ফজল মাহমুদ
১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৭ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের সেরা বোলারদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করেছেন। আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা রেখে গেছেন। হার না মানার মানসিকতা নিয়ে লড়াকু চিত্তে খেলেছেন। ম্যাটিং উইকেটে দূর্দান্তভাবে সফল ছিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে ও প্রায় একাকী নিজ কাঁধে নিয়ে বোলিং আক্রমণ কার্য পরিচালনা করে গেছেন। ১৯৫০-এর দশকে পাকিস্তানী ক্রিকেটের সূচনালগ্নে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় জয়ে উজ্জ্বীবনী শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। টেস্টে পাকিস্তানের শুরুরদিকের সাফল্যে প্রধান ভূমিকা রাখেন। পাকিস্তান দল সন্দেহাতীতভাবে তাঁর কাছ থেকে যথেষ্ট উপকৃত হয়েছে। যদি তিনি না খেলতেন তাহলে হয়তোবা ভারতের ন্যায় প্রথম টেস্ট জয়ের জন্য ২০ বছর কিংবা নিউজিল্যান্ডের ন্যায় ২৬ বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হতো, একই ভাগ্য বরণ করতে হতো।
আধুনিককালের ক্রিকেটার শোয়েব আখতার তাঁকে ‘আলোর দিশারীরূপে’ আখ্যায়িত করেছেন। দীর্ঘদেহী ও সুদর্শন দেহের অধিকারী হিসেবে পরিপাটি চুলের আদর্শ বাহক ছিলেন। পাকিস্তানের নিজস্ব ‘ব্রাইলক্রিম বয়’ হিসেবে বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিয়েছিলেন। কাট ও সিম সহযোগে নিয়মিতভাবে পেস বোলিং করতেন। বোলিংয়ের ধরন ও দম ধরে রাখার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের অ্যালেক বেডসারের সাথে তুলনায় নিয়ে আসা হতো। ১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে প্রত্যেক দলের বিপক্ষে দূর্লভ জয়ের সম্মাননায় অংশ নেন। অধিকাংশ বিজয়েই তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
খ্যাতনামা ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক গুলাম মোহাম্মদের সন্তান ছিলেন ও তাঁকে খেলার প্রতি অনুরক্ত করতে ব্যাপকভাবে সহায়তার হাত প্রশস্ত করেছেন। তাঁর পরিবার ১৯২০-এর দশকে গুজরাত থেকে অভিবাসিত হয়ে লাহোর নগরে বসতি গড়েন। মিন্টু পার্কে গভর্নমেন্ট কলেজ ও ইসলামিয়া কলেজের খেলা দেখতে নিয়ে যেতেন। কলেজ দলে খেলে তাৎক্ষণিক প্রভাব বিস্তার করেন।
১৯৪৩-৪৪ মৌসুম থেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে লাহোর, নর্দার্ন ইন্ডিয়া ও পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ভারত বিভাজনের পূর্বে রঞ্জী ট্রফিতে নর্দার্ন ইন্ডিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম অংশ নেন। তাঁর লেগ-কাটারে অনেক ব্যাটসম্যান ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৪৪-৪৫ মৌসুমে চতুর্দলীয় প্রতিযোগিতায় উত্তর অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৯/৮৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।
১৯৫০-এর দশকে পাকিস্তানে স্থাপিত কৃত্রিম পিচে তাঁকে মোকাবেলা করা বেশ কষ্টকর ছিল। ঐ সময়ের অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান নীল হার্ভে তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, ম্যাটিং উইকেটে ‘বলকে কথা বলাতে পারতেন’।
১৯৫২ থেকে ১৯৬২ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৩৪ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১৬ অক্টোবর, ১৯৫২ তারিখে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে খেলেন। খান মোহাম্মদ ও আমির ইলাহী ব্যতীত বাদ-বাকী সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সফরকারীরা ইনিংস ও ৭০ রানের ব্যবধানে পরাভূত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। ঐ টেস্টে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। ২/৯২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২১* ও ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, লখনউয়ে অনুষ্ঠিত পাটজাত ম্যাটিং উইকেটে দারুণ খেলেন।
পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ইনিংস ও ৪৩ রানের জয়ে ১২ উইকেট দখল করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭/৪২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। খেলায় ৯৪ রান খরচায় ১২ উইকেট দখল করেন। সব মিলিয়ে ঐ সফরে ২৫.৫১ গড়ে ২০ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২৮.৮৩ গড়ে ১৭৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
এরপর, ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম ইংল্যান্ড সফরে পুণরায় ১২ উইকেট পান। ওভাল টেস্টে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে পাকিস্তানকে নাটকীয়ভাবে ২৪ রানে জয়ে এনে দিয়ে সিরিজে সমতায় ফেরান। প্রথম ইনিংসে ৩০ ওভারে ৬/৫৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। মাত্র ১৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ১০৯/২ থাকা অবস্থায় শেষ আট উইকেটে মাত্র ৩৪ রান যোগ করতে সমর্থ হয়েছিল। মাঝারিসারিতে ভাঙ্গন ধরান তিনি। আবারও ৬/৪৬ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।
জন আর্লট খেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মন্তব্য করেন যে, ‘খেলাটি সন্দেহাতীতভাবে ফজল মাহমুদের খেলা নামে পরিচিতি পাবে। তাঁর বোলিং ভঙ্গীমা পুরোপুরি একই ধরনের ছিল না। তবে, তিনি অসম্ভব শক্তিমত্তা নিয়ে শারীরিক সুস্থতা বজায় রেখে অনেকাংশে পুলিশের ন্যায় গড়নের অধিকারী ছিলেন। অনেকভাবেই ফাস্ট-মিডিয়াম বোলারদের পথিকৃতের ভূমিকায় অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁর নিশানা বরাবর বোলিং ক্রমাগত নিখুঁত ধরনের ছিল। তিনি যথেচ্ছভাবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেচেন। দম ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চিত্তে ভেঙ্গে না পড়ার মানসিকতাসম্পন্ন ছিলেন ও দলকে খেলায় ফেরান।’ ইংল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট বিজয় ছিল ও যখন অপরাপর টেস্টভূক্ত দলগুলো পাকিস্তানের চেয়ে পূর্বেই এ স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিল ও নিজেদের সামলাতে ব্যস্ত, তখন এ অর্জনটি বিশেষত্বের দাবীদার। প্রথম ২৪ টেস্ট থেকে সব মিলিয়ে ১১৪ উইকেট দখল করেছিলেন। ঐ খেলাগুলোতে পাকিস্তানের প্রাপ্ত উইকেটের প্রায় ৪০% ছিল।
উপমহাদেশের ম্যাটিং উইকেটে তাঁর ভূমিকা ছিল দূর্দমনীয়। অসম্ভব দম ও উভয় দিক দিয়েই বলে সিম আনয়ণে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। কিছু বিস্ময়কর ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখে নিজেকে ইতিহাসের পর্দায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। ইংল্যান্ড সফর শেষে দুই বছর পর ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ড সফর শেষে পাকিস্তানে যাত্রা বিরতি নেয়। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ইয়ান জনসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। সফরকারী দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের অভিষেক টেস্টে দূর্দান্ত খেলেন। খেলাটিকে আবারও কব্জায় নিয়ে নেন। ১১ অক্টোবর, ১৯৫৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্টটিতে ১১৪ রান খরচায় ১৩ উইকেট দখল করে দলকে জয় এনে দেন। পরবর্তীতে, এটিই টেস্টে তাঁর সেরা বোলিং ছিল। প্রথম ইনিংসে ৬/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করালে অস্ট্রেলিয়া দল মাত্র ৮০ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭/৮০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লে পাকিস্তান দল নয় উইকেটে বিজয়ী হয়। বলকে উভয় দিক দিয়েই ফেলেন ও ব্যাটসম্যানদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন।
উইজডেন এশিয়া ক্রিকেটে পাকিস্তানী টেস্ট ক্রিকেটার ইমতিয়াজ আহমেদ এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন যে, ‘মিডল ও অফ-স্ট্যাম্প বরাবর বল ফেলেন। এরপর, নিপুণতার সাথে লেগ-স্ট্যাম্পের কাছাকাছি সিম সহযোগে বোলিং করেন। এরফলে, ব্যাটসম্যানেরা বেশ অস্বস্তিতে পরে যায়। প্রথম ইনিংসে তাঁর পুরো এক ওভার বল মোকাবেলা করে কিথ মিলার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাননি।’ উইজডেনে মন্তব্য করা হয় যে, তাঁর সুইংয়ে বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায়। লেগ-কাটার ও ব্রেকব্যাকের সংমিশ্রণ ছিল। এরপর থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বভার বহন করতে থাকেন। কিংবদন্তীতুল্য অস্ট্রেলীয় লেগ-স্পিনার রিচি বেনো মন্তব্য করেন যে, দুইবার তিনি দ্রুততম বল ছুঁড়েছিলেন। বলকে তিনি স্বাভাবিকের চেয়েও অধিক স্পিন আনয়ণ করতে পারতেন। তাঁর বোলিংয়ের ধরন অনেকাংশেই অ্যালেক বেডসারের সাথে মিলে যেতো। অপরদিকে, নেভিল কারডাস তাঁকে সিডনি বার্নসের সাথে তুলনায় এনেছিলেন।
