| |

গ্যারি সোবার্স

২৮ জুলাই, ১৯৩৬ তারিখে বার্বাডোসের চেলসী রোড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স কিংবা বামহাতে রিস্ট-স্পিন বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী তিনি। ১৯৫২-৫৩ মৌসুম থেকে ১৯৭৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে খেলেছিলেন। সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ডন ব্র্যাডম্যানের মর্যাদা উত্তরোত্তর হুমকির সম্মুখীন হলেও বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ অল-রাউন্ডার হিসেবে কেউ গারফিল্ড সোবার্সের দিকে তাকাতে সাহস করেনি। বামহাতে অর্থোডক্স, রিস্ট স্পিন ও ফাস্ট মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, মাঠের যে-কোন স্থানে দক্ষ ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

শামন্ট ও থেলমা সোবার্স দম্পতির সন্তান। সেন্ট মাইকেলের বে ল্যান্ড এলাকায় এক হাতে অতিরিক্ত আঙ্গুল নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে অবশ্য তা নিষ্ক্রান্ত করা হয়েছিল। দ্বীপের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর কাছে ‘স্যার গ্যারি’ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। প্রকৃত অর্থেই কিংবদন্তীতুল্য ক্রিকেটার ছিলেন। বার্বাডোসের একমাত্র জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিতি পান। চরম দারিদ্রতা ও অনাদরে-অবহেলায় বড় হন। পরবর্তীকালে বিশ্ববাসীর কাছে ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অল-রাউন্ডারের স্বীকৃতি পান। ক্রিকেটের পাশাপাশি অনেকগুলো ক্রীড়ায় দক্ষ ছিলেন। অ্যাথলেটিক্সের অধিকাংশ বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। বার্বাডোসের পক্ষে গল্ফ, ফুটবল ও বাস্কেটবলে অংশ নেন।

১৩ বছর বয়সে বার্বাডোস ক্রিকেট লীগ প্রতিযোগিতায় কেন্ট দলের খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। এরফলে, পুরনো দলের সাথে তরুণ হিসেবে খেলার বৃহৎ সুযোগ ঘটে। ওয়ান্ডারার্সে খেলাকালীন পুলিশ দলের অধিনায়ক ইন্সপেক্টর উইলফ্রেড ফারমারের কাছে তাঁর সহজাত প্রতিভা ধরা পড়ে। ১৬ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর পুলিশ ফার্স্ট ডিভিশন দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন। একই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্যরূপে ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে বার্বাডোসে যাচাই-বাছাইয়ের খেলায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন। শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে প্রায়শঃই বোলার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতেন। তাসত্ত্বেও, চার বছর পর অনন্য টেস্ট রেকর্ডের সাথে স্বীয় নামকে যুক্ত করেন। দুই দশকব্যাপী আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।

ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি তাঁর সময়ে সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। বোলার হিসেবে তাঁর তুলনায় অনেকেই এগিয়ে থাকলেও তাঁর সমকক্ষ ছিল না। নতুন বল নিয়ে দ্রুতলয়ে বোলিং করতেন। বল পুরনো হয়ে পড়লে প্রচলিত ধাঁচে স্পিন বোলিং করতেন। ফিল্ডার হিসেবে স্লিপ অঞ্চলে কিংবা লেগ-স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থাকতেন। নিঃসন্দেহে ঐ যুগের সেরা অল-রাউন্ড ফিল্ডার ছিলেন; এমনকি সর্বকালের সেরাদের কাতারেও ছিলেন।

বিরাট ক্রিকেট প্রতিভার অধিকারী হিসেবে ক্রিকেটের সকল স্তরে প্রত্যাশার অধিক অতি উচ্চমানের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। খুব কমসংখ্যক ক্রিকেট বিশ্লেষকই দ্বি-মত পোষণ করবেন যে, আধুনিক ক্রিকেট তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ অল-রাউন্ডার নন। ব্যতিক্রমধর্মী টেস্ট ব্যাটিং গড়ে লক্ষ্য করা যায় যে তিনি কিরূপ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

মারমুখী ভঙ্গীমায় সকল ধরনের শট খেলায় অভ্যস্ত ছিলেন। তবে, অফ-সাইডের দিকেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যেমন সেরা ছিলেন, ঠিক তেমনি বোলার হিসেবেও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। বামহাতি অর্থোডক্স ও রিস্ট স্পিন – উভয় ধাঁচের বোলিংয়েই সিদ্ধহস্তের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও উদ্বোধনী বোলার হিসেবে চমৎকার ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন। উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করলেও সমানতালে কিন্তু আশ্চর্যান্বিত হবার কোন কারণ ছিল না যে মাঠের যে কোন অবস্থানেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন।

১৯৫৪ থেকে ১৯৭৪ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৯৩ টেস্ট ও একটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে নিজ দেশে লিওনার্ড হাটনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৩০ মার্চ, ১৯৫৪ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত ১৭ বছর বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্যরূপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নিয়ে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। শুরুতে দলে বোলার হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। খেলায় তিনি ৪/৭৫ ও ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৪* ও ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে ২-২ ব্যবধানে সিরিজটি ড্রয়ে পরিণত হয়।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ডেনিস অ্যাটকিনসনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২৭ রান সংগ্রহসহ খেলায় একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ৭১ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

