১৬ মার্চ, ১৯৭৪ তারিখে বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জিম্বাবুয়ের সর্বকালের সেরা বোলার হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করে রেখেছেন।
সিংহ হৃদয়ের অধিকারী ও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা পেস বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। প্রচণ্ড দম ও শক্তিমত্তা সহযোগে নিপুণতা ও নিয়ন্ত্রিত পন্থায় ডানহাতে পেস বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। বলকে উভয় দিক দিয়েই সুইং করানোয় সক্ষম ছিলেন। এক দশকের অধিক সময় ধরে জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে মারমুখী ভঙ্গীমায় অগ্রসর হওয়াসহ চমৎকার ফিল্ডার ছিলেন। মাঝারিসারির নিচেরদিকে ব্যাটিংয়ে নেমে দলের ভীত মজবুত করতেন।
ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বল হাতে নিয়ে যেমন অগ্নি গোলকের ন্যায় বোলিং করতেন, ঠিক তেমনি ব্যাট হাতে নিয়েও আগ্রাসী ভূমিকায় অংশ নিতেন। আউট-সুইঙ্গারে ঐ সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের কাছেও সমীহের পাত্রে পরিণত হতেন। প্রায় একাকী হাতে বোলিং বিভাগ সামলে নেয়ার দায়িত্ব নিতেন। অধিকাংশ বোলিং অনুপযোগী পিচেও বলে পর্যাপ্ত সিম আনয়ণে তৎপরতা দেখাতেন। উৎসাহব্যঞ্জক বোলিংয়ে নৈপুণ্যতা প্রদর্শনসহ নিচেরসারির অমূল্য ব্যাটসম্যানরূপে বিবেচিত হয়ে আসছেন।
কলেজে অধ্যয়নকালীন সচরাচর নিজ বয়সের চেয়ে বড়দের দলেই খেলতেন। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক প্রায় প্রতিটি স্তরের ক্রিকেটে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্রিকেটের সূচনালগ্নে মানসম্মত ফাস্ট বোলারদের অভাব ছিল ও হিথ স্ট্রিক তাঁর অবদান ঠিকই সকলের সমক্ষে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে ‘বি’ দলের সদস্যরূপে চিত্তাকর্ষক অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ফলশ্রুতিতে, পরবর্তী মৌসুমে জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান।
১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে মাতাবেলেল্যান্ড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আহমেদাবাদ রকেটসের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯৪ সালে পিতা ডেনিস স্ট্রিকের ন্যায় ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে মাতাবেলেল্যান্ডের সাথে যুক্ত হন। এমনকি ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে তাঁরা একত্রে খেলেছিলেন।
বুলাওয়ের বৃহৎ খামারী পরিবারে জন্ম। ‘স্ট্রিকি’ কিংবা ‘স্ট্যাক’ ডাকনামে ভূষিত হিথ স্ট্রিক ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। জিম্বাবুয়ের ফ্যালকন কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। পিতা ডেনিস স্ট্রিক জিম্বাবুয়ের টেস্ট মর্যাদা লাভের পূর্বে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে ক্রিকেট খেলতেন। ১৯৮৫ সালে জিম্বাবুয়ে দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার দশ বছর পর প্রায় ৪৭ বছর বয়সে খেলোয়াড় সঙ্কটকালে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত লোগান কাপের চূড়ান্ত খেলায় মাতাবেলেল্যান্ডের সদস্যরূপে ম্যাশোনাল্যান্ড কান্ট্রি ডিস্ট্রিক্টসের বিপক্ষে স্বীয় সন্তান হিথ স্ট্রিকের সাথে একত্রে অংশ নেন। তবে, অধিনায়ক ওয়েন জেমসের স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করে ১৩টি ডিসমিসাল এবং ৯৯ ও অপরাজিত ৯৯ রান তুললে তাঁদের দল জয়লাভ করতে সমর্থ হয়।
১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সব মিলিয়ে ৬৫ টেস্ট ও ১৮৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। টেস্টে ২৮.১৪ গড়ে ২১৬ উইকেট লাভ করেছেন। তন্মধ্যে, ভারতের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৬/৭৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ৫০-ওভারের খেলায় ৩০-এর কম গড় নিয়ে ২৩৯ উইকেট পান। একবার পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রেকর্ডের সাথে যুক্ত রয়েছেন। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সাথে ১৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
১৯ বছর বয়সে ১০ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেন। তবে, খেলাটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয় ও কোন বল করার সুযোগ পাননি।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ে দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। এ সফরেই দলের অমূল্য খেলোয়াড় হিসেবে পরিগণিত হতে থাকেন। ঐ সিরিজে ১৩.৫৪ গড়ে ২২ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং মেরুদণ্ড তছনছ করে ফেলেছিলেন। সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন। এভাবেই তাঁর বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটে।
১ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। গাই হুইটল, গ্লেন ব্রুক-জ্যাকসন, জন রেনি, মার্ক ডেকার ও স্টিফেন পিয়লের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। নিজেকে তেমন মেলে ধরতে পারেননি। ০ ও ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৭৭ রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। ১৩১ রানে তাঁর দল পরাজিত হয়।
তবে, রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে আট উইকেট দখল করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন। ঐ সিরিজে জিম্বাবুয়ে দল পরাজিত হলেও দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনায় দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে সফররত শ্রীলঙ্কার দলের বিপক্ষেও সেরা ছন্দে অবস্থান করছিলেন। সিরিজের ১৩ উইকেট দখল করেন।
এরপর, ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়ী খেলায় অংশ নেন। সফররত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদেরকে আউট-সুইঙ্গারে নাজেহাল করেন। ২২ উইকেটসহ ৫৪ রান সংগ্রহ করে ইনজামাম-উল-হকের সাথে যৌথভাবে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। তন্মধ্যে, তৎকালীন ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৬/৯০ লাভ করেছিলেন। এ কৃতিত্ব অর্জনের ফলে প্রথম বোলার হিসেবে উপমহাদেশের বাইরে ২১ বছরের পূর্বেই ৪০ উইকেট লাভ করেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৫৩ ও ৪/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ০ ও ৩০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৯৯ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে নাথান অ্যাসলেকে বিদেয় করে চতুর্থ উইকেট লাভ করেন ও ব্যক্তিগত ৫০তম উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৪/৫২ ও ১/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২৪ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
পরবর্তী বছরগুলোয় পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের ন্যায় বড় ধরনের দলগুলোর বিপক্ষে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর ধারা অব্যাহত রাখতে থাকেন। ২০০০ সালে লর্ডসে দৃশ্যতঃ একাকী বোলিং আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন। ৬/৮৭ লাভ করে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। এরফলে, জিম্বাবুয়ের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। দল মাত্র ৮৩ রানে গুটিয়ে যায়। স্বাগতিক দল ৪১৫ রানে গুটিয়ে গেলেও তিনি এ সাফল্য পান। ঐ খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ২০৯ রানে পরাভূত হয়।
জিম্বাবুয়ে দলের উত্থানে বেশ জোড়ালো ভূমিকা রাখেন। অবশেষে, ২০০০ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। তবে এ দায়িত্ব পালনকালে ক্রিকেট বোর্ডের সাথে আর্থিক সংঘাত ও কোটা প্রথায় জড়িয়ে পড়েন। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় খেলায় প্রভাব ফেলে ও অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
২০০০ সালে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১ জানুয়ারি, ২০০০ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১/৮২ ও ২/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। কোন ইনিংসেই ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। মারে গুডউইনের (১৪৮* ও ১*) অসামান্য দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। তবে, স্বাগতিক দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছিল।
এরপূর্বে ১৮ মে ২০০০ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বল হাতে নিয়ে ৬/৮৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। ইনিংস ও ২০৯ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয় তাঁর দল। দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৯ উইকেট লাভ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হনন। