৬ নভেম্বর, ১৯২১ তারিখে সাউথল্যান্ডের গোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৪৫-৪৬ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সর্বাপেক্ষা অনমনীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও, সর্বকালের সেরা ধীরলয়ের ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান। কার্যকর বোলার হিসেবে মাঝে-মধ্যে বলে সুইং আনতেন। অন্যান্য সময় অফ ও লেগ-স্পিনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। দীর্ঘ আঙ্গুলের কারণে প্রায় অসম্ভব ক্যাচগুলোকে স্লিপ অঞ্চলে মুঠোয় পুড়তেন।

ক্রিকেটের ন্যায় যুদ্ধেও যুদ্ধংদেহী মনোভাবের অধিকারী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রোমাঞ্চপূর্ণ সময় অতিবাহিত করেছেন। আরএএফে যোগ দিতে ল্যাঙ্কাস্টার্সে চলে যান। প্রায়শঃই বিপজ্জ্বনকভাবে মৃত্যুর কাছাকাছি থাকতেন। অবশেষে তাঁর বোমারু বিমান ভূপতিত হলে ২৩ বছর বয়সে জিওফ রাবোন প্যারাস্যুটে ফ্রান্সে নামেন। বন্ধুসূলভ ফরাসী পরিবারে যুদ্ধ শেষ হবার পূর্ব পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিলেন। কিথ মিলারের ন্যায় তিনিও হাসিখুশী, আমুদে জীবন অতিবাহিত করেছেন, বিয়ার পান ও গান ভালোবাসতেন।

সর্বকালের সেরা স্থবির ব্যাটসম্যানের পরিচিতি পান। এমনকি অ্যালেক ব্যানারম্যানের চেয়েও ধীরলয়ে রান সংগ্রহ করতেন। টেস্টে ৩১.২২ গড়ে ৫৬২ রান তুলেছেন। চার্লস ডেভিসের অভিমত, তাঁর স্ট্রাইক রেট ২১-২২ ছিল। একবার ২১৫ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে মাত্র ২৯ রান তুলেছিলেন। আরেকবার তিন ঘণ্টার অধিক সময় নিয়ে ১৮ রানের ইনিংস খেলেন। একমাত্র টেস্ট শতরান করতে ছয় ঘণ্টাধিক সময় ব্যয় করেন।

১৯৪৯ থেকে ১৯৫৫ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১২ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ২৭ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে ওয়াল্টার হ্যাডলি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরের মাধ্যমে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ১১ জুন, ১৯৪৯ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। হ্যারি কেভ ও ফ্রাঙ্ক মুনি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ০/৫৬ ও ০/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।

একই সফরের ২৩ জুলাই, ১৯৪৯ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৫ রান অতিক্রম করেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। এ ইনিংসেও ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩৩ ও ৩৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এ গ্রীষ্মে দলের শোচনীয় ফলাফলে তাঁর নেতিবাচক মনোবৃত্তি দলের প্রয়োজনে গড়ে উঠেছিল। এক থেকে সাত নম্বর অবস্থানের যে-কোনটিতেই ব্যাটিং করতে পারতেন। সর্বদাই বল আটকাতে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানতেন। দীর্ঘ ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে ফিরে আসার পর বলতেন, ‘এরফলে আরও কয়েকজন দর্শককে ক্রিকেট জগৎ হারালো।’ তাঁর খেলার ধরন দর্শকদের বিরক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করলেও দূর্বলমানের নিউজিল্যান্ড দলে এর গুরুত্বতা কোন অংশেই কম ছিল না। রিড তাঁর আত্মজীবনী ‘সোর্ড অব উইলো’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ‘তিনি মনেপ্রাণে দলে উজার করে খেলতেন, ক্রমাগত লড়াই করে গেছেন। তাঁর কয়েকটি টেস্ট ইনিংস চোখে পড়ার মতো ছিল।’

