Skip to content

২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ব্লোমফন্তেইনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ফ্রি স্টেট ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আয়ারল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন। ২১ বছর বয়সেই অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। স্নেহপূর্ণ লালন-পালন ও শিক্ষালাভের ফলেই তাঁর মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলী এনে দিয়েছিল। পরিবার খাঁটিমানের মধ্যবিত্ত আফ্রিকানার বংশোদ্ভূত, ধর্মভীরু ও ক্রীড়াপ্রেমী ছিল। পিতা ইউই ক্রোনিয়ে ১৯৬০-এর দশকে ফ্রি স্টেটের অফ-স্পিন অল-রাউন্ডার ছিলেন।

শৈশবকাল থেকেই শৃঙ্খলাবোধ, সচেতনতা ও কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। নিজ শহর ব্লুমফন্তেইনের গ্রে কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন তরুণ অবস্থায় এডি বার্লো’র পরিচালনায় ফ্রি স্টেট দলে যোগ দেন। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার স্তর কম পর্যায়ে থাকলেও কারি কাপ নামে পরিচিত ক্যাসল বোলে দলের রানার্স-আপ ও সীমিত-ওভারের নিসান শীল্ডে দলের বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। পরবর্তী দুই মৌসুমের মধ্যেই ক্যাসল কাপ ও একদিনের দ্বৈত শিরোপা এনে দেন। পরবর্তী বছরগুলোয় একদিনের শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেন। সব মিলিয়ে পাঁচ মৌসুমেই সাতটি শিরোপা জয় করে তাঁর দল। আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণের ফলে দলে সর্বদা না খেললেও ঠিকই উজ্জ্বীবনী শক্তি নিয়ে দল অগ্রসর হতো।

১৮ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে অভিষেক ঘটে। সহোদর ফ্রান্সের সাথে যুক্ত হন। কারি কাপের ঐ খেলায় ট্রান্সভাল ও নর্দার্ন ট্রান্সভালের বিপক্ষে ২ ও ১৬ রান করার পর জোড়া শূন্য রানের সন্ধান পান। বিপর্যয়কর সূচনা সত্ত্বেও ঐ মৌসুমে ফ্রি স্টেটের পক্ষে রেকর্ডসংখ্যক ১৫টি প্রথম-শ্রেণীর শতকসহ একদিনের প্রতিযোগিতায় ছয়টি শতক হাঁকিয়েছিলেন।

পরের মৌসুমে ইম্পালাসের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৫ রান তুলে বেনসন এন্ড হেজেস ট্রফি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট দলকে নিয়ে যান। চূড়ান্ত খেলায় ফ্রান্সেসের সাবেক বিদ্যালয় বন্ধু অ্যালান ডোনাল্ড ৪/১৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সকে শিরোপা এনে দেন। এরপর, জানুয়ারি, ১৯৯০ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব প্রথম শতরান করেন। এ পর্যায়ে সাউথ আফ্রিকান ইউনিভার্সিটিজের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে মাইক গ্যাটিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী ইংরেজ দলের বিপক্ষে ১০৪ রান তুলেছিলেন।

১৯৯২ থেকে ২০০০ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৬৮ টেস্ট ও ১৮৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দল আইসিসি’র পূর্ণাঙ্গ সদস্যরুপে পুণঃপ্রবেশ করে। বর্ণবৈষম্যবাদ পরবর্তী সময়কালে দুইজন শ্বেতাঙ্গ ও দুইজন অ-শ্বেতাঙ্গ – মোট চারজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে ভারত গমন করলেও কোন খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তিনমাস পর আঁটোসাটো পাঁচ ওভারে ১৭ রান খরচ করে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন দলকে জয় এনে দেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে দলের নয় উইকেটের বিজয়ে তাক লাগান। ঐ প্রতিযোগিতায় নয় খেলার আটটিতে অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, সংবাদ শিরোনামে পরিণত হওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে বৃষ্টির কারণে ১৩ বলে ২২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পরবর্তীতে এক বলে ২১ রান নির্ধারণ করা হয়।

