৩ জুন, ১৯৭৭ তারিখে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘শান্ত’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। সেনা কর্মকর্তার সন্তান ছিলেন। ঢাকা সেনানিবাসেই শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ছুটির দিনগুলোয় নগরীতে বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটারদের সাথে খেলতেন। এভাবেই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। খুব শীঘ্রই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কর্তৃপক্ষের সুনজরে পড়েন। এ দলটির পক্ষে অনেকগুলো বছর খেলেছিলেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে সিলেট বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে সমর্থকদের কাছে ফাস্ট বোলিংয়ের একমাত্র ভরসা স্থল ছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আশার আলো হওয়া স্বত্ত্বেও বহুভাবে বোলিং ভঙ্গীমা পরিবর্তনের মাধ্যমে সফলতা অর্জনের চেষ্টা চালান। বিশেষতঃ, বোলিংয়ের শেষ মুহুর্তে সম্মুখের পা যথাযথভাবে ক্রিজে ফেলতে পারতেন না। বোলিংয়ের পর নিজেকেও সামলে নিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হতো তাঁকে। ফলে, তিনি কেবলমাত্র স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে সফলতা পেয়েছিলেন। যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখলে তাঁর ক্রিকেট জীবন কখনো পূর্ণাঙ্গতার সন্ধান পায়নি।
১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে পাঁচটিমাত্র টেস্ট ও ৩২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ৬ এপ্রিল, ১৯৯৫ তারিখে শারজায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করেন। খেলার প্রথম ওভারেই রোশন মহানামাকে আউটের মাধ্যমে প্রথম উইকেটের সন্ধান পান ও সবিশেষ খ্যাতি লাভ করেন।
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সর্বশেষ ও সেরা মুহূর্তের সাথে নিজেকে জড়ান। ঐ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ১১ উইকেট দখল করেন। তাসত্ত্বেও, কেনিয়ার বিপক্ষে চূড়ান্ত খেলায় লেগ-বাইয়ের মাধ্যমে জয়সূচক রান তুলে স্বর্ণালী মূহুর্ত উদযাপন করেন। ১৯৯৯ সালের গ্রীষ্মে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেন। এডিনবরায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২/২৬ পান ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম বিজয়ে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন। ঐ প্রতিযোগিতায় চার খেলায় অংশ নিয়ে তিন উইকেট লাভ করেছিলেন।
তবে, এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে মার্চ, ২০০০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ক্লাব ক্রিকেটের খেলায় পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান জহুর এলাহী’র সাথে ধাক্কা খেয়ে হাঁটুতে চোট পান। ঘটনাটি স্বাভাবিক হলেও স্টেডিয়ামে উপস্থিত আবাহনী ও কলাবাগানের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল ঝগড়ায় পরিণত হয়। আঘাত থেকে সুস্থ দেহে খেলার জগতে ফিরে আসলেও বোলিংয়ের মান আর পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনতে পারেননি।
তাসত্ত্বেও, ২০০০ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে এগিয়ে আসেন। ২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ারের অধিনায়কত্বে সফরকারী ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে সফররত ভারতের বিপক্ষে অন্য সকলের সাথে অংশগ্রহণের গৌরব অর্জন করেন। সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় তুলে নেয়। ২৮* ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে প্রথম ইনিংসে ০/৬০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করালেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৩১ লাভ করেন। সদাগোপান রমেশকে বোল্ড করে এ সাফল্য পান।
২০০১-০২ মৌসুমে খালুদ মাসুদের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দলের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। ইনিংস ও ৭৪ রানে সফরকারীরা পরাজয়বরণ করে। ৪ ও ৭ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৮৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে স্বল্পসংখ্যক টেস্টে অংশ নিলেও দীর্ঘ সময় ধরে একাধারে বোলিং করতেন। তবে, ইনিংসে কখনো দুইয়ের অধিক উইকেটের সন্ধান পাননি। ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্তি ও ছন্দহীনতার কবলে পড়লে তাঁর বোলিংয়ের কার্যকারিতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। সেপ্টেম্বর, ২০০৩ সালে সর্বশেষ খেলায় অংশগ্রহণের পর ২৭ ডিসেম্বর, ২০০৪ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে ভারতের বিপক্ষে বিস্ময়করভাবে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন। তবে, ভারতীয় ব্যাটিং তারকা বীরেন্দ্র শেহবাগের নতুন বলে পাল্টা আক্রমণের শিকারে পরিণত হন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হলেও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও ক্লাব ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ব্যবসায়ের দিকে মনোনিবেশ ঘটান।
