|

হিউ টেফিল্ড

৩০ জানুয়ারি, ১৯২৯ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা পালন করতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারের সন্তান ছিলেন। ‘টোই’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। বলকে তেমন বাঁক খাওয়াতেন না। পেসে ভিন্নতা আনয়ণে সচেষ্ট থাকতেন। জিম লেকার কিংবা ল্যান্স গিবসের সমকাতারে ছিলেন না। তবে, দুই বিখ্যাত বোলারের সাথে তুলনান্তে টেস্টে তাঁর উইকেট লাভ অধিক ছিল। অব্রে ফকনারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা স্পিনার ছিলেন। অসম্ভব দমের অধিকারী ছিলেন এবং নীল অ্যাডকক ও পিটার হেইনকে বিরাটভাবে সহযোগিতা করতেন। টাফ্টি মান ও ট্রেভর গডার্ডের সাথে বোলিং জুটি গড়েছেন। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুম থেকে ১৯৬২-৬৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে রোডেশিয়া, নাটাল ও ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৪৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৩৭ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৯-৫০ মৌসুমে নিজ দেশে লিন্ডসে হ্যাসেটের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। জন ওয়াটকিন্স ও জ্যাক নেলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৬ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৯৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৮৫ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২০ জানুয়ারি, ১৯৫০ তারিখে ডারবানের কিংসমিডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক এএল হ্যাসেটকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৯৩। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। নিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭/২৩ লাভ করেন। মাত্র ৭৫ রানে গুটিয়ে যাবার পর নীল হার্ভে’র শতকের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া দল ২৩৬ রানে এগিয়ে যায় ও খেলায় জয়লাভে সমর্থ হয়। এছাড়াও, ২/১৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, ১৫ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

তিন বছর পর দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৮ গড়ে ৩০ উইকেটের সন্ধান পান। তন্মধ্যে, মেলবোর্ন টেস্টে প্রায় একাকী অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৪২ বছর পর দলকে জয় এনে দেন। ৬/৮৪ ও ৭/৮১ লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রেলিয়ায় এক সিরিজে ৩০ উইকেট নিয়ে অ্যালেক বেডসারের সর্বাধিক উইকেট লাভের রেকর্ডের সমকক্ষ হন। সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে ড্র হয়েছিল।

১৯৫২-৫৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জ্যাক চিদামের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট খেলেন। ৬ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ডব্লিউএম ওয়ালেসের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২/৫৩ ও ৩/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দলের একমাত্র ইনিংসে ২৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৮০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ রাবোনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১১ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৬/৬২ ও ৩/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৮ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৯ জানুয়ারি, ১৯৫৪ তারিখে জোহানেসবার্গে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬/১৩ ও ২/৪৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৫৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর জ্যাক চিদামের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ৯ জুন, ১৯৫৫ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সফরকারীরা ইনিংস ও ৫ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২১ জুলাই, ১৯৫৫ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৫ ও ১৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ৪/৭০ ও ৫/৯৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ২২৪ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এরপর, ১৩ আগস্ট, ১৯৫৫ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে টিডব্লিউ গ্রেভনিকে বিদেয় করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৩৯ ও ৫/৬০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪ ও ১০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ৯২ রানে পরাজিত হলে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে নিজ দেশে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। দলটির বিপক্ষে পুরো সিরিজে দূর্দান্ত খেলেন। এ সিরিজে ওভারপ্রতি ১.৬৭ রান খরচ করেন। এ সিরিজে স্বাগতিক দল ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ২-২ ব্যবধানে সিরিজে সমতা আনয়ণে সমর্থ হয়। ১৭ গড়ে ৩৭ উইকেট তুলে নিয়ে পূর্বেকার সাফল্যকে ছাঁপিয়ে যান। ১ জানুয়ারি, ১৯৫৭ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/১৩০ ও ১/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৫ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ৩১২ রানে পরাজিত হলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

২৫ জানুয়ারি, ১৯৫৭ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ঘটনাবহুল টেস্টের এক পর্যায়ে একাধারে ১৩৭টি বল থেকে কোন রান খরচ করেননি। অদ্যাবধি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে এটি রেকর্ড হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছে। প্রথম ইনিংসে উপর্যুপরী ১৪টি ওভার মেইডেন দেন। ১১৯ বল থেকে কোন রান খরচ করেননি। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ১৮ বল এতে যুক্ত হয়। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে জেবি স্ট্যাদামকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৭/২৩। খেলায় তিনি ১/২১ ও ৮/৬৯ লাভ করেন। এ বিশ্লেষণটি যে-কোন দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারের সেরা সাফল্য ছিল। পাশাপাশি, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২০* রান সংগ্রহ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে পিজে লোডারকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৮/৬৯। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৪/৭৯ ও ৯/১১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১০ ও ১২* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। স্বাগতিকরা ১৭ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৬০ সালের ইংল্যান্ড সফরে ১২৩ উইকেট পেলেও টেস্টে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ঐ বছর জ্যাকি ম্যাকগ্লিউ’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ আগস্ট, ১৯৬০ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১০৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে দল থেকে বাদ পড়েন।

টেস্টপ্রতি ৩৬৭ বল করেছেন। ২৫.৯১ গড়ে ১৭০ উইকেট দখল করেন। টেস্টপিছু ৪.৫৯ উইকেট পেয়েছেন। জিম লেকারের ন্যায় অনুরূপ স্পিনার না হলেও ব্যতিক্রমীভাবে নিখুঁততা বজায় রাখতেন ও দিনব্যাপী বোলিং করতে পারতেন। এছাড়াও, ওভারপ্রতি মাত্র ১.৯৪ রান খরচ করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। এরপূর্বে ১৯৫৩ সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যানুয়েল কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।

দীর্ঘকায় গড়ন ও বেশ সুদর্শন হিসেবে প্লেবয় চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও পাঁচবার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। শেষের দিনগুলোয় গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে নাটালের হিলক্রেস্ট হাসপাতালে ৬৫ বছর ২৫ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts