| |

হেনরি ওলোঙ্গা

৩ জুলাই, ১৯৭৬ তারিখে জাম্বিয়ার লুসাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

কেনীয় পিতা ও জাম্বীয় মাতার সন্তান। কিশোর অবস্থাতেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে জড়িয়ে পড়েন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড, ম্যাশোনাল্যান্ড ‘এ’ ও মাতাবেলেল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ২০০২-০৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ১৭ বছর বয়সে লোগান কাপে মাতাবেলেল্যান্ড বনাম ম্যাশোনাল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। খেলায় পাঁচ উইকেট দখল করেন। পরবর্তী মৌসুমে মিশ্রমানের সফলতা পান। তাসত্ত্বেও ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে হারারেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত করা হলে অনেকের কাছেই বিস্ময়ের পাত্রে পরিণত হন।

১৯৯৫ থেকে ২০০৩ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বমোট ৩০ টেস্ট ও ৫০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। স্টুয়ার্ট কার্লাইলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। আঘাতপ্রাপ্ত এডো ব্রান্ডেসের পরিবর্তে টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এরফলে, অনেকগুলো রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়ান। ফিল এডমন্ডস ও নীল র‍্যাডফোর্ডের পর তৃতীয় জাম্বীয় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের গৌরব অর্জন করেন। জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অংশ নেন। ১৮ বছর ২১২ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব অর্জন করেন। এ রেকর্ডটি ছয় বছর ধারন করেছিলেন।

ঐ টেস্টর প্রথম ওভারেই উইকেট লাভ করতে পারতেন। তবে, বল ঢিলাকৃতিতে করায় নো-বলের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। এরফলে, ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলীয় বোলার ইয়ান মেকিফের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অবৈধ বোলিং ভঙ্গীমার কারণে নো-বলের ডাক শুনতে হয়। প্রথম ইনিংসে সাঈদ আনোয়ারকে কট বিহাইন্ডে বিদেয় করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে বোলিং করতে হয়নি। ঐ খেলায় জিম্বাবুয়ে দল ইনিংস ও ৬৪ রানের ব্যবধানে তাদের ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ আস্বাদন করে। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিক দল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১/৬৫ ও ০/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে রবার্ট কেনেডি’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৫ সালের শুরুতে টেস্টে ঢিলাকৃতিতে বোলিংয়ের কারণে বোলিং করা থেকে বিরত রাখা হয়। অতঃপর, বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় তারকা বোলার ডেনিস লিলি’র কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেন। বোলিং ভঙ্গীমায় কিছুটা পরিবর্তন আনেন ও নিজেকে প্রশ্নমুক্ত রেখে পুণরায় শীর্ষসারিতে নিয়ে আসেন। এরফলে, নিজের বোলিং ভঙ্গীমা পুরোপুরি পরিবর্তনে অগ্রসর হন। পরিপূর্ণ পেস সহযোগে দেশের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তাসত্ত্বেও পরবর্তীকালে নিয়মিতভাবে নো-বল ও ওয়াইড বোলিং করার প্রবণতাও সবিশেষ লক্ষ্যণীয় ছিল। বলে পর্যাপ্ত পেস থাকলেও নিখুঁততা সর্বদা ধরে রাখতে পারেননি। এছাড়াও, ক্রমাগত আঘাতের কবলে পড়তেন।

ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভ করেছেন। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে হারারেতে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতের বিপক্ষে জয়ী টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ৭ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে অনুষ্ঠিত এ খেলায় জিম্বাবুয়ে দল তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব দেখায়। শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানদেরকে বিদেয় করে ৫/৭০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ২৯৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় চতুর্থ দিনে দ্বিতীয় ওভারে নয়ন মোঙ্গিয়াকে বিদেয় করেন ও ৬১ রান তুলে দলের জয়ে ভূমিকা পালন করেন। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। একই বছরে বিদেশের মাটিতে দলের প্রথম টেস্ট বিজয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে অ্যালাস্টেয়ার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বে পাকিস্তান সফরে যান। এ সফরে হিথ স্ট্রিকের সাথে দলের প্রধান বোলার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটান। অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ পাকিস্তানের শীর্ষসারির ব্যাটিংয়ে ভাঙ্গন ধরান। প্রথম ইনিংসে ২/৪৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪/৪২ লাভ করেন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকল্পে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। তবে, কোন খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। শেষ খেলার জন্যে তাঁকে প্রথম একাদশে রাখা হলেও স্বেচ্ছায় সড়ে দাঁড়ান। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, প্রস্তুতিবিহীন অবস্থায় রয়েছেন ও সেরা খেলা উপহার দিতে সক্ষম হবেন না।