প্রথম ২৬ টেস্টের মধ্যে ২১ বছর ২১৬ দিন বয়সে রেকর্ড ভঙ্গকারী ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অপরাজিত ৩৬৫ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস উপহার দেন। ঐ সময়ে এটিই টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের বিশ্বরেকর্ড ছিল। এরফলে, ১৯৩৮ সালে স্যার লেন হাটনের সংগৃহীত ৩৬৪ রানের রেকর্ড ম্লান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, ১৯৯৪ সালে অ্যান্টিগুয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ব্রায়ান লারা ৩৭৫ ও আবারও ৪০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দূর্দান্ত কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। দলের সংগ্রহ ৭৯০/৩ থাকাকালীন দলনায়ক জেরি আলেকজান্ডার ইনিংস ঘোষণা করেন। অদ্যাবধি ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর এ সংগ্রহটি সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। এছাড়াও, অল-রাউন্ডারদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। পাশাপাশি, আরও কয়েকটি ব্যক্তিগত অর্জনের সাথে নিজেকে চিত্রিত করেন।

তদুপরি, এর কয়েক বছর পরই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ওভার থেকে ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে দূর্ভাগা ম্যালকম ন্যাশের এক ওভার থেকে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে উপর্যুপরী ছয়টি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন। এ সকল বিষয়াদি বিবেচনায় এনে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের পর উইজডেন কর্তৃক শতাব্দীর সেরা ক্রিকেটার হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক সেরা ক্রিকেটারের ন্যায় ব্যতিক্রমী রেকর্ডের সাথেও নিজেকে যুক্ত করেছেন। ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে একটিমাত্র খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ছয় বল মোকাবেলা করে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছেন। তবে, ঐ খেলায় একটি উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন।

১৯৫৯-৬০ মৌসুমে নিজ দেশে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে কিংস্টনের সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৪৭ ও ১৯ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১৪ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ক্রিকেট মাঠে অবাধে বিচরণ করেছেন। উপস্থিত দর্শকদের কাছে পরবর্তী করণীয় কি হতে পারে তা বিস্ময়ের কারণে পরিণত করেন। অনবদ্য ও দর্শনীয় ক্রিকেট খেলার ধরনের মাধ্যমে ব্যাট, বল, মাঠ, উইকেট-রক্ষণ ও পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে পরিচিতি ঘটান। অধিনায়ক হিসেবেও উদ্যমশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। পোর্ট অব স্পেনে উদারচিত্তে ইনিংস ঘোষণায় ইংল্যান্ডের সিরিজ নির্ধারণী খেলায় জয়কালেও উদ্যমতা নিয়ে দলকে পরিচালনা করেছিলেন।

অনেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান খেলোয়াড়ের ন্যায় তিনিও বৈশ্বিক পরিচিতি পান। ১৯৭১ সালে বহিঃবিশ্ব দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়ায় বিপক্ষে ২৫৪ রানে ঝলঝলে ইনিংস খেলে ব্যাটিং কিংবদন্তী ডন ব্র্যাডম্যানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়ান। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক ডেনিসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৩০ মার্চ, ১৯৭৪ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ২০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪৪ ও ২/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ২৬ রানে জয় পেলে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে শেষ করতে সক্ষম হয়।

হাঁটুর আঘাতের কারণে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হন। ডন ব্র্যাডম্যানকে যদি ক্রিকেট ‘মাঠের সেরা ব্যাটসম্যান’ হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলে গারফিল্ড সোবার্সকে ‘সকল ক্রিকেটারের সেরা’ হিসেবে পরিগণিত করা হবে। তাঁর সৃষ্ট রেকর্ডগুলোর মাধ্যমেই এর সত্যতা প্রকাশ পায়। এছাড়াও, অবসর গ্রহণের পর নৈশভোজন পরবর্তী বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি খুবই ভালোমানের ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। অবসর গ্রহণকালীন টেস্টে ৫৭.৭৮ গড়ে ৮০৩২ রান তুলে তৎকালীন ব্যক্তিগত সর্বমোট টেস্ট রানের রেকর্ড গড়েছিলেন। পাশাপাশি ৩৪.০৩ গড়ে ২৩৫ উইকেট লাভে স্বীয় প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন। এ সময়ে টেস্ট খেলাগুলো অনিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো ও বোলারদের মানও যথেষ্ট মানসম্পন্ন ছিল। বামহাতে মিডিয়াম পেস ও বামহাতে স্পিন – উভয় ধরনের বোলিংয়েই সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। এছাড়াও, ১০৯টি ক্যাচ মুঠোয় পুড়ে ফিল্ডার হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছিলেন। ১৬০ ইনিংস থেকে প্রাপ্ত ২৬ শতকের বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত অল-রাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের ২৮০ ইনিংসে সংগৃহীত ৪৫ শতকের তুলনা করলে দেখা যায় যে, গ্যারি সোবার্স ১৬.৩% ও জ্যাক ক্যালিস ১৬.১% শতরান করেছিলেন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী।

