৫ মে, ১৮৮৯ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। ১৯০৯-১০ মৌসুম থেকে ১৯৩৫-৩৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নাটাল, ট্রান্সভাল ও ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।
১৯১২ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৪২ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণে ১৯১২ সালের ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ফ্রাঙ্ক মিচেলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৭ মে, ১৯১২ তারিখে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে অংশ নেন। টমি ওয়ার্ড, জেরাল্ড হার্টিগান ও রোল্যান্ড বিউমন্টের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ০ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৮৮ রানে পরাজয়বরণ করে।
১৯১৩-১৪ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জনি ডগলাসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি’র দলের মুখোমুখি হন। সিড বার্নসের বিপক্ষে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন ও নিজেকে কিংবদন্তীর ভূমিকায় নিয়ে যান। ঐ সিরিজে ৫০ ঊর্ধ্ব গড়ে ৫০৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সবগুলো খেলা থেকে ৬৯ গড়ে ৮২৪ রান তুলেন। ঐ সিরিজে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ড্যান তাঁর সাথে দুই টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন।
১৩ ডিসেম্বর, ১৯১৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯৩ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি ১০৯ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ইনিংস ও ১৫৭ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর, ১ জানুয়ারি, ১৯১৪ তারিখে জোহানেসবার্গের ওল্ড ওয়ান্ডারার্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ডব্লিউ রোডসকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ০/৭। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/১৫ ও ১/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৪ ও ৭০ রান সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রে আলবার্ট রেল্ফের বলে বিদেয় নিয়েছিলেন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ৯১ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৬ ও ৯৩ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে সিডনি বার্নসের শিকারে পরিণত হন। ইনিংস ও ১৫৭ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে-পিছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দেন। এ সময়ে তিনি প্রায় ৪৮ গড়ে রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে ফ্রাঙ্ক মানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯২২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ২১ রান তুলেন। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১০৯ রান অতিক্রম করেন। ১৭৬ রান সংগ্রহ করে দলকে ৩৪ রানে এগিয়ে নিয়ে যান। পাশাপাশি, খেলায় তিনি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। স্বাগতিকরা ১৬৮ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৩ ও ১০২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১০৯ রানে পরাভূত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পুরো সিরিজে ৬৫ গড়ে ৫৮২ রান সংগ্রহ করেন।
১৯২৪ সালে স্প্রিংবককে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৪ জুন, ১৯২৪ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭ ও ৩৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে মরিস টেটের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ইনিংস ও ১৮ রানে পরাজিত হলে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯২৯ সালে নামি ডিনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৭ আগস্ট, ১৯২৯ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১২১ রান সংগ্রহ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়।
এক দশকের অধিক সময় অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক রান সংগ্রহের কৃতিত্বের অধিকারী হন। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড সফরে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৩০-৩১ মৌসুমে নিজ দেশে পার্সি চ্যাপম্যানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭২ ও ১৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৩১-৩২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জক ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। স্মর্তব্য যে, নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার এটিই প্রথম টেস্ট ছিল। দলের একমাত্র ইনিংসে তিনি ৯ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ১২ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
অব্রে ফকনারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ক্রিকেট বীরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ৪০.৭৭ গড়ে সাত শতক সহযোগে ২৯৩৬ রানের সন্ধান পেয়েছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তাঁকে আটকাতে পারেনি। দূর্বলতর দক্ষিণ আফ্রিকা দলে অবস্থান করেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন স্ব-মহিমায়। টার্ফ ও ম্যাট উইকেটে সমান প্রভূত্ব দেখিয়েছেন। মূলতঃ পিছনের পায়ে ভর রেখে খেলতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪২ গড়ে ১৩১০৫ রান তুলেছেন। ৪৩ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রয়্যাল ফিল্ড আর্টিলারি ও রয়্যাল এয়ার ফোর্সে রয়্যাল ফ্লাইং কোর-ফোররানার হিসেবে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে মিলিটারি ক্রস লাভ করেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি রাগবি ফুটবলে দক্ষ ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ব্ল্যাকহিদের পক্ষে থ্রিকোয়ার্টার অবস্থানে রাগবি ফুটবল খেলতেন। জীবনের বাদ-বাকী সময় নিউল্যান্ডসের কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করতেন ও বিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে রবিবারের সকালে প্রশিক্ষণ দিতেন।
৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে কেপ প্রভিন্সের নিউল্যান্ডস এলাকায় ৮৩ বছর ২৭৯ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। নেভিল কারডাস তাঁকে ডব্লিউজি গ্রেসের পর অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে চিত্রিত করেছেন।
