|

হেমাঙ্গ বাদানি

১৪ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ২০০০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

মাঝারীসারিতে পরিচ্ছন্ন ও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মাঠে সজীব ভূমিকায় অগ্রসর হতেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে বেশ কয়েকজন অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে তাঁকে ভারত দলে রাখা হয়। শান্ত মেজাজের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে খেলতে না পারায় দুই বছরের মধ্যেই তাঁর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন থমকে যায়। চেন্নাইয়ের লিকলিকে তরুণ হিসেবে খেলেন। রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় রানের ফুলঝুড়ি ছোটানোর পর দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। সহজাত ভঙ্গীমায় বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। নিচুমুখে এক পাশ বোলারের দিকে রেখে কব্জীর মোচরে রান সংগ্রহে তৎপর হন। শুরুতে তাঁকে ওডিআই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিছুটা সফলতা স্বাক্ষর রাখার পর টেস্ট দলে পরীক্ষামূলকভাবে খেলানো হয়েছিল।

শৈশবকাল থেকেই ক্রিকেটের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ গড়ে উঠে। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে তামিলনাড়ু ও বিদর্ভের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস ও চেন্নাই সুপারস্টার্সের পক্ষে খেলেছেন। প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা তিনি বেশ ভালো করেছিলেন। তিন খেলা শেষে ১২২ গড়ে ৩৬৬ রান তুলেন। তামিলনাড়ুর পক্ষে দারুণ খেলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪৬ গড়ে ৬৭৫৮ রান তুলেন। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে দুইবার সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। মুম্বইয়ের বোলিং আক্রমণ প্রতিহত করে ১৬২ ও ৬৩ রান তুলেন। এ দলটির বিপক্ষেই অধিক সফলতা পান। ছয় খেলা থেকে ৬৫.৪৪ গড়ে ৫৮৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

২০০০ থেকে ২০০৪ সময়কালে ভারতের পক্ষে সবমিলিয়ে মাত্র চারটি টেস্ট ও চল্লিশটি ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। ৩০ মে, ২০০০ তারিখে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের খেলায় স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলের সংগ্রহ ১৪৪/৫ থাকা অবস্থায় ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ২৫৪ রানে নিয়ে প্রথম সর্বসমক্ষে তুলে ধরেন।

২০০১ সালে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১৫ জুন, ২০০১ তারিখে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২৩৭ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে ভারতের ক্যাপ লাভে সক্ষম হন। ২ ও ১৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, অ্যান্ডি ব্লিগনটের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় তাঁর দল ৪ উইকেটে পরাজিত হলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

মাঝারিসারিতে ব্যাটসম্যানের প্রাচুর্যতার কারণে বিস্ময়করভাবে টেস্ট অভিষেক পর্বে পরীক্ষামূলকভাবে ইনিংস উদ্বোধনের জন্যে আমন্ত্রণ পান। তবে, নতুন বলের বিপক্ষে তাঁকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। খুব দ্রুত নিজেকে পর্দার অন্তরালে নিয়ে যেতে থাকেন। ঐ বছরের শেষদিকে আরও তিনবার সুযোগ আসে। শ্রীলঙ্কা সফরে শচীন তেন্ডুলকরভিভিএস লক্ষ্মণের অনুপস্থিতিতে তিনি এ সুযোগ গ্রহণে ব্যর্থ হন।

২০০১-০২ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৯ আগস্ট, ২০০১ তারিখে কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। স্বাগতিক দল ইনিংস ও ৭৭ রানে জয় পেয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। ৩৮ ও ১১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হন।

২০০১ সালে শেষ মুহূর্তে পুনেতে শক্তিধর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম ও একমাত্র ওডিআই শতক হাঁকাতে সক্ষম হন। নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদের সহায়তায় ৯৮ বলে ১০০ রান তুলে নিজের স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। পরবর্তীতে এটিই তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসে পরিণত হয়। তবে, মার্ক ওয়াহ’র নিখুঁত শতরানের ইনিংসে তাঁর এ সাফল্য ম্লান হয়ে যায়।

এ পর্যায়ে ৫০ গড়ে রান তুলেছিলেন। তারপর থেকেই খেলায় ছন্দপতন ঘটলে ও তরুণ খেলোয়াড়দের আবির্ভাবে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন হুমকির মুখোমুখি হয়। এক পর্যায়ে জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা অস্তমিত হয়ে পড়ে। ২০০২-০৩ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় মনোমুগ্ধকর শতক হাঁকান। এর পরপরই ভারত ‘এ’ দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমনার্থে সহঃঅধিনায়ক হিসেবে গমন করে সুন্দর খেলেন। ফলশ্রুতিতে, পুণরায় জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ আসে। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি খেলায় অংশ নেন।

