২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে মেহেরপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণ কর্মে অগ্রসর হতেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ইমরুল কায়েস দলীয়সঙ্গীদের কাছে ‘সাগর’ ডাকনামেই অধিক পরিচিত। শৈশবে ফুটবল খেলতেন। তবে, ক্রিকেটের দিকেই অধিক ঝুঁকে পড়েন। দীর্ঘ সংস্করণের তুলনায় ওডিআইয়েই অধিক সফল ছিলেন। ধ্রুপদীশৈলীর স্ট্রোক খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে খুলনা বিভাগ ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, জেমকন খুলনা ও রংপুর রাইডার্সের পক্ষে খেলেছেন।
২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে খুলনা বিভাগের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও লিস্ট-এ ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ তারিখে খুলনায় অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগ বনাম ঢাকা বিভাগের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। একই বছর ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে খেলতে থাকেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমের জাতীয় ক্রিকেট লীগে দূর্দান্ত খেলেন। খুলনা বিভাগের পক্ষে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বাংলাদেশ একাডেমি দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। সুন্দর খেলা উপহার দেন ও মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানেই জাতীয় দলে খেলার পথ সুগম হয়। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।
২০১২ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের আসরে সিলেট রয়্যালসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এরপর, ২০১৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।
২০০৮ থেকে ২০২০ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে সব মিলিয়ে ৩৯ টেস্ট, ৭৮টি ওডিআই ও ১৪টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা সফরের পর ওডিআই দলের সদস্য হন। ১৪ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক খেলায় ১২ রান তুলেন।
ওডিআইয়ে অভিষেকের পর থেকে ৭০-এর অধিক খেলায় অংশ নিয়ে চারটি শতক ও ষোলটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। শুরুরদিকের কয়েকটি ওডিআইয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাসত্ত্বেও, ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনার্থে বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে রাখা হয়। মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৯ নভেম্বর, ২০০৮ তারিখে ব্লুমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সফরকারীরা ইনিংস ও ১২৯ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংস থেকে মাত্র ১০ ও ৪ রান তুলেন।
এরপরও উপর্যুপরী ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ওডিআই দল থেকে বাদ পড়লেও দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেতে থাকেন। তবে, ২০১০ সালের শুরুতে পুণরায় ওডিআই দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন। এরপর থেকেই কেবলমাত্র দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে খেলতে থাকেন। ২০১০ সালে ৮৬৭ রান তুলে বাংলাদেশের পক্ষে ওডিআইয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। ঐ বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরান হাঁকিয়েছিলেন।
তামিম ইকবালের সাথে অবিস্মরণীয় জুটি গড়েন। এ দুজন শীর্ষসারিতে সফলতম জুটি হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ের সফলতম উদ্বোধনী জুটির অর্ধেকাংশের সাথে জড়িত ছিলেন ও অপর উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল দলের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলছেন। এ দুজন টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় ইনিংসের উদ্বোধনী জুটিতে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস উদ্বোধনে নেমে তাঁরা ৩১২ রান তুলেন। এরফলে, ১৯৬০ সালে সৃষ্ট কলিন কাউড্রে ও জিওফ পুলারের গড়া ৫৫ বছরের রেকর্ড তাঁরা ম্লান করে দেন। ১৫০ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়াও ঐ খেলায় মুশফিকুর রহিমের পরিবর্তে ৮৩ ওভার উইকেট-রক্ষণের সাথে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তাসত্ত্বেও বাংলাদেশ দলে নিজেকে নিয়মিত খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত করতে পারেননি।
২০১৪ সালে পুণরায় তাঁকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আঘাতপ্রাপ্ত মুশফিকুর রহিমের পরিবর্তে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হন। প্রথম পরিবর্তিত উইকেট-রক্ষক হিসেবে ৫টি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করে রেকর্ড গড়েন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার প্রথম দশ বছরে অংশগ্রহণকৃত খেলার তুলনায় অধিক ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তামিম ইকবালের সাথে অংশ নেয়া অনেকের তুলনায় ধারাবাহিক খেলা প্রদর্শন স্বত্ত্বেও টেস্টে উপেক্ষিত হয়েছেন। এক পর্যায়ে ক্রিজ ছেড়ে চলে আসার প্রবণতা বিদ্যমান ছিল ও ধারাবাহিক খেলার অভাব লক্ষ্য করা যায়।
ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ছয়টি খেলায় অংশ নেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রান তুলেন। এরফলে, ৩৭.৬০ রান গড়ে ১৮৮ রান তুলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। তাসত্ত্বেও, ২০১২ সালে আবারও দলের বাইরে চলে যেতে হয়।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে টেস্ট দলে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। দলীয় কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহা ওডিআইয়ের জন্যে কিছু নির্দেশনা দেন। এ পরামর্শ গ্রহণের ফলে সীমিত-ওভারের খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় শতক হাঁকান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় উপেক্ষিত হন। তবে, এনামুল হকের কাঁধের আঘাতের কারণে স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে ওডিআই সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
২০১৭-১৮ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭ ও ৩২ রান সংগ্রহ করেন। ডিন এলগারের অনবদ্য ব্যাটিং কৃতিত্বে সফরকারীরা ৩৩৩ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০১৭ সালে পুণরায় দলে আসা-যাওয়ার পালায় অবস্থান করেন। ২০১৮ সালেও প্রায় একই ধরনের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। এশিয়া কাপের মাঝামাঝি সময়ে নিজেকে মেলে ধরেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলের অস্তিত্বের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুইটি শতক ও একটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৩৪৯ রান তুলেন। এ সংগ্রহটি তিন-খেলা নিয়ে গড়া ওডিআই সিরিজে পাকিস্তানী ক্রিকেটার বাবর আজমের বিশ্বরেকর্ডের চেয়ে মাত্র ১১ রান কম ছিল। ২০১৯ সালে এসে সাদমান ইসলামের সাথে দলে স্থান লাভের প্রশ্নে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হন।
২০১৯-২০ মৌসুমে মমিনুল হকের নেতৃত্বে ভারত গমন করেন। ২২ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে কলকাতায় স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৪৬ রানের ব্যবধানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয়। ৪ ও ৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
