১১ অক্টোবর, ১৯৯৩ তারিখে গুজরাতের চৌরিয়াশি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে সবিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
৬ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৮৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। হিমাংশু পাণ্ড্য ও মালিনী পাণ্ড্য দম্পতির সন্তান। জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যতার মুখোমুখি হন। তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ক্রুনাল পাণ্ড্য ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে। ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বরোদার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পক্ষে খেলছেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাও এ দলের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ। একই খেলায় অংশগ্রহণকালে ধারাভাষ্যকারের তাঁদেরকে ‘পাণ্ড্য ব্রাদার্স’ নামে ডেকে থাকেন।
সঠিকমানের আধুনিক ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। ব্যাট হাতে বড় ধরনের মারে অভ্যস্ত, বোলিংয়ের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সফলতা পেয়েছেন ও মাঠে ফিল্ডিংয়ে সজীবতা এনেছেন। এ সকল গুণাবলীর সমন্বয়ের ফলে কপিল দেবের অবসর গ্রহণের পর ভারত দলকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছে।
জানুয়ারি, ২০১৬ সাল থেকে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের বাঁক ঘুরে যায়। ঘরোয়া টি২০ প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে শীর্ষ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। ১০ ইনিংসে ৫৩.৮৫ গড়ে ১৩০.৯০ স্ট্রাইক রেটে ৩৭৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১০ উইকেট দখল করে বরোদাকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। তাঁর অল-রাউন্ড গুণাবলীর কারণে মুম্বই কর্তৃপক্ষ আকৃষ্ট হয় ও ২০১৫ সালের ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের আসরে চুক্তিবদ্ধ করে। নিজস্ব প্রথম মৌসুমে কলকাতার বিপক্ষে ৩১ বলে ৬১ রান তুলে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ফলশ্রুতিতে, তৎকালীন কোচ রিকি পন্টিং তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
২০১৬ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ খেলার সুবাদে ২০১৫-১৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে তাঁকে ভারতের টি২০আই দলে ঠাঁই দেয়া হয়। ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০আইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। আন্তর্জাতিক অভিষেকে প্রথম ওভারেই ১৯ রান খরচ করে বসেন। এরপর, প্রায় হ্যাট্রিক লাভের দোরগোরায় ছিলেন। বড় ধরনের আসর খেলতে ভালোবাসেন। ২০১৬ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন বল থেকে মাত্র দুই রান দেন।
তাঁর নো-বলে লেন্ডল সিমন্স জীবন ফিরে পান ও অপরাজিত ইনিংস খেললে সেমি-ফাইনাল থেকে ভারত দলকে বিদেয় নিতে হয়। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বীরোচিত ভূমিকা রাখেন। চূড়ান্ত খেলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৩ বল মোকাবেলান্তে ৭৬ রান তুলেন। এ বছর ক্রিকইনফো কর্তৃক বর্ষসেরা ওডিআই একাদশে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
একই বছর বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৬ জুলাই, ২০১৭ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৫০ রানের অর্ধ-শতক হাঁকান। ১/১৩ বোলিং বিশ্লেষণসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শিখর ধবনের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৩০৪ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১২ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৮ ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/২৮ ও ০/২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ১৭১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
সীমিত-ওভারের খেলায় তাঁর আক্রমণাত্মক ইনিংসের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভারতের টেস্ট দলে রাখা হয়। প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান তুলে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা কুড়ান। দলীয় অধিনায়ক ও ব্যবস্থাপনামণ্ডলী ইংল্যান্ড সফরে তাঁকে ভারত দলে অন্তর্ভুক্ত করে।
২০১৮ সালে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৩০ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে সাউদাম্পটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ১/৫১ ও ০/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মঈন আলী’র অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ৬০ রানে জয় পায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০১৯ সালে বিতর্কের পাত্রে পরিণত হন। ফলশ্রুতিতে, অস্ট্রেলিয়া সফরকালীন সিরিজের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে দেশে ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২০১৯ সালে ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে অসাধারণ খেলেন। এটি মুম্বইয়ের চতুর্থ শিরোপা লাভের অন্যতম কারণ ছিল। এরফলে, বিশ্বকাপে ভারতের ১৫-সদস্যের দলে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়।
১ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে নাতাসা স্টানকোভিচ নাম্নী এক তরুণীর সাথে বাগদান পর্ব শেষ করেন। এ দম্পতির ৩০ জুন, ২০২০ তারিখে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