১৯৯৮ সালের পর থেকে জিম্বাবুয়ে দলের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেললেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগাতে পারেননি। পেসে ছন্দ আসলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন। মার্চ, ২০০০ সালে কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ওডিআই পরিসংখ্যান ৬/১৯ দাঁড় করান। এরফলে, ২১১ রানের মামুলী জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে প্রতিপক্ষের ইনিংস ১০৭ রানে গুটিয়ে যায়। ইংল্যান্ডের ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নিক নাইট ও গ্রায়েম হিককে বিদেয় করেন। শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানকে বিদেয় করে ৪৭/৫-এ নিয়ে যান ও পরবর্তীতে আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি ইংরেজ দল।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। গ্রেস রোডে ভারতের বিপক্ষে এক ওভারে তিন উইকেট পেয়েছিলেন। প্রতিপক্ষ ২৫৩ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হলে ৪৪তম ওভারে বোলিং করতে নামেন। এ পর্যায়ে মাত্র ৭ রানের দরকার ছিল। রবিন সিংকে কভার অঞ্চলে অ্যালাস্টেয়ার ক্যাম্পবেলের কট, জবাগল শ্রীনাথকে বোল্ড ও বেঙ্কটেশ প্রসাদের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর জোড়ালো আবেদন জানানো হলে পিটার উইলি আঙ্গুল উত্তোলন করে সাড়া দেন। এভাবেই জিম্বাবুয়ে দলে তাদের ইতিহাসে অন্যতম সেরা জয় উদযাপন করে।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে আলিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৯ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে ব্লোমফন্তেইনের গুডইয়ার পার্কে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ২৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৯৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, জ্যাক ক্যালিসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০০০-এর দশকের শুরুরদিকে ত্রি-দেশীয় সিরিজ চলাকালীন বিখ্যাত ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকরের সাথে তীব্র লড়াই চালিয়েছিলেন। আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে অগ্রসর হলেও শেষ পর্যন্ত তেন্ডুলকরই শেষ হাসি হাসেন ও ভারত দল চূড়ান্ত খেলায় জয়ী হয়। একবার ওডিআইয়ে জহির খানের উপর্যুপরী চারটি ছক্কায় বেশ বড় ধরনের ধাক্কা খান। এ ধরনের নেতিবাচক ফলাফলের বিষয়টি বাদ দিলে বেশ সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঐ সময়ে জিম্বাবুয়ের দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের মর্যাদা পান।

২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হনন। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এসি প্যারোরে’র তৃতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৩/১১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশে পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৬ নভেম্বর, ২০০২ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৮ ও ৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৬৯ ও ০/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ টেস্টে তাঁর দল ১০ উইকেট পরাজিত হয় ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২০০০-০১ মৌসুমে জিম্বাবুয়ীয় রাষ্ট্রপতি রবার্ট মুগাবে সরকার থেকে দলের সদস্য নির্বাচনে সর্বনিম্নসংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণের নীতি চালু করলে প্রতিবাদে সরব হন। ২০০৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় জিম্বাবুয়ের ‘গণতন্ত্রের মৃত্যুতে’ কালো বাহুবন্ধনী পরিধান করে প্রতিবাদ জানিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ জোগান। জিম্বাবুয়ের প্রথম খেলা শুরুর প্রাক্কালে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলোঙ্গা বিবৃতি দেন। ‘সকল দিক বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বিশ্বকাপ চলাকালীন হাতে কালোকাপড় পরিধান করবো। এ পর্যায়ে আমরা জিম্বাবুয়েতে গণতন্ত্রের মৃত্যুতে শোক পালন করবো। জিম্বাবুয়েতে মানবাধিকার লঙ্ঘনে মৌনভাবে প্রতিবাদে যুক্ত হচ্ছি।’ সাহসী এ পদক্ষেপের ফলে প্রতিযোগিতার বাদ-বাকী সময়ের খেলাগুলোয় তেমন অবদান রাখেননি। নামিবিয়ার বিপক্ষে প্রথম একাদশে তাঁকে রাখা হয়নি ও কালো বাহুবন্ধনী পরিধান না করার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে, দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন ও কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান। প্রতিযোগিতা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। সুপার সিক্স পর্বে উত্তরণের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় দল চলে গেলেও দলীয় ব্যবস্থাপক ভ্রমণের অর্থ খরচ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। গ্রেফতারী পরোয়ানায় জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কবলে পড়ার আশঙ্কায় মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া সমূচীন হবে না ভেবে ইংল্যান্ডে আবাস গড়েন। এরফলে, বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। এছাড়াও, ই-মেইলে মৃত্যুর হুমকি পান।