১৯৫২-৫৩ মৌসুমে নিজ দেশে জ্যাক চিদামের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকান দলের মুখোমুখি হন। ১৩ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৩/১১৬। খেলায় ৩/৬২ ও ১/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২৯ ও ৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। দলের সকলের কাছে জনপ্রিয়তা না পেলেও সকল ক্ষেত্রে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রেখে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। ডারবানে প্রথমবারের মতো টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ১০৭ ও ৬৮ রান তুলেন।

১ জানুয়ারি, ১৯৫৪ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে পৌছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৫৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এইচজে টেফিল্ডকে বিদেয় করে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৬২। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ৬/৬৮ ও ১/১৬ পান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এরপর আবারও তাঁকে দলের সঙ্কটময় মুহূর্তে অগ্রসর হতে হয়। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে প্রথম তিন ঘণ্টা টিকে থেকে জুটিতে ১৮ রান যুক্ত করেছিলেন। ফ্রাঙ্ক টাইসনের তোপে দলটি আবারও পরাজয়ের বৃত্তে প্রবেশ করে।

এক পক্ষকাল পর ২৫ মার্চ, ১৯৫৫ তারিখে অকল্যান্ড টেস্টে অংশ নেন। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে আবারও তাঁর দল ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়। এ পর্যায়ে নিউজিল্যান্ড দল দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬ রান তুলতে সমর্থ হয়েছিল। ৫৩ মিনিটে ৭ রান তুলে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছিলেন। এরপর আর তাঁকে নিউজিল্যান্ড দলে খেলতে দেখা যায়নি। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

৩৩ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন। পারিবারিক জীবন কাটাতে শেল অয়েলের চাকুরী করেন। অবসর গ্রহণের পর লর্ড কোবামস গভর্নর-জেনারেল একাদশ ও ডেনিস সিল্কের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। অকল্যান্ড ও জাতীয় দলের নির্বাচক হন। ১৯৪৯ সালের দলীয় সঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।

১৯ জানুয়ারি, ২০০৬ তারিখে ৮৪ বছর ৭৪ দিন বয়সে অকল্যান্ডে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | |

    হিউ ম্যাসি

    ১১ এপ্রিল, ১৮৫৪ তারিখে ভিক্টোরিয়ার বেলফাস্টের কাছাকাছি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করতেন। ১৮৭৭-৭৮ মৌসুম থেকে ১৮৯৫ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ১৮৮১…

  • | | |

    জর্জ থম্পসন

    ২৭ অক্টোবর, ১৮৭৭ তারিখে নর্দাম্পটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ক্রিকেটার, আম্পায়ার এবং কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৩ বছর বয়সে ওয়েলিংবোরা স্কুলের প্রথম একাদশে খেলেন। ১৮৯৫ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলায় অংশ নেন। পরের বছর থেকে স্বরূপ…

  • | |

    নিপ পেলিও

    ২১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট পিরি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন। ১৯২০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘নিপ’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। অ্যাডিলেডভিত্তিক সেন্ট পিটার কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯১২ সালে ক্রিকেটে সেন্টস দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফুটবলেও পর্যাপ্ত…

  • |

    রড ল্যাথাম

    ১২ জুন, ১৯৬১ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখান। ১৯৯০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সময়কালে সব মিলিয়ে চারটিমাত্র…

  • | | |

    বব ওয়াট

    ২ মে, ১৯০১ তারিখে সারের মিলফোর্ড হিদ হাউজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী শৌখিন ও বিখ্যাত ক্রিকেটার এবং প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কভেন্ট্রিভিত্তিক রাজা অষ্টম হেনরি স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন রয়্যাল এয়ার ফোর্সের পাইলট অফিসার হিসেবে…

  • |

    জনি ব্রিগস

    ৩ অক্টোবর, ১৮৬২ তারিখে নটিংহ্যামশায়ারের সাটন-ইন-অ্যাশফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘বয়’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। উইকেট লাভে সক্ষমতাসহ দীর্ঘক্ষণ ধরে একাধারে বোলিং করতে পারতেন। ছোটখাটো গড়নের অধিকারী হলেও পেসের বৈচিত্র্যতা আনয়ণের ফলে…