুইটিতে শতক ও দুইটি অর্ধ-শতক ইনিংস খেলেছিলেন। এ পর্যায়ে ৪৮, ৬০, ১০১ ও ১১৭ রান তুলেছিলেন।

১৯৯২ সালে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড গমনার্থে পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ৪ জুন, ১৯৯২ তারিখে বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। আতা-উর-রেহমান ও আমির সোহেলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৮ রান তুলে অপরাজিত ছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। প্রথম টেস্ট সিরিজে তেমন সফল হননি। ইনিংস প্রতি মাত্র ১৩.২০ গড়ে রান পেয়েছিলেন। ঐ সিরিজে পাকিস্তান দল ২-১ ব্যবধানে পরাভূত হয়েছিল। এরপর টেস্ট ক্রিকেটে ছন্দ ফিরে পান।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ১৯৯২ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বিখ্যাত ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের শিরোপা বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তুলনামূলকভাবে অপরিচিত খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিযোগিতার শুরুতে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। পুরো প্রতিযোগিতা জুড়ে বিভিন্ন অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। তবে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলাগুলোয় দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতে থাকেন। সকলের প্রশংসা কুড়ান ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ২২ বছর বয়সে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সহঃস্বাগতিক দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে মাত্র ৩৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে দলের বিজয়ের ভিত রচনা করেন ও নিজের পরিচিতি ঘটান। এ ইনিংসটি অন্যতম দর্শনীয় ইনিংসের মর্যাদা পায়। এ পর্যায়ে বিশাল ছক্কা হাঁকান ও ডেভিড লয়েড প্রতিযোগিতার সেরা শটরূপে আখ্যায়িত করেন।

এরপর, চূড়ান্ত খেলায়ও একইমানের ভূমিকা রেখেছিলেন। ৩৫ বল থেকে ৪৮ রান তুলে পাকিস্তানের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন। এ সকল ইনিংসে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ খেলাগুলোর অন্যতম অংশীদার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেন। তবে, অংশগ্রহণকৃত বিশ্বকাপের পরবর্তী আসরগুলোয় এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারেননি।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৬ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ২৩ ও ৭৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৩৩ রানে জয়লাভ করে।

১৯৯৪ সাল থেকে পাকিস্তানের টেস্ট বিজয়ে বিরাট ধরনের অবদান রাখতে শুরু করেন। এ বছর করাচীতে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদের সহযোগিতা নিয়ে দলকে নাটকীয়ভাবে এক উইকেটের ব্যবধানে জয়ের পাশাপাশি ১-০ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। মুশতাক আহমেদের সাথে ৫৭ রানের জুটি গড়েছিলেন। ২ অক্টোবর, ১৯৯৪ তারিখে মুশতাক আহমেদের সাথে জুটি গড়ে পাকিস্তান দলকে নাটকীয় জয় এনে দেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁরা দশম উইকেটে ৫৭ রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়ে এ কীর্তিগাঁথা রচনা করেন। এ পর্যায়ে দলের সংগ্রহ ২৫৮/৯ ছিল। চতুর্থ ইনিংসে তাঁদের জুটি তৎকালীন রেকর্ড ছিল। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেন স্টোকস – জ্যাক লিচ ৭৬* ও একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কুশল পেরেরা – বিশ্ব ফার্নান্দো এ অবস্থানে ৭৮* রানের জুটি গড়ে রেকর্ড গড়েন।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ১৯ ও ৯৫ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২৪ রানে জয় পায়।

একই মৌসুমে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। পুরো সিরিজে অপূর্ব খেলেন। ৩৬৭ রান সংগ্রহ করে হিথ স্ট্রিকের সাথে যৌথভাবে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১০১ ও ৮৩ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৯৯ রানে বিজয়ী হয় ও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।

১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল প্রণীত র‍্যাঙ্কিং প্রথায় এক নম্বর অবস্থানে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ক্রিকেটের স্বর্গভূমি লর্ডসে অনুষ্ঠিত টেস্টে ইতিহাস গড়েন। দলের সংগ্রহ ১২/২ থাকা অবস্থায় মাঠে নেমে ১৪৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ারের সাথে ১৩০ রানের জুটি গড়েছিলেন। দলের সংগ্রহ ২৬৭/৭ করে বিদেয় নেন। তাঁর এ ইনিংসে ১৮টি চার ও একটি ছক্কার মার ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৭৬ রান তুলে দলের ১৬৪ রানের বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। শতরানের কল্যাণে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।

