১৪ নভেম্বর, ১৯০৪ তারিখে নটিংহ্যামশায়ারের নানকারগেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে সন্দেহাতীতভাবে সেরা ফাস্ট বোলার ছিলেন। প্রায়শঃই ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। ঘণ্টায় নিয়মিতভাবে ৯০ মাইল বেগে বোলিং করতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে গতির সাথে ক্রমাগত নিখুঁতভাব বজায় রেখে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। লেগ থিওরি বা বডিলাইন কৌশল গ্রহণের সাথে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ায় সর্বাপেক্ষা ভীতিদায়ক ও ঘৃণিত বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯২৪ থেকে ১৯৩৮ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ইউরোপিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের ৩৩০ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।
১৯২৬ থেকে ১৯৩৩ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ২১ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ২৮.৩৫ গড়ে ৭৮ উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯২৬ সালে নিজ দেশে হার্বি কলিন্সের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৬ জুন, ১৯২৬ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ২/৯৯ ও ১/৩৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৩২-৩৩ মৌসুমে ডগলাস জার্ডিনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। এ সফরে নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী বোলার হিসেবে প্রমাণিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। চ্যাম্পিয়নশীপ ক্রিকেটে সাতটি পূর্ণাঙ্গ মৌসুম খেলেন। তন্মধ্যে চারবার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে গড়ে শীর্ষে আরোহণ করেন। ১৯৩১ ও ১৯৩২ সালে তাঁর বোলিং গড় ১২-এর কম ছিল। নটসের অধিনায়ক আর্থার কারের সাফল্যকে পাশ কাটিয়ে তাঁর সাফল্য ছাঁপিয়ে যায়। সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্ট পর্যন্ত আর্থার কারের বোলিং কৌশল প্রয়োগ করেন। কার্যতঃ সফরের শেষ খেলা পর্যন্ত ডগলাস জার্ডিন তাঁকে খেলান ও তিনি মাঠে অবস্থান করতে বাধ্য হন। এ পর্যায়ে তাঁর বাম পায়ে ভাঙ্গা হাড় নিয়ে খেলেছিলেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে খেলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৮ রান তুলে বিদেয় নেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৯৮ ও ১/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রিকেট খেলা পুণরায় শুরু হলে আবারও লারউডের বিষয়ে আলোচনা চলতে থাকে। তবে, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট-সাংবাদিক জ্যাক ফিঙ্গলটন তাঁকে ব্ল্যাকপুলের ছোট্ট দোকান পরিচালনা করতে দেখতে পান। তাঁর পুরো পরিবারকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসিত করতে সহায়তার হাত প্রশস্ত করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। সিডনির শহরতলীতে পাঁচ কন্যা ও সস্ত্রীক বসবাস করতে থাকেন। মাঝে-মধ্যে টেস্ট খেলা দেখতে যেতেন ও পুরনো খেলোয়াড়দের সাথে একত্রিত হতেন। ১৯৯৩ সালে ৮৮ বছর বয়সে এমবিই উপাধিতে ভূষিত হন। এর দুই বছর পর ২২ জুলাই, ১৯৯৫ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার র্যান্ডউইকে ৯০ বছর ২৫০ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ সালে ওয়েস্ট ব্রিজফোর্ডের পারিশ চার্চে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। জানুয়ারি, ১৯৯৬ সালে নানকারগেটে তাঁর স্মরণার্থে স্মৃতিফলক লাগানো হয়।