২০০৩-০৪ মৌসুমে এমসিজিতে সর্বশেষ কীর্তিগাঁথা স্থাপন করেন। দলের সংগ্রহ ৭৫/৬ হলে অজিত আগরকরকে সাথে নিয়ে ২২২ রানে পৌঁছে দেন। এছাড়াও, নিখুঁততার সাথে বামহাতে অর্থোডক্স বোলিং করতেন। ওডিআইয়ে ওভারপ্রতি ৪.৮৮ গড়ে রান দিয়েছেন। ২০০৪ সালে পাকিস্তান সফরে সর্বশেষ খেলেন। এরপর আর তাঁকে জাতীয় দলে খেলানো হয়নি।

মিশ্র সফলতা পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ওডিআইয়ে অধিক সফল ছিলেন। তিন বছর ওডিআই দলের সদস্য হিসেবে খেললেও এক বছরেরও কম সময় টেস্ট খেলার সুযোগ পান। নিজের সেরা দিনে খেলায় বিরাট প্রভাব বিস্তার করতেন ও দর্শনীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠের উভয় পার্শ্বে সমানে সপাটে ড্রাইভ মারতেন। বাউন্সারের বিপক্ষেও বেশ সজাগ ছিলেন। তবে, ছন্দ আনয়ণে বেশ হিমশিম খেতেন ও বেশ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা থাকলেও অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনেও ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ২৩ বছর বয়সে ২০০০ সালে খেলা গড়াপেটার সূত্রপাতের বছরে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনঅজয় জাদেজা’র জড়িয়ে পড়ার সুবাদে তাঁকে জাতীয় দলে যুক্ত করা হয়।

২০০৭ সালে অনুমোদনবিহীন আইসিএলে খেলার জন্যে চেন্নাই সুপারস্টার্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ফলশ্রুতিতে, বিসিসিআই থেকে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। পরবর্তীতে, বিসিসিআইয়ের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় চলে আসেন ও ২০০৯ সালে ঐ লীগ ত্যাগ করে পুণরায় ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান।

২০০৯-১০ মৌসুমের বিজয় হাজারে ট্রফি প্রতিযোগিতায় রাজস্থানের পক্ষে খেলেন। স্বল্পসংখ্যক খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে আইসিএলে অংশ নেয়ার পর আইপিএলে খেলেন। চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। তবে, কোন খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ ঘটেনি। ২০১৩ সালে বিদর্ভের সদস্যরূপে পাঞ্জাবের বিপক্ষে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ৩৭ বছর বয়সে পেশাদারী ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। ইন্ডিয়ান সিমেন্টসে কাজ করেন। টিএনপিএলে চেন্নাই সুপার জাইলসের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।

Similar Posts

  • |

    শামসুর রহমান

    ৫ জুন, ১৯৮৮ তারিখে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘শুভ’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ২০০৫ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে মধ্যাঞ্চল, ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা…

  • | |

    ক্রিস মার্টিন

    ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। নিখুঁত নিশানা বরাবর বল ফেলে পেস বোলিং করতেন ও সিম আনয়ণে ব্যাটসম্যানের সমীহের পাত্রে পরিণত হতেন। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার কারণেও তিনি সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।…

  • | | | |

    বান্দুলা বর্ণাপুরা

    ১ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে রাম্বুক্কানায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, কার্যকর মিডিয়াম-পেস বোলার ছিলেন। শ্রীলঙ্কা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৭০-৭১ মৌসুম থেকে ১৯৮২-৮৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে চারটিমাত্র টেস্ট ও ১২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে…

  • | | | |

    রঘুরাম ভাট

    ১৬ এপ্রিল, ১৯৫৮ তারিখে মহীশুরের পুত্তুর এলাকায় জন্মগ্রহকারী ক্রিকেটার, কোচ, প্রশাসক ও আম্পায়ার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে ১৯৯২-৯৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটকের…

  • | |

    ডেনিস লিলি

    ১৮ জুলাই, ১৯৪৯ তারিখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সুবিয়াকো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার। টেস্ট ক্রিকেটের কিংবদন্তী তারকা। বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং শুধুমাত্র অস্ট্রলীয়দের মধ্যেই নয়, বৈশ্বিকভাবে বীর হিসেবে বিবেচিত হয়ে…

  • | | |

    জ্যাক ক্যালিস

    ১৬ অক্টোবর, ১৯৭৫ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পাইনল্যান্ডস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়াসহ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৬ ফুট (১.৮৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। হেনরি ক্যালিস ও মার্সিয়া ক্যালিস দম্পতির সন্তান ছিলেন। ওয়েনবার্গ বয়েজ…