শারীরিক গড়ন ও উইকেটে দৌঁড়ানোর বিষয়ে খেলোয়াড়ী জীবনে বেশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বেশ কয়েকবার শারীরিক বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৯৭ সালে টরন্টোয় অনুষ্ঠিত সাহারা কাপে ভারতের বিপক্ষে খেলাকালীন কানাডায় বসবাসকারী জনৈক ভারতীয় শিব কুমার থিন্ড তাঁর শারীরিক গড়ন নিয়ে বিদ্রুপ করে। আলুর সাথে তুলনা করতে থাকায় ব্যাট হাতে তেড়ে আসেন। এরফলে, দুই খেলার জন্যে তাঁকে খেলায় অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছিল। কানাডীয় পুলিশ আঘাতের অভিযোগ আনে ও পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান। এছাড়াও, খেলোয়াড়দের ধর্মীয় অনুভূতিতে কটাক্ষ করার অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৯ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দলের একমাত্র ইনিংসে মনোরম ১৭৭ রানের শতক হাঁকান। তৃতীয় উইকেটে আমির সোহেলের (১৬০) সাথে ৩২৩ রানে জুটি গড়ে দ্বি-পক্ষীয় নতুন রেকর্ড গড়েন। এরফলে, ১৯৫৮ সালে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সাঈদ আহমেদ ও ওয়াজির মোহাম্মদের মধ্যকার পূর্বতন ১৬৯ রানের জুটি রেকর্ড ম্লান হয়ে যায়। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৯ রানের ব্যবধানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে রশীদ লতিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ৬ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের চতুর্থ দিন শূন্য রানে থাকাকালে থার্ড স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান অ্যান্ড্রু হাডসন ফেলে দিলে জীবন ফিরে পান। খেলায় তিনি ৬ ও ৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মার্ক বাউচারের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৫৯ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ গমন করেন। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে চূড়ান্ত খেলায় শ্রীলঙ্কা দলের মুখোমুখি হন। ১২ মার্চ, ১৯৯৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেস্টে দূর্দান্ত খেলেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে তৃতীয় উইকেটে ইজাজ আহমেদের (২১১) সাথে ৩৫২ রানের জুটি গড়েন। তবে, ইজাজ আহমেদের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে পাকিস্তান দল ইনিংস ও ১৭৫ রানে জয়লাভ করে শিরোপা পায়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১২ মার্চ, ২০০০ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ৮৬ ও ১৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২২২ রানে জয় পেলেও শ্রীলঙ্কা দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০০-০১ মৌসুমে মঈন খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১৫ মার্চ, ২০০১ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ম্যাথু সিনক্লেয়ারের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে যায়।

২০০১ সালে ওয়াকার ইউনুসের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ৩১ মে, ২০০১ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী উপস্থাপনায় সচেষ্ট ছিলেন। ১১৪ ও ৮৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্যের কারণে সফরকারীরা ১০৮ রানে জয় পেলে সিরিজটি ড্র করতে সমর্থ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ২৩২ রান সংগ্রহ করে গ্রাহাম থর্পের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১ মে, ২০০২ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। স্মরণীয় ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২০১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভঙ্গ করেন। ৩ মে, ২০০২ তারিখে সাড়ে নয় ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে দলের একমাত্র ইনিংসে ৩২৯ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলেন। এরফলে, বিখ্যাত কিংবদন্তীতুল্য ব্যাটসম্যান হানিফ মোহাম্মদের পর দ্বিতীয় পাকিস্তানী হিসেবে টেস্ট ত্রি-শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। ১৫৩তম ওভারে ৩০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অপরদিকে, শোয়েব আখতার তাঁর ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৬/১১ গড়ে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসকে মাত্র ৭৩ রানে গুটিয়ে লাহোরে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করান এবং তিনদিনের ব্যবধানে ইনিংস ও ৩২৪ রানের ব্যবধানে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পঞ্চম বড় ধরনের পরাজয়বরণে নিউজিল্যান্ড দলকে বাধ্য করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

তবে, এরপর থেকেই তাঁর খেলায় ছন্দপতনের ভাব পরিলক্ষিত হয়। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের শোচনীয় ফলাফলে মাত্র ১৬ রান তুলতে পেরেছিলেন। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে দল থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু, দলে ফিরে এসেই স্বরূপ ধারন করেন।