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৮ ও ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৭৪ ও ২/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০০২ সালে পুণরায় অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের জন্যে মনোনীত হন। আবারও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অচলাবস্থায় সম্পৃক্ত হয়ে আলোচনায় চলে আসেন। রাজনৈতিক অবস্থানে চলে আসায় সমালোচনার সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে, হেনরি ওলোঙ্গা ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন। আবারও তাঁকে বোলিং ও ব্যাটিং বিভাগ সামলানোর দায়িত্বে দেয়া হয়। তবে, ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে ব্যর্থ হয় জিম্বাবুয়ে দল। দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন অসম্ভব হয়ে পড়ে। এপ্রিল, ২০০৪ সালে দল নির্বাচনে জিম্বাবুয়ে বোর্ডের সাথে মতানৈক্য ঘটায় দায়িত্ব ছেড়ে দেন ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
এক পর্যায়ে বোর্ড নমনীয় হলে মার্চ, ২০০৫ সালে দলে প্রত্যাবর্তন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ভেঙ্গে পড়া দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হন। ২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১৪ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, খেলায় ছয় উইকেট পেয়েছিলন। সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
দুই বছর মেয়াদের চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর ২০০৬ সালে ওয়ারউইকশায়ারের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। তবে, ২০০৭ সালে একটিমাত্র খেলায় অংশ নেয়ার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের সাথে সম্পূর্ণরূপে যুক্ত না হলেও ২০০৭ সালে অনুমোদনহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে খেলার জন্যে চুক্তি হন। ২০০৮ সালের আসরেও অংশ নেন। এরফলে, কার্যতঃ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। হংকং সিক্সেস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন।
জিম্বাবুয়ের সফলতম অধিনায়কের মর্যাদা পেয়েছেন। উভয় স্তরের ক্রিকেটেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সব মিলিয়ে চারটি টেস্ট ও ১৮টি ওডিআইয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। এছাড়াও, ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালের উপর্যুপরী তিনটি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের শুরুতে পূর্ববর্তী দুই বছরের সফলতার কল্যাণে উইজডেনের বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারের তালিকায় শীর্ষদিকে দেখতে পান। ২০-এরও কম গড়ে ৫৩ উইকেট দখল করেছিলেন। এ পর্যায়ে দৃশ্যতঃ দলের এক ব্যক্তির বোলিং আক্রমণে নিজেকে নিয়ে যান ও দলের সেরা বোলার হিসেবে পরিগণিত হন। ওডিআইয়ে ব্যাট হাতে নিয়ে নিয়মিতভাবে ছোট ধরনের ইনিংস খেলে বিদেয় নিতেন। টেস্ট ক্রিকেটে নিজ নামের পার্শ্বে একটি শতকের নাম লিখিয়েছেন। ২০০৩ সালে হারারেতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ সাফল্য পান। অপরাজিত ১২৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যান। প্রথম জিম্বাবুয়ীয় হিসেবে ১০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করার পাশাপাশি শতাধিক ওডিআই উইকেট দখল করেছিলেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেননি। পরবর্তী সময়কালে কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বোলিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন। তাঁরই সাহচর্য্যে শিঙ্গিরাই মাসাকাদজা, কাইল জার্ভিসের ন্যায় খেলোয়াড়ের উত্থান ঘটে। পরবর্তীতে, ২০১৬ সালে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন। তবে, ২০১৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় জিম্বাবুয়ে দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারায় ২০১৮ সালে এ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। একই সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং কোচ ছিলেন। ৭ মার্চ, ২০১৯ তারিখে সমারসেটের বোলিং কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন।
এছাড়াও, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট একাডেমি পরিচালনা করছেন। মূলতঃ নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিশুদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। শান্ত চরিত্রের অধিকারী হিসেবে দলীয় সঙ্গীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এনডেবেল ভাষায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলতে পারতেন।
৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে মাত্র ৪৯ বছর ১৭১ দিন বয়সে বুলাওয়েতে তাঁর দেহাবসান ঘটে।