এরপর, বর্ণবৈষম্যবাদ পরবর্তী সময়কালে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্যরূপে ১৯৯২ সালে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে যান। ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ তারিখে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অ্যালান ডোনাল্ড, পিটার কার্স্টেন, অ্যান্ড্রু হাডসন, অ্যাড্রিয়ান কুইপার, ডেভিড রিচার্ডসন, মার্ক রাশমেয়ার, মেরিক প্রিঙ্গল, রিচার্ড স্নেল ও টারটিয়াস বসের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ টেস্টে তিনি মাত্র ৫ ও ২ রান তুলতে পেরেছিলেন। অ্যান্ড্রু হাডসনের অসাধারণ শতক সত্ত্বেও খেলায় সফরকারীরা ৫২ রানে পরাজিত হয়।

তাসত্ত্বেও, সমগ্র টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে ৩৬.৪১ গড়ে ৩৭১৪ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ২৯.৯৫ গড়ে ৪৩ উইকেট দখল করেছিলেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে ৩৮.৬৪ গড়ে ৫৫৬৫ রান ও ওভারপ্রতি ৪.৪৪ রানে ৩৪.৭৮ গড়ে ১১৪ উইকেট পান। এ পর্যায়ে ৭৩টি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১৮৪টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৪৩.৬৯ গড়ে ১২১০৩ রান ও ৩৪.৪৩ গড়ে ১১৬ উইকেট পেয়েছেন।

আক্রমণধর্মী ব্যাটিংশৈলী উপস্থাপনা, বুদ্ধিমত্তা সহযোগে মিডিয়াম-পেস বোলিং ও দূর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে অবিস্মরণীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। সফরকারী ভারতীয় ক্রিকেটারেরা তা হাড়েহাড়েই টের পেয়েছিলেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে সিরিজের প্রথম ওডিআইয়ে ব্যক্তিগত সেরা ৫/৩২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ও তিন বল বাকী থাকতে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় এনে দেন। সাত খেলা নিয়ে গঠিত ঐ সিরিজে ওভারপ্রতি মাত্র ৩.৫৯ রান খরচ করেছিলেন। এছাড়াও, টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সাহসীকতার বিষয়টিও ঐ সিরিজে উপস্থাপন করেছিলেন। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে দ্বিতীয় ওভারে মাঠে নেমে পৌনে নয় ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে ৪১১ বল মোকাবেলায় ১৩৫ রান তুলে সবশেষে আউট হন। ছয়টি টেস্ট শতকের মধ্যে এটি প্রথম ও সর্বোচ্চ ছিল। অ্যালান ডোনাল্ড খেলায় ১২ উইকেট দখল করে দলের প্রথম টেস্ট বিজয়ে নতুন যুগে নিয়ে যান।

১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৫ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৭ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৩২ ও ০/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এটি তাঁর নিজস্ব দ্বিতীয় শতক হাঁকান। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ব্রেট শ্যুলজের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণের সফরকারীরা ইনিংস ও ২০৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এ জয়টি দক্ষিণ আফ্রিকার সর্ববৃহৎ বিজয় ও শ্রীলঙ্কার সর্বাপেক্ষা শোচনীয় পরাজয় ছিল।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ৪৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৭১ রান সংগ্রহসহ ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

২৪ বছর বয়সে দলের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনায় সচেষ্ট হন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সহকারী অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। সিডনি টেস্টে কেপলার ওয়েসেলসের আঙ্গুল ভেঙ্গে গেলে চূড়ান্ত দিন সকালে দলের দায়িত্বে থাকেন। ছয় উইকেট হাতে রেখে ১১৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবমান স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে ১১১ রানে গুটিয়ে দিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। মিড-অফ এলাকা থেকে শেন ওয়ার্নকে সরাসরি উইকেটে বল স্পর্শে রান আউট করেন ও খেলার গতিধারাকে অনুকূলে নিয়ে আসেন।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১১২ ও ১৪* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৮ ও ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ডেভ রিচার্ডসনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথারটনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪ ও ৬ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে পিটার মার্টিনের শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্যারি কার্স্টেনের ব্যাটিং বদান্যতায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে রশীদ লতিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৬ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথমদিনে ব্যক্তিগত ৪৬ রানে স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থাকাকালে ওয়াসিম আকরাম তাঁর ক্যাচ ফেলে দিলে জীবন ফিরে পান। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৮৫ ও ৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। মার্ক বাউচারের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৫৯ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