২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ তারিখে মুলতানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপরাজিত ১৩৮ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। নাটকীয়ভাবে এক উইকেটের বিজয়ে অংশ নিয়েছিলেন ও ৩-০ ব্যবধানে স্বাগতিকরা সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। বাংলাদেশের জন্যে এ ফলাফল মর্মপীড়াদায়ক হলেও তিরি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনকে বাঁচিয়ে রাখেন। এ সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে দলের অধিনায়কের মর্যাদা দেয়া হয়।

দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর আস্থা রেখে বোলিং বিভাগের উপর নির্ভরশীল দলকে ভারতে বিপক্ষে নেতৃত্ব দেয়ার আমন্ত্রণ জানান। সিরিজের চূড়ান্ত টেস্ট ও নিজস্ব ১০০তম টেস্টে উজ্জ্বীবনী ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন ঘটিয়ে সিরিজ ড্র করতে সমর্থ হন। দূর্দান্ত ১৮৪ রানের কল্যাণে শেষদিন পাকিস্তান দলকে জয় এনে দেন। এরপর থেকেই নিজেকে অধিনায়ক হিসেবে উত্তরোত্তর সফলতার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন ও দলের প্রধান ব্যাটসম্যানে পরিণত হন। জুন, ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে দলের স্মরণীয় জয়ে ভূমিকা রাখেন।

২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ২৯ নভেম্বর, ২০০৫ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৯৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ ইউসুফের মনোমুগ্ধকর দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০০ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৪৩১ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের সাফল্য লাভের মাধ্যমে চমৎকার বছর শেষ করেন। ব্যক্তিগতভাবে এ সিরিজেই তাঁর স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত হয়েছিল। ফয়সালাবাদে প্রথমবারের মতো জোড়া শতক হাঁকান। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী জাভেদ মিয়াঁদাদের রেকর্ড অতিক্রম করেন ও দ্বিতীয় পাকিস্তানী হিসেবে ৮০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।

অধিনায়ক হিসেবে তিনি নেতার ন্যায় ভূমিকা রাখেননি। একদল তরুণ, অভিজ্ঞতাহীন দলকে একত্রিত করেছেন ও পরবর্তীতে খেলায় ফিরিয়ে আনেন। আরও একবার বৈশ্বিক দলে রূপান্তরের প্রয়াস চালিয়েছেন। বছরের শেষে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান। করাচীতে ক্রমাগত পিঠের আঘাতের কবলে পড়ে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট জয়ী খেলায় অংশ নিতে পারেননি। পরবর্তী ওডিআইয়ে বিপর্যয়ের কবলে পড়লে ওডিআই অধিনায়ক হিসেবে ভূমিকা প্রশ্নের কারণ হয়। শ্রীলঙ্কায় ওডিআই ও টেস্ট জয়লাভে ব্যর্থতায় পুরোপুরি হতাশ করেন।

এরপর, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ পরাজয়ে ব্যক্তিগত ফলাফলও বিরাট ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া অবস্থায় ওভালে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। স্বাগতিক দলকে মোহাম্মদ আসিফ ও উমর গুল – প্রত্যেকের চার উইকেট লাভে ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায়। মোহাম্মদ হাফিজ, ইমরান ফরহাত ও মোহাম্মদ ইউসুফের ব্যাটিংয়ের কল্যাণে ৫০৪ রান তুলে পাকিস্তান দল। ২০ আগস্ট, ২০০৬ তারিখে অধিনায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২৯৮/৪ থাকা অবস্থায় ড্যারেল হেয়ার পাকিস্তানের বিপক্ষে বল পর্যবেক্ষণপূর্বক ক্ষত সৃষ্টির অভিযোগ আনেন। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।ও আম্পায়ারের সাথে মতবিরোধ ঘটে। আম্পায়ারদ্বয় বল পরিবর্তন করেন ও এক পর্যায়ে তাঁরা ইংল্যান্ডের অনুকূলে পাঁচ রান জরিমানা হিসেবে যুক্ত করেন। জরিমানাস্বরূপ পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ থেকে ৫ রান কেটে ফেলা হয়। ড্যারেল হেয়ারের সাথে পাকিস্তান দলের ধূয়াসাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে নাটকীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে ও উভয় দলেই সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

