৩০ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৯ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অবার্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
পাথরখোঁদাইকারক যোসেফ জোন্স ও মেরি দম্পতির পুত্র ছিলেন। স্থানীয় বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন পিতার সাথে চিত্রকর ও রাজমিস্ত্রী হিসেবে কুর্ন ও ব্রোকেন হিল এলাকায় সরকারী কাজে অংশ নিতেন। বৈচিত্র্যপূর্ণ পিচে ভয়ঙ্কর প্রকৃতির বোলার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন। এরপর, নর্থ অ্যাডিলেড ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন ও পর্যাপ্ত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন।
১৮৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ১৯০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ডিসেম্বর, ১৮৯২ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন।
১৮৯৪ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১৯ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। চার্লি ম্যাকলিওড, ফ্রাঙ্ক ইরিডেল, জো ডার্লিং ও জন রিডম্যানের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ খেলাটি বেশ রোমাঞ্চপূর্ণ ছিল। শীর্ষ ইংরেজ একাদশের বিপক্ষে প্রথম খেলায় একটি বল ডব্লিউ. জি. গ্রেসের দাঁড়ির ফাঁক দিয়ে চলে যায়। হতভম্ব অবস্থায় তিনি বলেছিলেন, ‘জোনা, নিজেকে তুমি কি মনে কর?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘দুঃখিত, চিকিৎসক, সে ঘুমিয়ে পড়েছিল।’ তিনি গ্রেসের বুকে, এফ. এস. জ্যাকসনের পাঁজরে বল ফেলেন। ৭/৮৪ লাভ করেন। কেবলমাত্র রঞ্জিতসিংজী তাঁর পেসের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। খেলায় তিনি ১১ ও ১* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪৪ ও ১/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ খেলায় স্বাগতিক দল নাটকীয়ভাবে ১০ রানে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
ইংল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে আরেকটি খেলায় ৮/৩৯ এবং ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৬/৭৪ ও ৭/৩৬ লাভ করেন। কারো মতে তিনি বল ঢিল ছুড়েছিলেন। তবে, ইংল্যান্ডে কখনো নো-বল ডাক শুনেননি। টেস্টগুলোয় কম সফল ছিলেন। তাসত্ত্বেও, ডব্লিউ. এল. মারডক ও সাসেক্স থেকে বাৎসরিক £৩৫০ পাউন্ড-স্টার্লিংয়ের বিনিময়ে বসবাসজনিত যোগ্যতা অর্জনের প্রস্তাবনা দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
১৮৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে আর্চি ম্যাকলারিনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১ জানুয়ারি, ১৮৯৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল ঐ টেস্টে ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে বল ছুঁড়ে মারার কারণে অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার জো ফিলিপসের কাছ থেকে নো-বলের ডাক শোনেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৭ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৫ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতায় ফেরে।
১৮৯৬, ১৮৯৯ ও ১৯০২ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। সফরগুলোয় ১২১, ১৩৫ ও ৭১ উইকেট দখল করেছিলেন। ১৮৯৯ সালে জো ডার্লিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১ জুন, ১৮৯৯ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৮৮ ও ২/৩১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪ ও ৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জো ডার্লিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১১ অক্টোবর, ১৯০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৭৮ ও ১/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে চার্লি লিউইলিনের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে ১৯ গড়ে ৬৪ উইকেট দখল করেছিলেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে ২২.৮৩ গড়ে ৬৪১ উইকেট পান। ব্যক্তিগত সেরা ৮/৩৯ লাভ করেন। ৪৭বার ইনিংসে পাঁচ-উইকেট পেয়েছিলেন। পাশাপাশি ১০৭টি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।
ক্রিকেটের পাশাপাশি রাগবি খেলায় দক্ষ ছিলেন। পোর্ট অ্যাডিলেড, নর্থ অ্যাডিলেড ও সাউথ অ্যাডিলেড ফুটবল ক্লাবে অজি রুলস ফুটবল খেলেছেন। ২৩ নভেম্বর, ১৯৪৩ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ম্যাগিল এলাকায় ৭৪ বছর ৫৪ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
