২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৫ তারিখে বার্বাডোসের পিকউইক গ্যাপ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

সেন্ট লিওনার্ডস বয়েজ স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে, হোটেল ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে পড়াশুনো করেছেন। তবে, ক্রিকেটকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। বালক অবস্থায় কেনসিংটন ওভালের মাঠকর্মী ছিলেন। প্রায়শঃই অতিরিক্ত ফিল্ডারের দায়িত্ব পালন করতেন। এরফলে, খুব কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সান্নিধ্য পেতেন। ১৩ বছর বয়সে বার্বাডোস ক্রিকেট লীগে ওয়েস্টশায়ার ক্রিকেটে ক্লাবের পক্ষে খেলেন। স্থানীয় পিকউইক ক্লাবে খেলতে চাইলেও ঐ ক্লাবটি কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়দের জন্যে বরাদ্দ ছিল। ১৪ বছর বয়সে ১৯৩৯ সালে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। চাকুরী না পেয়ে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে সময় অতিবাহিত করতেন। পরবর্তীতে, অনুশীলনীর মাধ্যমে নিজের ক্রিকেট জীবনে সফলতা নিয়ে আসেন।

ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৪৪-৪৫ মৌসুম থেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।

ক্রিকেটে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। প্রায়শঃই তাঁকে শক্তিধর, চিত্তাকর্ষক ও ক্ষমাহীন ব্যাটসম্যানরূপে চিত্রিত করা হতো। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি বোলারদের উপর দীর্ঘসময় ছড়ি ঘুরিয়ে সফলতা পেয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের থ্রী ডব্লিউ’র অন্যতম ছিলেন। নিজের সেরা দিনগুলোয় দুর্দমনীয় ভূমিকা রেখেছেন ও স্বর্ণালী দিনগুলো নিয়মিতভাবে তাঁর দোরগোড়ায় চলে আসতো। এছাড়াও, ইংল্যান্ডের লীগ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন কমনওয়েলথ দলের সদস্যরূপে ভ্রমণ করেন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৪৮ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে নিজ দেশে গাবি অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বার্কলি গাসকিন, ক্লাইড ওয়ালকট, জন গডার্ড, প্রায়র জোন্স, রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি ও উইল্ফ ফার্গুসনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৩৫ ও ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে ডেনিস অ্যাটকিনসনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৭১ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

এরপর, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ১০৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়লাভ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ৩ মার্চ, ১৯৫৬ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে নিজ দেশে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৬ মার্চ, ১৯৫৮ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫১ ও ৯ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১ রানে পরাভূত হলেও ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ক্রিকেটের বাইরে ফুটবল খেলায় দক্ষ ছিলেন। ফুটবলে বার্বাডোসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে রেফারির দায়িত্ব পালন করেন। চার টেস্ট ও তিনটি ওডিআইয়ে আইসিসি’র ম্যাচ রেফারি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বার্বাডোস দলের কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এমবিই ও সিবিই উপাধীতে ভূষিত হন। ১৯৫১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ১৯৯৫ সালে থ্রী ডব্লিউ’র সর্বশেষ হিসেবে ক্রিকেটে অনবদ্য ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ নাইট পদবী লাভ করেন। তাঁর সম্মানার্থে স্যার ক্লাইড ওয়ালকট ও স্যার ফ্রাঙ্ক ওরেলের সাথে কেনসিংটন ওভালের একটি ছাউনি দি ওরেল, ওয়ালকট এন্ড উইকস স্ট্যান্ড নামে নামকরণ করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ডিএ মারে নামীয় সন্তানের জনক। ১ জুলাই, ২০২০ তারিখে বার্বাডোসে ৯৫ বছর ১২৬ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ২ জুলাই, ২০২০ তারিখে ওল্ড ট্রাফোর্ডে চারদিনের প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেয়ার পূর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ স্যার এভারটন উইকসের সম্মানার্থে এক মিনিট নীরবতা পালন করে।

Similar Posts

  • |

    আশীষ কাপুর

    ২৫ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দারুণ অফ-স্পিন বোলিং করতেন। বলকে শূন্যে ভাসিয়ে মারতেন ও বৈচিত্র্যতা আনয়ণে সক্ষম ছিলেন। সর্বদাই মিতব্যয়ীভাব বজায় রাখতেন ও হাল ছেড়ে দিতেন না। সচরাচর সাত নম্বর অবস্থানে…

  • | | |

    মার্ক বাউচার

    ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে কেপ প্রভিন্সের ইস্ট লন্ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ভার্ডন…

  • |

    জসুভাই প্যাটেল

    ২৬ নভেম্বর, ১৯২৪ তারিখে গুজরাতের আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অফ-স্পিন বোলিং করতেন। তবে, মিহির বসু তাঁকে সিম সহযোগে বোলিং করার কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত…

  • | |

    সেলিম মালিক

    ১৬ এপ্রিল, ১৯৬৩ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারিতে আক্রমণধর্মী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে স্লো-মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে অংশ নিতেন। পাকিস্তানের অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। সহজাত প্রকৃতির প্রতিভাবান ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। বর্ণাঢ্যময় চরিত্রের অধিকারী থেকে ব্যাটকে বেশ উঁচুতে তুলে ধরতেন। অফ-সাইডে স্কয়ার অঞ্চলে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।…

  • | |

    রবিন পিটারসন

    ৪ আগস্ট, ১৯৭৯ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংশৈলীর স্বাক্ষর রেখেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কোন স্পিন কোচের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতিরেকে খেলার জগতে প্রবেশ করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার…

  • | |

    কলিন ক্রফ্ট

    ১৫ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে ব্রিটিশ গায়ানার ল্যাঙ্কাস্টার ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘ক্রফ্টি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চির লিকলিকে গড়নের অধিকারী ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে গায়ানা এবং ইংরেজ…