অপরদিকে, ২০০৩ সালে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলোঙ্গাকে এমসিসি কর্তৃপক্ষ সাম্মানিক জীবন-সদস্যরূপে মনোনীত করে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ল্যাশিংস একাদশের পক্ষে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিশ্লেষকসহ ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ২০১০ সালে ‘ব্লাড, সুইট এন্ড ট্রিজন’ নামীয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে কালো বাহুবন্ধনী পরিধানের বিস্তারিত বিষয়াদি তুলে ধরেছেন। তাঁর সাহসী পদক্ষেপের কারণে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তরুণ ক্রিকেটারদের আদর্শ প্রতিকৃতিতে পরিণত হন। উচ্ছ্বাস, মানবতাবোধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীতে অগ্রসর হয়েছেন এবং যেখানেই গিয়েছেন বন্ধুদের মন জয়ে তৎপর হন।

দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে মাঠে নামলেও বলে নিখুঁত নিশানা সর্বদা বজায় রাখতে পারতেন না। এছাড়াও, আঘাতের কারণে স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে পারেননি। ফলে, ইপ্সিত ফলাফল আনয়ণে নিজেকে যুক্ত করতে পারতেন না। তাসত্ত্বেও, সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ৩৮.৫২ গড়ে ৬৮ উইকেট লাভ করেছিলেন ও অবসর গ্রহণকালীন হিথ স্ট্রিকের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছিলেন। ৫০-ওভারের খেলায় ওডিআইগুলোয় ৩৪.০৮ গড়ে ৫৮ উইকেট দখল করেন। ২০০৩ সালে লন্ডনে চলে যান ও সেখানে সঙ্গীতের দিকে ধাবিত হন। ২০০৬ সালে চ্যানেল ফাইভের ‘দি অল স্টার ট্যালেন্ট শোয়ে’ গীতিনাট্য সঙ্গীতের পুরস্কার লাভ করেন। একই বছরের ১৯ নভেম্বর তারিখে ‘অরেলিয়া’ শীর্ষক গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেন। এছাড়াও, অবসর গ্রহণের পর নৈশভোজন পরবর্তী বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

Similar Posts

  • |

    অসি ডসন

    ১ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ তারিখে নাটালের রসবার্গ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। দৌঁড়ুতে বেশ পটু ছিলেন। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    অ্যালান ডসন

    ২৭ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কেপ কোবরাস…

  • |

    ড্যাস্টি ট্যাপস্কট

    ৭ নভেম্বর, ১৮৮৯ তারিখে কেপ প্রভিন্সের বার্কলি ওয়েস্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করেছেন। ১৯১০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯১০-১১ মৌসুম থেকে…

  • | | | |

    বিষেন সিং বেদী

    ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘স্পিনের সর্দার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দৃষ্টিনন্দন, শৈল্পিকসত্ত্বা নিয়ে বিশুদ্ধ ভঙ্গীমায় বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। বোলিং ভঙ্গীমার…

  • |

    ভিনসেন্ট ট্যানক্রেড

    ৭ জুলাই, ১৮৭৫ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ১৮৯৮-৯৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ১৮৯৮-৯৯ মৌসুমে লর্ড…

  • | | | |

    মাইক গ্যাটিং

    ৬ জুন, ১৯৫৭ তারিখে মিডলসেক্সের কিংসবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী তিনি। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘গ্যাট’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ইংল্যান্ডের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। দ্রুত পদচালনায় অগ্রসর হওয়াসহ স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশ আগুয়ান ছিলেন। ঘরোয়া…