২১ অক্টোবর, ১৯৪০ তারিখে ইয়র্কশায়ারের ফিৎজউইলিয়াম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে অন্যতম সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। প্রায় ২০ বছর ইংল্যান্ডের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। প্রথম ইংরেজ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৮০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। কলিন কাউড্রে ও ওয়ালি হ্যামন্ডের সাথে তিনিও ২২ শতক হাঁকিয়ে ইংরেজ শতকধারী টেস্টে ক্রিকেটারের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন।
‘ফাইরি’, ‘বয়েকস’ কিংবা ‘থ্যাচ’ ডাকনামে পরিচিতি জিওফ বয়কট ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। হেমসওয়ার্থ গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার ও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নর্দার্ন ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৬২ সাল থেকে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন। ব্রামল লেনকে নিজের সেরা মাঠ হিসেবে বিবেচনায় আনেন। ১৯৭৩ সালে সেখানেই তিনি ইয়র্কশায়ার বনাম ল্যাঙ্কাশায়ারের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। খাঁটিমানের রক্ষণব্যূহ গড়ে তুলে পিছনের পায়ে ভর রেখে কভার ও অন-ড্রাইভে অংশ নিতেন।
১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৮২-৮৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১০৮ টেস্ট ও ৩৬টি ওডিআইয়ে অংশ নেন। টেস্টগুলো থেকে ২২ শতক সহযোগে ৪৭.৭২ গড়ে ৮১১৪ রান সংগ্রহ করেছেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পাচ্ছেন। এ টেস্টগুলোয় তাঁর দল মাত্র ২০টিতে পরাজয়বরণ করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি সুন্দর সূচনা লাভে ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ড দল পরাজয়ের মুখ দেখতো।
১৯৬৪ সালে নিজ দেশে বব সিম্পসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৪ জুন, ১৯৬৪ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক ঘটে। এর মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৪৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে মাইক স্মিথের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৩৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১১৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১১৭ ও ৭ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৬৯ ও ১/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে মাইক স্মিথের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি উভয় ইনিংসে ৪ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৭ সালে লিডসে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে ২৪৬ রানের অপরাজিত দ্বি-শতক হাঁকান। পরবর্তীতে এটিই তাঁর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহে পরিণত হয়।
১৯৭১ সালে নিজ দেশে ইন্তিখাব আলমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৮ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১১২ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ২৫ রানে জয় তুলে নিলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৭৩ সালে নিজ দেশে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৫ জুলাই, ১৯৭৩ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছিলেন। খেলায় সফরকারী ইনিংস ও ১ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৭৭ সালের আগস্ট মাসে এলভিস প্রিসলি’র মৃত্যুর দিনে হেডিংলিতে তিনি তাঁর শততম শতক হাঁকানোর মাধ্যমে ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ করায়ত্ত্বে অগ্রসর হয়েছিলেন। ঐ সিরিজে তাঁর দল ৩-০ ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল।
১৯৭৯ সালে নিজ দেশে শ্রীনিবাস বেঙ্কটরাঘবনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩০ আগস্ট, ১৯৭৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি ৩৫ ও ১২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সুনীল গাভাস্কার দ্বি-শতক হাঁকানো সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের অন্যতম সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১ জানুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৮ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। দলনায়কের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
নিজেকে যদি দল থেকে সড়িয়ে নিয়ে না আসতেন, তাহলে হয়তোবা আরও খেলোয়াড়ী জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারতেন। অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে মনোনীত না করে রে ইলিংওয়ার্থ ও মাইকে ডেনিসকে ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্বের সুযোগ দিলে তিনি মনক্ষুণ্ণ হন। এ পর্যায়ে ৩০ টেস্ট খেলা থেকে বঞ্চিত হন।
২০০৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমের উদ্বোধনী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ৫৫জন খেলোয়াড়ের অন্যতম ছিলেন। সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র পদত্যাগের দিন নাইট পদবী লাভ করে কিছুটা বিতর্কিত হন। হৃদপিণ্ডের বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের পর অবসর গ্রহণের কথা চিন্তায় আনেননি। ৮০তম জন্মদিন উদযাপনের পর ১২ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে শততম শতক হাঁকানো ব্যাট ক্রিস্টিস অনলাইন নিলামে £৪০,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিংয়ে বিক্রি করে দেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকর্মে জড়িয়ে পড়েন ও তুখোড় ধারাভাষ্যকার হিসেবে সফলতা পান। বিবিসি’র টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে অংশ নেন। কণ্ঠনালীতে চিকিৎসা করতে হয়। সকলের সহায়তায় উপর্যুপরী রেডিওথেরাপি নিয়ে পুণরায় ধারাভাষ্যকর্মে যোগ দেন।