চাবিরতিকালে পাকিস্তান দলে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে দলকে নিয়ে মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত নেয়। চাবিরতির পর দলকে নিয়ে মাঠে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানান। বিতর্কিত ঘটনায় ড্যারেল হেয়ার ও বিলি ডকট্রোভ পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের বিপক্ষে বলে আঁচড়ের ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা জানালে তিনি এ ভূমিকা রাখেন। ৪৫ মিনিট পর ইনজামাম-উল-হক মাঠে নামেন। ড্যারেল হেয়ার বেইল ফেলে দিয়ে ইংল্যান্ডকে বিজয়ী ঘোষণা করলে ঐ টেস্ট অতিনাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এরফলে, ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে প্রতিপক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এ ঘটনায় বিস্ময়করভাবে এক সপ্তাহ ক্রিকেটের সর্বাধিক বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। পরবর্তীতে আইসিসি’র তদন্তে পাকিস্তান দলকে বলে আঁচড়ের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। তবে, বলে আঁচড়ের অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেও খেলায় বিঘ্ন ঘটানোর কারণে পরবর্তী চারটি ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। এরফলে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। ইংল্যান্ডে বিদ্রুপের শিকার হলেও নিজ দেশে তিনি ঠিকই বীর হিসেবে আখ্যায়িত হন ও সাবেক খেলোয়াড়দের সহযোগিতা পান।

ঐ টেস্ট শেষে এক স্বাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন যে, ‘জয় ও পরাজয়বরণের চেয়েও খেলাটির অধিক গুরুত্ব ছিল। সম্মান ও দেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে ঠাঁই দিতে হবে। কেউ যদি বলে যে আমি প্রতারক ও পাকিস্তান ভুল কাজ করেছে, তাহলে আমি সর্বাগ্রে আমার দেশকে অগ্রাধিকার দিব। আমরা খেলতে প্রস্তুত ছিলাম। প্রধান বিষয় ছিল আমরা কখন মাঠে নামবো। বলে আঁচড় করা হয়েছিল কি না। এটি খুবই সহজ বিষয়। স্কাই স্পোর্টসের ২৬টি ক্যামেরা ছিল ও কেউ এ বিষয়ে কোন ছবি তুলেনি।’

দুই বছর পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড খেলার ফলাফল পরিবর্তনে আইসিসি থেকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাবার দিকে তৎপর হয়। তবে, এমসিসি’র কাছ থেকে এ বিষয়ে কোন সাড়া জাগেনি। বিপজ্জ্বনক ঘটনায় আইনকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। ফলে, ১২৯ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা হিসেবে প্রতিপক্ষকে স্বেচ্ছায় অংশ না নেয়ায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বর্ণবাদের অভিযোগ এনে কর্মী আদালতে $৫০০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা ড্যারেল হেয়ার ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে কোর্টে এ বিষয়ে নিষ্পত্তি হয়। বিতর্কের পর টেস্ট ক্রিকেটে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করতে পারলেও আপোষহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে খুব শীঘ্রই অবসর নেন। অপরদিকে, ইনজামাম-উল-হক দেরীতে দলকে মাঠে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করেছেন। কেননা, এ বিষয়টির সাথে তাঁর সম্মান ও দেশের স্বার্থ জড়িত ছিল।

এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয় করলেও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যর্থ টেস্ট ফলাফলে জড়িত থাকেন। জাভেদ মিয়াঁদাদের অবসর গ্রহণের পর পাকিস্তানের মাঝারিসারির শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসেন ও প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হন। ২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেমন পর্বতসম ৩২৯ রানের ইনিংস খেলেছেন, ঠিক তেমনি ব্যর্থতারও পরিচয় দিয়েছেন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে মাত্র ১৬ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এ পর্যায়ে তাঁর দল শোচনীয়ভাবে প্রতিযোগিতা থেকে বিদেয় নিতে বাধ্য হয়। প্রথম পর্বের বাঁধা ডিঙ্গাতে পারেনি পাকিস্তান দল ও বব উলমারের মৃত্যুতে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। টেস্ট দলে খেলার ইচ্ছে পোষণ করেন। দল থেকে বাদ পড়লেও পুণরায় স্বীয় স্থান অক্ষুণ্ন রাখেন ও ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তাঁকে রাখা হয়নি। কার্যতঃ তাঁর বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন শেষের সঙ্কেত দেয়া হয়।