সদা-সর্বদা ধূমপানে অভ্যস্ত ছিলেন। তাসত্ত্বেও সাধারণমানের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বনে উচ্চমানের শারীরিক সচেতনতা ও দম নিয়ে অগ্রসর হতেন। বলা হয়ে থাকে যে, বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ভোর সাড়ে চারটা থেকে ১০ মাইল জগিং করতেন। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম তিন টেস্টে ২৫০ ওভার বোলিং করেন। সব মিলিয়ে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩২০ ওভার বোলিং করেছিলেন। চূড়ান্ত টেস্টেও আট উইকেট দখল করেছিলেন ও পাকিস্তানের বিজয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। কিংস্টনের সাবিনা পার্কে গ্যারি সোবার্সের তৎকালীন অপরাজিত ৩৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ডকালীন তিনি ৮৫ ওভার বোলিং করেছিলেন। কেবলমাত্র চারজন বোলার ঐতিহাসিক টেস্টটিতে তাঁর তুলনায় অধিক বোলিং করলেও সকলেই স্পিনার ছিলেন। ঐ টেস্টে পাকিস্তান দল ইনিংস ও ১৭৪ রানের ব্যবধানে পরাভূত হয়েছিল।
পরের মৌসুমে নিজস্ব ২২তম টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে প্রথম পাকিস্তানী বোলার হিসেবে এ কৃতিত্বের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল পরবর্তীতে পাকিস্তান সফরে আসে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১০০ রান খরচায় ১২ উইকেট তুলে নেন। এরফলে, দলকে জয় এনে দেয়াসহ সিরিজে সমতা আনেন।
পরবর্তীতে, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন ও স্বল্প সফলতা পান। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে অধিনায়কত্বের দায়ভার কাঁধে চলে আসে। আব্দুল হাফিজ কারদারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে দশ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নভেম্বর, ১৯৫৯ সালে অস্ট্রেলিয়া দল আবারও পাকিস্তান সফরে আসে। এ সিরিজটি তিন-টেস্ট নিয়ে গঠিত ছিল। খুব সহজেই তাঁরা স্বাগতিক দলকে ২-০ ব্যবধানে পরাভূত করে। এরপর পাকিস্তান দল ভারত সফরে যায়। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের সবকটিই ড্রয়ে পরিণত হয়। তাঁর নেতৃত্বের বিষয়ে সমালোচনা হতে শুরু করে ও অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
১৯৬২ সালে জাভেদ বার্কি’র নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের ইংল্যান্ড সফর থেকে তাঁকে বাদ দেয়া হয়। তবে, সফররত দলটিতে আঘাতপ্রাপ্ত বোলারদের মাঠের পার্শ্বে অবস্থানের কারণে তাঁকে পুণরায় দলে যুক্ত করা হয়। কিন্তু, ১৯৫৪ সালের সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটাতে পারেননি। ১৬ আগস্ট, ১৯৬২ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ২/১৯২ ও ০/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১০ উইকেটে পরাজিত হলে সফরকারীরা ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ইংল্যান্ড সফর শেষে অবসর গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৮.৯৬ গড়ে উইকেট পেয়েছিলেন। ৩৪ টেস্টে অংশ নিয়ে ২৪.৭০ গড়ে ১৩৯ উইকেট দখল করেছেন। ওভার প্রতি ২-এর অল্প গড়ে রান খরচ করেন। চারবার টেস্টে দশ উইকেট ও তেরোবার পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। অবসর গ্রহণের পর আরও দুই বছর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সক্রিয় ছিলেন।
পাকিস্তানের প্রথম তারকা ব্যাটসম্যানের খ্যাতি পাওয়া হানিফ মোহাম্মদ মন্তব্য করেন যে, ‘তিনি অত্যন্ত দয়ালু প্রকৃতির ছিলেন। সর্বদাই, তাঁর উপদেশ গ্রহণে আগুয়ানদেরকে সহায়তার হাত প্রশস্ত করতেন। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের যাত্রার পর থেকে সবগুলো জয়েই সন্দেহাতীতভাবে অংশ নিয়ে ঋণী করে গেছেন।’
