১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কিছুটা দীর্ঘদেহী ও চটপটে উইকেট-রক্ষক হিসেবে স্ট্যাম্পের পিছনে দূর্দান্ত ভূমিকা রাখতেন। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের শুরুরদিকের উইকেট-রক্ষক ছিলেন ও নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৮০-এর দশকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ধ্রুপদীশৈলীর উইকেট-রক্ষক হিসেবে অবদান রাখলেও ব্যাট হাতে তেমন সফলতা পাননি। তবে, ঐ সময়ে দলগুলো মূলতঃ উইকেট-রক্ষণের অবদানের দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটাতো। এছাড়াও, দলে সর্বদাই আসা-যাবার পালায় অবস্থান করতেন। আরেক উইকেট-রক্ষক অমল সিলভা ব্যাট হাতে নিয়ে উন্নততর ভূমিকা রাখায় সর্বদাই দ্বারে কড়া নাড়তেন। শুরুতে আঘাতের কারণে দলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে, ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ উইকেট-রক্ষকদের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে দল থেকে বাদ পড়েন।
১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ১১ টেস্ট ও ৩১টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। মহেশ গুণাতিলেকের তৎকালীন নিষিদ্ধঘোষিত দক্ষিণ আফ্রিকা গমনের ফলে দলের প্রধান উইকেট-রক্ষকের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। এরফলে, ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড গমনার্থে শ্রীলঙ্কা দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। সোমাচন্দ্র ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফর করেন। ২ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন।
এরপর, একই সফরে ৪ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। প্রথম টেস্টে সাতজন অভিষেকধারী খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। মিত্র ওয়েতিমুনি, সুশীল ফার্নান্দো, রুমেশ রত্নায়েকে, শ্রীধরন জগন্নাথন, বিনোদন জন ও যোহন গুণাসেকেরা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ০ ও ৩ রান সংগ্রহ করেন এবং একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ওয়ারেন লিজের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৫ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
পরের খেলায় অমল সিলভাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তবে, শ্রীলঙ্কায় ফিরতি সফরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন-টেস্টের সবকটিতেই তাঁর অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৬ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২৮ ও ১০ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে রিচার্ড হ্যাডলি’র শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ইনিংস ও ৬১ রানে পরাজিত করে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
ওডিআইয়ে বিস্ময়করভাবে নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাট হাতে নিয়ে বেশ সফল ছিলেন। এ পর্যায়ে দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছেন। এ স্তরের ক্রিকেটে স্বাধীনভাবে খেলতেন ও দলে অবদান রাখতেন। নিচেরসারিতে তাঁর তুলনায় অন্যদেরকে নিষ্প্রভ করে রাখে।
১৯৮৩ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসরে শ্রীলঙ্কার সদস্যরূপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৫২ গড়ে রান তুলে শ্রীলঙ্কার পক্ষে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করেছিলেন। পুরনো ধাঁচের উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান ছিলেন। উইকেটের পিছনে সেরা দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটালেও টেস্টগুলোয় ব্যাট হাতে নিয়ে খুব কমই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ব্যাট হাতে কিছুটা সফলতার স্বাক্ষর রাখলেও কোনক্রমেই নির্ভরযোগ্যতার পরিচয় দেননি। ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ড সফরে আঘাতের কবলে পড়েন। ফলশ্রুতিতে, লর্ডস টেস্টে অমল সিলভাকে খেলানো হয় ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। পরবর্তী টেস্টগুলোয় অমল সিলভা আঘাতের কবলে পড়লে কিংবা অনীহা প্রকাশ করলে শূন্যতা পূরণে দলে অংশ নিতেন। তবে, ব্যাটিংয়ের মান বেশ নিম্ন পর্যায়ের ছিল।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে রঞ্জন মাদুগালে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেন। তবে, ডিন জোন্সের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০৮ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। শ্রীলঙ্কান প্রমিলা টেস্ট ক্রিকেটার রসঞ্জলী ডি সিলভা’র সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এরফলে দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় অংশগ্রহণকারী অপর দুই দম্পতির সাথে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অপর পাঁচ দম্পতির সাথে তালিকায় স্থান করে নেন। ১২ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে কলম্বোয় ৫২ বছর ৩৩২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। এরফলে, শ্রীধরন জগন্নাথন ও অনূঢ়া রানাসিংহের পর শ্রীলঙ্কার তৃতীয় টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। নভেম্বরের শুরুরদিকে মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন।
