Skip to content

২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আনলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ফার্স্ট স্লিপ অঞ্চলে অবস্থান করে ফিল্ডিং করতেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

‘চ্যাপেলি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ভীতিহীন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ক্লাব ক্রিকেটার ও রাজ্য দলে একবার অংশগ্রহণকারী মার্টিন চ্যাপেল এবং ভিক রিচার্ডসনের কন্যা জিন চ্যাপেল তাঁর পিতা-মাতা ছিলেন। বিখ্যাত ক্রিকেটার ভিওয়াই রিচার্ডসন সম্পর্কে তাঁর পিতামহ ও জিএস চ্যাপেল সম্পর্কে তাঁর ভ্রাতা। খাদ্যাভ্যাস, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, শৃঙ্খলাবোধ ও ক্রীড়াসূলভ মনোভাবে তাঁরা কোনরূপ ছাড় দিতেন না। অ্যাডিলেডভিত্তিক প্রিন্স আলফ্রেড কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। মার্টিনের প্রতিনিধিত্বকারী দল গ্লেনেগ সি’র সদস্যরূপে খেলতে শুরু করেন। কোন একদিন গ্লেনেগ সি’র পক্ষে খেলোয়াড়ের স্বল্পতায় ১৩ বছর বয়সী ইয়ান চ্যাপেলকে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

প্রতিপক্ষীয় দলের দৈত্যাকায় ফাস্ট বোলার ব্লু বলেন্টাইনের ন্যায় খেলোয়াড়দের মোকাবেলা করে চল্লিশ মিনিটের অধিক সময় টিকে থাকেন। সকলে খুশী হলেও মার্টিন চ্যাপেল সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি অভিযোগ করেন যে, ব্লু বলেন্টাইনের একটি বল তিনি খেলেননি। সবকিছু মোকাবেলা না করলে তুমি আর সি গ্রেডে খেলতে পারবে না বলে জানান। বাড়ীর পিছনের খোলা মাঠে চ্যাপেল ভাইয়েরা ‘টেস্ট ক্রিকেট’ খেলতেন। তবে, প্যাড ও গ্লাভসবিহীন অবস্থায় ক্রিকেট বল নিয়ে খেলায় অংশ নিতেন। প্রায়শঃই জিন চ্যাপেল আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করতেন।

১৯৬১-৬২ মৌসুম থেকে ১৯৭৯-৮০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬৩ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে দলের নেতৃত্বে থাকাকালে ইংল্যান্ডের কাছে রাবার খোঁয়ালেও একই দায়িত্বে থেকে ১৯৭৫ সালে অ্যাশেজ করায়ত্ত্ব করতে সক্ষম হয়। অ্যাশেজ সিরিজ শেষে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। সব মিলিয়ে ৩০ টেস্টে দলের দায়িত্বে থেকে ১৫ জন, ১০ ড্র ও পাঁচটিতে ড্র করে তাঁর দল।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে নিজ দেশে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৫ জানুয়ারি, ১৯৭৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ৪৫ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১০ রানে স্পর্শকালে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীসহ ১/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে ফিরতি সফরে অজি দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১ মার্চ, ১৯৭৪ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ১৪৫ ও ১২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অপরদিকে, গ্রেগ চ্যাপেল অপরাজিত ২৪৭ রানসহ ১৩৩ রান তুলেন। একমাত্র ঘটনা হিসেবে দুই দলীয় সঙ্গীর একই টেস্টে জোড়া শতকরূপে নিজেদের চিত্রিত করেন। পরবর্তীতে, ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে সাদিক মোহাম্মদ (১০৩*) ও মুশতাক মোহাম্মদ (১০১) রানে রান-আউটে বিদেয় নিলে একই ইনিংসে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

গ্রেগ চ্যাপেলের দলে উপস্থিতিতে তিনি ৪৭.৪২ গড়ে ৩৫০৯ ও অনুপস্থিতিতে ৩৫.৩১ গড়ে ১৮৩৬ রান তুলেন। অপরদিকে, ইয়ান চ্যাপেলের উপস্থিতিতে গ্রেগ চ্যাপেল ৫৭.৭৯ গড়ে ৩৫২৫ ও অনুপস্থিতিতে ৫০.৪৯ গড়ে ৩৫৮৫ রান তুলেছেন। তবে, ট্রেভর চ্যাপেলের সাথে কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি তাঁর। কিন্তু বিশ্ববাসী ট্রেভর চ্যাপেলের আন্ডারআর্ম বোলিংয়ে তিনজনের ভূমিকা অবলোকনের সুযোগ পায়। গ্রেগ চ্যাপেল আন্ডার আর্ম বোলিং করার জন্যে ট্রেভর চ্যাপেলকে নির্দেশ দিলে একান্ত অসহায় ভঙ্গীমায় বেতার তরঙ্গে ইয়ান চ্যাপেলকে বলতে শোনা যায়: ‘না, গ্রেগ, না! তুমি এরূপ করতে পারো না।’