ঐ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম দিন ড্যারিল কালিনানের সাথে ৯৬ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪র্থ উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়েন। খেলায় তিনি ৪৯ ও ৭৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, খেলার চতুর্থ দিন ২৬৪ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা দল তাদের সর্বনিম্ন রানের নজির গড়ে। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭০ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৭ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে এইচপি তিলকরত্নেকে বিদেয় করে তৎকালীন ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৬। খেলায় তিনি ৩/২১ ও ২/১৩ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১০ ও ৮২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, চতুর্থ দিন খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ বলে অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে কপিল দেবের ৩০ বলে অর্ধ-শতকের কোটা স্পর্শের পর নিজেকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যান। তবে, অ্যালান ডোনাল্ডের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

এছাড়াও, আরও আঘাতের কবলে পড়ে কেপলার ওয়েসেলস দেশে ফিরে গেলে একদিনের প্রতিযোগিতায়ও দলের নেতৃত্বে ছিলেন। অ্যাডিলেড টেস্টে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ১৮৯৮-৯৯ মৌসুমে মারে বিসেটের পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তবে, ঐ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দল ১৯১ রানে জয়লাভ করে সিরিজে সমতা আনতে সমর্থ হয়। ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের পক্ষে রেকর্ডসংখ্যক ৫৩ টেস্ট ও ১৩৮টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৯৮ সালে স্প্রিংবককে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২৩ জুলাই, ১৯৯৮ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১২৬ ও ৬৭ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারের অপূর্ব বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে আলিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৯ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে ব্লোমফন্তেইনের গুডইয়ার পার্কে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বাধিক রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৬৪ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। জ্যাক ক্যালিসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে স্প্রিংবকের নেতৃত্বে থেকে ভারত গমন করেন। ২ মার্চ, ২০০০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১৭ ও ০/১৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। নিকি বোয়ে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭১ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১ জানুয়ারি, ২০০২ তারিখে ৩২ বছর ২৪৯ দিন বয়সে ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশে নিজ শহর জর্জে কার্গো উড়োজাহাজে ভ্রমণরত অবস্থায় ক্রাডক পিকে বিধ্বস্ত হলে প্রাণ হারান। এর দুই বছর পূর্বে বাজীকরদের কাছে তথ্য প্রদান ও পাতানো খেলায় অংশগ্রহণে সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়। এরফলে, ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন।

শুরুতে নয়াদিল্লি পুলিশের কাছ থেকে অভিযোগ আসলেও অস্বীকার করেন। পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের বিষয়ে মার্চ, ২০০০ সালে ভারতীয় বাজিকর সঞ্জীব চাওলা’র সাথে ফোনে কথোপকথন ধারন করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়, অধিনায়ক ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী পরবর্তী সময়কালে ক্রীড়া দূতের দায়িত্বে থাকায় খুব কমসংখ্যক ক্রিকেটপ্রেমীই তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন ও ভারতীয় তদন্তকে তেমন পাত্তা দেয়া হয়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ইউনাইটেড ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা আলী বাখের হান্সি ক্রোনিয়ে’র সমর্থনে এগিয়ে আসেন ও মন্তব্য করেন যে, তিনি প্রশ্নাতীতভাবেই ন্যায়পরায়ণতা ও সততার প্রতীক। ঘটনার চার দিন পর ভোর তিনটেয় ফোনে আলী বাখেরকে জানান যে, তিনি পুরোপুরি সৎ নন। তাৎক্ষণিকভাবে অধিনায়কত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তাঁকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একদিনের সিরিজের জন্যে দল গঠন করা হয়। এরপর, সরকার মনোনীত কিং কমিশনে সত্য উন্মোচিত হয় ও পাতানো খেলায় জুয়াড়ীদের সাথে জড়িত হয়ে পড়ার বিষয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বীকার করেন। এ সংবাদে ক্রিকেট বিশ্ব আকুলতা প্রদর্শনের চেয়ে বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। খেলার গুরুত্বতা অনেকাংশেই নিচুমুখী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, হান্সি ক্রোনিয়ের জীবনযাত্রা ও কর্মজীবন বিষময় হয়ে পড়ে।

২০০৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ইউই ক্রোনিয়ে নামীয় সন্তানের জনক।