৬০ টেস্টে এলআর গিবসের বোলিং থেকে তিনি সর্বাধিক ক্যাচ নেয়ায় যে-কোন বোলারের নির্দিষ্ট ফিল্ডারের সহায়তায় সর্বাধিক ক্যাচ নেয়ার রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে, ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মার্ক টেলর ৫৭ টেস্টে শেন ওয়ার্নের বোলিং থেকে ৪০তম ক্যাচ মুঠোয় পুড়ে রেকর্ডটি নিজেদের করে নেন।

ক্রিকেটবিষয়ক বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তন্মধ্যে, ১৯৬৭ সালে শিশুতোষ ‘বোনাভেঞ্চার এন্ড দ্য ফ্ল্যাশিং ব্লেড’ এবং একই সালে জে.এস. বার্কারের সাথে ‘এ হিস্ট্রি অব ক্রিকেটে ইন দি ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ উপন্যাস লিখেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ভারত সফরে অঞ্জু মহেন্দ্রু নাম্নী ভারতীয় অভিনেত্রীর সাথে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ সালে প্রু কার্বি নাম্নী অস্ট্রেলীয় রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির ম্যাথু ও ড্যানিয়েল নামীয় দুই পুত্র রয়েছে। এছাড়াও, জেনেভিভ নাম্নী দত্তক কন্যা রয়েছে। ১৯৮৪ সালে তাঁরা পৃথকভাবে বসবাস করতে থাকেন ও ১৯৯০ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। তবে, বৈবাহিক সূত্রে তিনি দ্বৈত অস্ট্রেলীয় নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।

১৯৬৯ সালে ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে সম্প্রদায়ের মাঝে একতা আনয়ণে চেষ্টারত অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ১৯৭৪ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার সম্মাননা লাভের পাশাপাশি ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। ২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃক শতাব্দীর সেরা পাঁচজন ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে মনোনীত হন। ৯ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে বিশিষ্ট ক্রিকেট বিশ্লেষক অনন্ত নারায়ণন তাঁকে টেস্টের শীর্ষ অল-রাউন্ডার হিসেবে চিত্রিত করেছেন।

তাঁর সম্মানার্থে ২৮ এপ্রিল, ২০০২ তারিখে সেন্ট মাইকেলের ওয়াইল্ডি এলাকায় কার্ল ও ভার্জিল ব্রুডহাগেনের নেতৃত্বে দেড় টন ওজন ও ১২ ফুট লম্বা (ভিত্তিসহ উচ্চতা ২০ ফুট) ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। হিরোজ ডে সেলিব্রেশনের অংশ হিসেবে আবক্ষ উন্মোচন করা হলেও পরবর্তীতে ১৯ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে বার্বাডোসের কেনসিংটন ওভাল ফ্যাসিলিটিতে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক বর্ষসেরা খেলোয়াড়কে বার্ষিকাকারে প্রদান করা হয়।

Similar Posts

  • |

    রবিন সিং

    ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে ত্রিনিদাদের প্রিন্সেস টাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে অল-রাউন্ডার হিসেবে ভারত দলে খেলেছেন। ১৯৯০-এর দশকে ওডিআইয়ে একাধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। সচরাচর মাঝারিসারিতে ব্যাট হাতে মাঠে নামতেন ও শেষদিকের…

  • | |

    মারে বিসেট

    চিত্র – মারে বিসেট নাম মারে বিসেট ইংরেজ নাম Murray Bisset পূর্ণাঙ্গ নাম মারে বিসেট অন্য নাম এম বিসেট, স্যার মারে বিসেট পদবী নাইট জন্ম ১৪ এপ্রিল, ১৮৭৬পোর্ট এলিজাবেথ, কেপ প্রভিন্স মৃত্যু ২৪ অক্টোবর, ১৯৩১সলসবারি, রোডেশিয়া উচ্চতা — পরিবার গ্লেডিজ ভায়োলেট ডিফোর্ড (স্ত্রী)আর্চিবল্ড হ্যামিল্টন মারে (পুত্র) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান — ব্যাটিং ডানহাতি বোলিং স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স ফিল্ডিং…

  • |

    ডেনিস মরকেল

    ২৫ জানুয়ারি, ১৯০৬ তারিখে কেপ প্রভিন্সের প্লামস্টিড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘ ও শক্ত-মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন। চমৎকারভাবে বলকে অফের দিকে ঠেলে দিতেন। এছাড়াও, যে-কোন ধরনের বোলিংয়ের…

  • |

    তানজিম হাসান সাকিব

    ২০ অক্টোবর, ২০০২ তারিখে সিলেটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। পাশাপাশি, ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২০২০-২১ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে সিলেট বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সিলেট স্ট্রাইকার্স, লিজেন্ডস অব…

  • |

    চামারা সিলভা

    ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে পানাদুরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে বাসনাহীরা সাউথ, ব্লোমফিল্ড ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও,…

  • | | |

    মার্ক বাউচার

    ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে কেপ প্রভিন্সের ইস্ট লন্ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ভার্ডন…