Skip to content

৪ মার্চ, ১৯৩৭ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটের অনেক তারকা ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে কোনরূপ ব্যতিক্রম ছাড়াই নিজের সেরা খেলা উপহারে সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে পুরোটা সময় জুড়েই দেশের পক্ষে ইনিংসে উদ্বোধনে নেমেছিলেন ও দূর্দান্ত ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এরপর, দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুম থেকে ১৯৭১-৭২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৬২-৬৩ মৌসুম থেকে ১৯৭১-৭২ মৌসুম পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন।

১৯৬১ থেকে ১৯৭২ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩৯ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৭৪ ও ৫৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথের জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৭৪ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২ ও ৭৮ রান সংগ্রহসহ চারটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলা শেষ হবার মাত্র ২১ মিনিট পূর্বে সফরকারীরা ৪০ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ হয়। প্রসঙ্গতঃ এ জয়ের ফলে নিউজিল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো একটি সিরিজে দুই জয়ের সন্ধান পায়। এ সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটে ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ২ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ভারত দলের বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৯ ও ২১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২৭ মে, ১৯৬৫ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩২ ও ৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

নিউজিল্যান্ড দলকে উপর্যুপরী ১৯ টেস্টে নেতৃত্ব দেন। চারটি জয়ের বিপরীত সাতটিতে নিউজিল্যান্ড দল পরাজিত হয়। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড দল প্রথম জয়ের সন্ধান পায়। ইংল্যান্ড সফরে নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে নিউজিল্যান্ড দল কিছুটা সফলতা পায়। এছাড়াও, নিজ দেশে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অমিমাংসিত অবস্থায় সিরিজ ড্র করতে সক্ষমতা দেখায়। ভারতের মাটিতেও অমিমাংসিত অবস্থায় সিরিজ শেষ করেন।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে নিজ দেশে মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১২৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১৪৩ ও ১০ রান তুলেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

এ সিরিজের মাঝামাঝি সময়ে ব্যারি সিনক্লেয়ারের পরিবর্তে অধিনায়ক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৪৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২৩৯ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। দলের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেছেন। এছাড়াও, ১৯৬৮ সালে তৃতীয় কিউই ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতের বিপক্ষে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। ক্রাইস্টচার্চে অধিনায়ক হিসেবে নিজস্ব প্রথম টেস্টে ৯ ঘণ্টা ১৬ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ২৩৯ রান তুলেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে শিবনারায়ণ চন্দরপল ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর এ অনন্য রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ টেস্টে কিউইরা প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়। স্বাগতিক দল ৬ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

ভারতীয় বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেই অধিক সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নিজস্ব তিনটি শতকের সবগুলোই ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন। তন্মধ্যে, বোম্বেতে বিশ্বমানসম্পন্ন স্পিনারদের রুখে দিয়ে একট শতরান করেছিলেন।

১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে নিজ দেশে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৮ ও ৭১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

আঘাতের কারণে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। শুরুতে ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে মধ্যমা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাসত্ত্বেও ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে দলের নেতৃত্বে ছিলেন। সেখানে পিঠে আঘাত পান। ৯ মার্চ, ১৯৭২ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ৮ ও ১০ রান সংগ্রহ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেয়া ছিল। আঘাতের পর আট ইনিংস থেকে কেবলমাত্র একবার অর্ধ-শতরানের কোটা স্পর্শ করেছিলেন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সিইও হন। ক্রিকেটে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৭ সালে নববর্ষের সম্মাননায় ওবিই পদবী লাভ করেন। এছাড়াও, ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সময়কালে টেস্ট ও ওডিআইয়ে আইসিসি’র ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ পর্যায়ে ৯ টেস্ট ও ১৬টি ওডিআই পরিচালনা করেছিলেন।