১৮ আগস্ট, ১৯২০ তারিখে মিডলসেক্সের ফিঞ্চলে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষকের স্বীকৃতি লাভ করেছেন। ক্যান্টারবারিভিত্তিক কেন্ট কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬৭ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৫০-এর দশকের শেষদিক পর্যন্ত দেড় দশক স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করে কেন্ট ও ইংল্যান্ড দলের প্রধান চালিকাশক্তিতে নিজেকে পরিচিতি ঘটিয়েছিলেন। পঞ্চাশের কোটায় থেকেও প্রদর্শনী খেলাগুলোয় শিল্পসত্ত্বার অপূর্ব নিদর্শন গড়েন। প্রাণবন্তঃ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। মাঠে অবস্থানরত দলীয় সঙ্গীদের কাছ থেকে বাহ্বা কুড়াতেন। নিচেরসারিতে অবস্থান করে কার্যকর রান সংগ্রহ করেছেন। নিজ নামের পার্শ্বে দুইটি টেস্ট শতরান লিখিয়েছেন।
১৯৪৬ থেকে ১৯৫৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৯১ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে নিজ দেশে ইফতিখার আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৭ আগস্ট, ১৯৪৬ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। পিটার স্মিথের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় সফরকারীরা তাদের একমাত্র ইনিংসে ৩৩১ রান সংগ্রহ করলেও তিনি মাত্র একটি বাই-রান দিয়েছিলেন। তবে, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ওয়ালি হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২১ মার্চ, ১৯৪৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৪৭ সালে নিজ দেশে অ্যালান মেলভিলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৭ জুন, ১৯৪৭ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২ ও ৭৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ইয়ান স্মিথের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে একটি স্ট্যাম্পিং ও সমসংখ্যক ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জর্জ মানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ২ উইকেটে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১ জানুয়ারি, ১৯৫৭ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৬২ ও ১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ট্রেভর গডার্ডের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৩১২ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৫৯ সালে নিজ দেশে পঙ্কজ রায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৮ জুন, ১৯৫৯ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে সুরেন্দ্রনাথের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে একই স্ট্যাম্পিং ও দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণের সাথে নিজেকে জড়ান। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেয়ে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
লেন হাটন খেলায় ভিত্তি আনয়ণের পর তৃতীয় দিনের শুরুতে উইকেটে নামেন। ইংল্যান্ড দল ৫৭ রানে এগিয়ে থাকে ও হাতে ছিল পাঁচ উইকেট। উইজডেনে উল্লেখ করা হয় যে, নিখুঁতমানের খেলা উপহার দেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে টম গ্রেভনি’র সাথে দুই ঘণ্টা দশ মিনিটে ১৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন। নিজে করেন ১০৪ রান। মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বে অল্পের জন্যে শতক হাঁকাতে পারেননি। ঐ খেলায় ইংল্যান্ড দল ৮ উইকেটে জয় পেয়েছিল।
সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ২০.৪৭ গড়ে রান পেয়েছেন। পাশাপাশি, ১৭৩ ক্যাচ ও ৪৬ স্ট্যাম্পিং করেছিলেন। ১৯৫১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন। সিবিই উপাধীতে ভূষিত হন। নিজের সেরা দিনগুলোয় ব্রাইলক্রিম বয় হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করতেন। এছাড়াও, ডেনিস কম্পটন, লেন হাটন ও ট্রেভর ব্রেইলি’র সাথে স্লাজেঞ্জারের বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে অংশ নিতেন। অবসর গ্রহণের পর ১৯৫৯ সালে ‘আফটার আওয়ার্স’ টেলিভিশন ধারাবাহিক অভিনয় করেছেন।
৩ মে, ১৯৯৯ তারিখে নর্দাম্পটনে ৭৮ বছর ২৫৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