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক ব্রিয়ারলি’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৭৫ ও ২৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ডেনিস লিলি’র অসাধারণ বোলিংয়ে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ করায়ত্ত্ব করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

তাঁর স্পষ্টবাদিতা, সোজা-সাপ্টা বক্তব্যের কারণে বেশ কয়েকবার ক্রিকেট প্রশাসকদের সাথে তর্কে লিপ্ত হতে হয়েছিল। তাঁদের সাথে মনক্ষুণ্ন হয়ে ক্যারি প্যাকারের বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট আয়োজনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ভিক রিচার্ডসনের উপস্থিতি সত্ত্বেও চ্যাপেল ভাইয়েরা সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিথযশা কোচ লিন ফুলারের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। একাধিক কোচের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের ফলে ক্রিকেটারদের বিভ্রান্তির ভয়ে ভিক রিচার্ডসন কখনো বাঁধা দিতেন না। তাসত্ত্বেও তিনি ইয়ান চ্যাপেলকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতেন যে, সর্বদাই মনে রেখো, যদি তুমি টসে জয়লাভ কর তাহলে দশবারের মধ্যে নয়বার প্রথমে ব্যাট হাতে নামবে; দশমবার প্রতিপক্ষের হাতে ছেড়ে দিলেও তখনো ব্যাট হাতে প্রথমে নামবে।

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে অফ-স্পিনার হিসেবে খেলতে শুরু করেন। তবে, পাড়ার খেলায় পেস বোলিং করতেন। শুরুর দিনের একটি খেলায় তাঁকে বল করতে দেয়া হয়নি। দলীয় ব্যবস্থাপক ও শীল্ডের খেলোয়াড় রিচার্ড মাটন অধিনায়ককে বলেছিলেন যে, তাঁর বোলিং সন্দেহজনক ছিল। এরফলে, লেগ-স্পিন বোলিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩৭.৫৭ গড়ে ১৭৬ উইকেট নিয়ে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করেন। তন্মধ্যে, টেস্টে পেয়েছিলেন ২০ উইকেট।

২৪ অক্টোবর, ১৯৬৭ তারিখে গ্রেগ চ্যাপেলের সাথে একত্রে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। বিভ্রান্তি এড়াতে অ্যাডিলেড ওভালে স্কোরকার্ডে অংশ নেয়া কর্মীরা ‘চ্যাপেল আই’ ও ‘চ্যাপেল জি’ ব্যবহার করে। ক্রিকেটের পাশাপাশি বেসবল খেলায় দক্ষ ছিলেন। ১৯৬৪ ও ১৯৬৬ সালে দুইবার অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে বেসবল খেলার জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পূর্বে খেলার জন্যে বিবেচিত হন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষেও তিনি স্পষ্টবাদিতা ধরে রাখেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে টিভিতে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্বে রয়েছেন। ১৯৭০ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা খেলায়াড় হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৭৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা উদযাপনে মেলবোর্নে কপিল দেব, সনথ জয়সুরিয়া ও ডেনিস লিলি’র সাথে যোগ দেন। ১৮ জুলাই, ২০১৯ তারিখে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ফলে রেডিওথেরাপি নিয়েছেন।

সম্পর্কিত প্রতিবেদন: ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের নিউজিল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ১ম টেস্টের প্রতিবেদন

চিত্র
ইয়ান চ্যাপেল
নামইয়ান চ্যাপেল
ইংরেজি নামIan Chappell
পূর্ণাঙ্গ নামইয়ান মাইকেল চ্যাপেল
অন্য নামআইএম চ্যাপেল, ইয়ান চেপেল
ডাক নামচ্যাপেলি
জন্ম২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩
আনলি, সাউথ অস্ট্রেলিয়া
পরিবার
  • মার্টিন চ্যাপেল (পিতা)
  • জিন চ্যাপেল (মাতা)
  • ভিওয়াই রিচার্ডসন (পিতামহ)
  • জিএস চ্যাপেল (ভ্রাতা)
  • টিএম চ্যাপেল (ভ্রাতা)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রিন্স আলফ্রেড কলেজ
 
ব্যাটিংডানহাতি
বোলিংলেগ-ব্রেক
ফিল্ডিংফার্স্ট স্লিপ, উইকেট-রক্ষক
ভূমিকাশীর্ষসারির ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার
আন্তর্জাতিকঅস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল (১৯৬৪ – ১৯৮০)
টেস্ট ক্যাপ২৩১
প্রথম টেস্টঅস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান
মেলবোর্ন, ৪ ডিসেম্বর, ১৯৬৪
শেষ টেস্টঅস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড
মেলবোর্ন, ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০
ঘরোয়া দলসাউথ অস্ট্রেলিয়া, ল্যাঙ্কাশায়ার
 
পুরস্কার
  • ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বর্ষসেরা খেলায়াড়
  • উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার
  • সাউথ অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেম
  • অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেম
অন্যান্যবেসবল