আগস্ট, ২০০৭ সালে ৩৭ বছর বয়সে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন। এ পর্যায়ে প্রথম তিন খেলা শেষে ১০-এর নীচে রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সময়কালে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ৩০ টেস্টে পাকিস্তান দলকে সাত জয়, দশ পরাজয়ের সাথে তাঁর নেতৃত্ব জড়িত ছিল। অধিনায়কত্ব লাভের ফলে তাঁর ব্যাটিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রায়শঃই দলের বিপর্যয় থেকে প্রচণ্ড চাপ মোকাবেলা করতেন ও এর উত্তরণে অগ্রসর হতেন। ৫২ গড়ে রান পেয়েছেন। অথচ, নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ৫০ রান তুলতেন।

অধিনায়ক হিসেবে মিশ্র সফলতার স্বাক্ষর রাখেন ও শেষদিকে কম সফলতা পেয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ে ভূমিকা রাখলেও তাঁর নেতৃত্বের ধরন নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও ওডিআই সিরিজে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছিল। পরবর্তীতে, ফিরতি সিরিজে অবশ্য ড্র করতে পেরেছিলেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ডেই তাঁর দল বিদেয় নেয়। এ পর্যায়ে নিচেরসারির দল আয়ারল্যান্ডের কাছেও পর্যদুস্ত হয়েছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজস্ব শেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। ফিল্ডার হিসেবে তিন ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এর পরপরই ওডিআই থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন ও টেস্ট অধিনায়ক থেকে পদত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে আইসিএলে যোগদানের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। পিসিবি থেকে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হলেও তিনি আইসিএলে খেলা অব্যাহত রাখেন। এরফলে, বোর্ডের নীতিমালা অনুসরণে পরবর্তীতে পাকিস্তান দলে রাখা হয়নি। এছাড়াও, আজীবন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতার স্বাক্ষর রাখতে না পারায় লীগ ত্যাগ করেন। আরও একবার পাকিস্তানের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকান দলের মুখোমুখি হন। ৮ অক্টোবর, ২০০৭ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। এ টেস্ট খেলে অবসর নেন। ১৪ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। জ্যাক ক্যালিসের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীত, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

এ পর্যায়ে জাভেদ মিয়াঁদাদের রেকর্ড ভঙ্গের জন্যে মাত্র ১৯ রানের দরকার ছিল ও পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পেতে পারতেন। তবে, মাত্র দুই রানের জন্যে এ মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেননি। এছাড়াও, ৬০ রান কম তোলায় খেলোয়াড়ী জীবনের গড়কে ৫০.০০-এ উপনীত করতে পারেননি। এভাবেই অতিনাটকীয় বর্ণাঢ্যময় ও সর্বাপেক্ষা চিত্তাকর্ষক খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

অধিনায়ক হিসেবে ওডিআইয়ে গড়ের দিক থেকে রিকি পন্টিং ও এমএস ধোনি’র পর তৃতীয় সর্বোচ্চ গড়ে অবস্থান করছেন। ইমরান খানের পর দীর্ঘদিন দলকে পরিচালনা করেছেন। এক পর্যায়ে ওডিআইয়ে সর্বাধিকসংখ্যক ৮৩টি অর্ধ-শতরান করার গৌরব অর্জন করেন। পরবর্তীতে, শচীন তেন্ডুলকর, জ্যাক কালিস ও কুমার সাঙ্গাকারা তা অতিক্রম করেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে শচীন তেন্ডুলকরের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দশ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। ২০০৫ সালের আইসিসি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে টেস্ট ও ওডিআইয়ের উভয় ধরনের ক্রিকেটে আইসিসি বিশ্ব একাদশে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। অক্টোবর, ২০১৫ সালে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এ পর্যায়ে আফগানিস্তান দল পূর্ণাঙ্গ সদস্য দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআই ও টি২০আই সিরিজ জয় করতে সমর্থ হয়। এরপর, কোন ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এপ্রিল, ২০১৬ সালে পাকিস্তান দলের প্রধান দল নির্বাচক হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। কাশিফা উল-হক নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির ইবতাসাম-উল-হক নামীয় সন্তান রয়েছে।