১৫ নভেম্বর, ১৯৯১ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান তিনি। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘টোই’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছেন। দীর্ঘ সংস্করণের তুলনায় সাদা-বলের ক্রিকেটেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পাশাপাশি বিবিএলেও বেশ কিছু স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন। ক্রাইস্টচার্চভিত্তিক সেন্ট অ্যান্ড্রুজ কলেজে পড়াশুনো করেছেন। তাঁর মাঝে প্রতিশ্রুতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়। ২০১১ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া পর্যায়ের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, সিডনি থান্ডার ও পেনিনসুলা-হারবারের পক্ষে খেলেছেন। ৭ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে র্যাঙ্গিওরায় অনুষ্ঠিত ক্যান্টারবারি বনাম ওতাগোর মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
কয়েক বছর ধরেই নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া আসরে বেশ আলোচিত ছিলেন। ঘরোয়া পর্যায়ে অংশ নেয়ার পর থেকেই ক্রমাগত স্ট্রোক খেলার পাশাপাশি রক্ষণব্যূহ গড়ে তুলতে পারদর্শী তিনি। ২০১৪-১৫ মৌসুমের ঘরোয়া ক্রিকেটে বিশেষতঃ সীমিত-ওভারের খেলায় দারুণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের সুবাদে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পান। ২০১৪-১৫ মৌসুমের ফোর্ড কাপে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৭৫.৬৬ গড়ে ও ১০৫.৮২ স্ট্রাইক রেটে ৪৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। শুরুতে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের পক্ষে খেলেন। দূর্দান্ত খেলা প্রদর্শনের কারণে অল্প কিছুদিন পরই জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।
২০১৫ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত খেলায় মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ বাউন্ডারি সহযোগে ২১ বল মোকাবেলায় ২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ঐ খেলায় তাঁর দল সাত উইকেটে জয়লাভ করেছিল।
২০১৫-১৬ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে ওয়েলিংটনে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৮ ও ৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যাডাম ভোজেসের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫২ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০১৬ সালে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৭ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩৬ ও ৭৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। কুইন্টন ডি ককের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ২০৪ রানে জয়লাভ করলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
টেস্ট ক্রিকেটে তেমন ভালো না খেললেও ২০১৭ সালে নিজ দেশে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মনোমুগ্ধকর শতরানের ইনিংস উপহার দেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে ফাফ ডু প্লিসি’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৬ মার্চ, ২০১৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯৮ রান অতিক্রম করেন। এছাড়াও, টেস্টে প্রথমবারের মতো শতক হাঁকান। খেলায় তিনি ১১৮ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। কেশব মহারাজের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার উদ্দেশ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ২৮ ও ৫৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এজাজ প্যাটেলের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে নিউজিল্যান্ড দল ৪ রানের নাটকীয় জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০১৯ সালে নিজেকে স্বার্থক বছর হিসেবে চিত্রিত করেন। ওডিআইয়ে ৪০-এর অধিক গড়ে রান তুলেন। ২০১৫ সালে অভিষেক ঘটলেও নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতক হাঁকানোর জন্যে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ পর্যায়ে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। রস টেলরের সাথে ১৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩৬৪ রান সংগ্রহ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৫৫ স্ট্রাইক রেটে ১২৪ রান তুলেছিলেন তিনি।
একই মাসে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে না পারলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে পরবর্তী সিরিজে দুইটি অর্ধ-শতকের সন্ধান পান।
২০১৯-২০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে দিবা-রাত্রির টেস্টে অংশ নেন। সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে ব্যাট হাতে নিয়ে ৭ ও ২১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মিচেল স্টার্কের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২৯৬ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০২০-২১ মৌসুমে নিজ দেশে জেসন হোল্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৭৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১২ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে ডিন এলগারের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ম্যাট হেনরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৭৬ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে দিমুথ করুণারত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৭ মার্চ, ২০২৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৭৪ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২০০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৮ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৩-২৪ মৌসুমে টিম সাউদি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। গ্লেন ফিলিপসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে ৪ উইকেটে জয় পেলে সফরকারীরা সিরিজে সমতা আনতে সক্ষম হয়।
২০২৫ সালে মিচেল স্যান্টনারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৫০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ডেভন কনওয়ে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৩৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