ভারতের পক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ভারতীয় অধিনায়ক পতৌদির নবাব তাঁকে ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে দলের সদস্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, অপরাপর দল নির্বাচকমণ্ডলী বয়সে খুবই কম বিবেচনায় এনে তা নাকচ করে দেন। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্যে মনোনীত হন। কিন্তু, ভারত বিভাজনের ফলে তিনি পাকিস্তানকেই বেছে নেন।
নতুন রাষ্ট্রের টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্তিতে নিজেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের বিপক্ষে খেলেন ও সিলন গমনের জন্যে মনোনীত হন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে করাচীতে সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশ নেন। ম্যাটিং উইকেটে ৬/৪০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ও দলকে জয় এনে দেন। অনুকূল ফলাফল টেস্টের মর্যাদায় দারুণ ভূমিকা রাখেন বলে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ধারনা। এরফলে, লর্ডসে পাকিস্তানের যথার্থতা আদায়ে সক্ষম হয়।
পাকিস্তানের সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে সফলতা পেলেও ম্যাট উইকেট ও টার্ফ উইকেটে তাঁর সাফল্যের বিরাট ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার ফ্রাঙ্ক টাইসন তাঁর প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন যে, ‘ফজল মাহমুদের বয়সী ব্যাটসম্যানদের কাছে ম্যাট উইকেটে মিডিয়াম পেস লেগ কাটার সহযোগে সেরা বোলার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।’ দূর্ভাগ্যজনকভাবে টার্ফ উইকেটে অনুষ্ঠিত খেলাগুলোয় প্রায়শঃই আঘাতের কারণে অনুপস্থিত থাকতেন।
১৯৫৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়াও, ২০২১ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রণীত পাকিস্তান ক্রিকেট হল অব ফেমে আব্দুল কাদিরের সাথে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তাঁর মুখশ্রী সর্বদাই বিপরীত লিঙ্গের নজর কাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করতো। ১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মতো তাঁর এ ইংল্যান্ড সফরকে ঘিরে বলা হয়ে থাকে যে, রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ পাকিস্তান দলের সাথে সর্বাগ্রে তাঁর সাথে করমর্দন করে দলের বাদ-বাকীদের সাথে পরিচিত হন। পুণরায় ফিরে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ‘তোমার চোখ এতো নীল কেন?’
লাহোরে ভবানী জংশনের চলচ্চিত্রায়ণকালে মার্কিন অভিনেত্রী আভা গার্ডনার ফলেত্তিস হোটেলে তাঁর সাথে নৃত্যের জন্যে অনুপ্রাণিত করেন। ১৯৪০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত মাদার ইন্ডিয়া’র পরিচালক মাহবুব খান ১৯৫২ সালের মু্ক্তিপ্রাপ্ত আন চলচ্চিত্রে দিলীপ কুমারের পরিবর্তে তাঁকে নায়ক করতে চেয়েছিলেন। তবে, কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি রাজী হননি।
নিজের উপর পূর্ণাঙ্গ আস্থা রেখে খেলায় অগ্রসর হতেন। অধিনায়কের বিরাট দাবীদার ছিলেন। আব্দুল হাফিজ কারদারের সাথে তেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। উভয়েই নেতৃত্বে ছিলেন ও নিজ গুণে তারকা খেলোয়াড়ে পরিণত হন। তবে, বিপরীতধর্মী চিন্তা-ভাবনার কারণে তাঁরা কখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলতেন না। অনেকগুলো কারণে নিজেকে সাধারণ মানবে পরিণত করেছেন। তবে, আব্দুল হাফিজ কারদার অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষা নিয়েছেন ও তাঁদের মাঝে বিভাজন ঘটিয়েছে।
পুলিশবাহিনীতে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ইন্সপেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। এরপর, ১৯৫২ সালে ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও ১৯৭৬ সালে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদবীধারী হন। ক্রীড়া বিভাগ পরিচালনায় অগ্রসর হন। বেশ কয়েকজন শীর্ষমানের হকি খেলোয়াড়ের বিচ্ছুরণে ভূমিকা রাখেন। লাহোরভিত্তিক টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানেই হৃদযন্ত্র ক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ও ৭৮ বছর ১০১ দিন বয়সে ৩০ মে, ২০০৫ তারিখে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।