২২ মে, ১৯৪০ তারিখে কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও রেফারি। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারত দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৬১-৬২ মৌসুম থেকে ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটকের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বলকে শূন্যে ভাসিয়ে ফেলতে কোনরূপ দোটানায় ভুগতেন না। এমনকি ব্যাটসম্যানেরা দ্রুতলয়ে রান তোলায় তৎপরতা দেখাতে গেলেও এর ব্যতয় ঘটতো না। যদি তিনি সৌভাগ্যবান হতেন তাহলে বল ফিল্ডারের মুঠোয় চলে যেতো। আর এর ব্যতিক্রম হলে সোজা সীমানার বাইরে পড়তো। দুইবার কর্ণাটক দলের রঞ্জী শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন।
মনসুর আলী খান পতৌদি’র ছত্রচ্ছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন খেলাকে উপভোগ করেছিলেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত দলের পরবর্তী অধিনায়ক অজিত ওয়াড়েকর তাঁর তুলনায় শ্রেয়তর ব্যাটসম্যান, অসাধারণ ফিল্ডার ও নিখুঁতমানের অফ-স্পিনার শ্রীনিবাস বেঙ্কটরাঘবনের প্রতিই অধিক আস্থা রেখেছিলেন। আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের কারণে তাঁকে কখনো ওডিআই দলে রাখা হয়নি।
ইয়ান চ্যাপেল তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, ‘আমার প্রজন্মের সেরা ধীরগতিসম্পন্ন বোলার ছিলেন।’ অ্যাশলে মলেট তাঁকে জিম লেকার ও ল্যান্স গিবসের চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন এবং মুত্তিয়া মুরালিধরনের সমান যোগ্যতার অধিকারীরূপে চিহ্নিত করেছেন।
১৯৬২ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৪৯ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ২০ টেস্ট থেকে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ঐ সময়ে সংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের দ্রুততম বোলারে পরিণত হন ও পরবর্তীতে, রবিচন্দ্রন অশ্বিন তাঁর এ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন।
পিতা তাঁকে পড়াশুনোয় অধিক মনোযোগী হবার পরামর্শ দিলেও তিনি টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে নিজ দেশে টেড ডেক্সটারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১০ জানুয়ারি, ১৯৬২ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে মহীশূরের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ভারতের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। ০/২০ ও ১/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৯* ও ১৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১২৮ রানে জয় পায় ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়ী হয়।
পরবর্তীতে বিসিসিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক এম চিন্নাস্বামী’র সহায়তায় বিষয়টি উপশম হলে ১৯৬১-৬২ মৌসুমে ভারত দলের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। তবে, তাঁর পিতা শর্তারোপ করেন যে, দেশে ফিরে প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনো শেষ করবেন। পড়াশুনো সম্পন্ন করেছিলেন। তাঁর পিতা ইহলোক ত্যাগ করেন। এছাড়াও, তিনি চাকুরীতে যোগ দেন। ৫ বছর পর পুণরায় টেস্ট দলে ফিরে আসেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে প্রস্তুতিমূলক খেলার প্রথম দিনে ৮/৮৭ লাভ করেন।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশে-বিদেশে খেলে দারুণ সফল হন। ১৬ টেস্ট থেকে ২৩.৬০ গড়ে ৯৫ উইকেট দখল করেন। এ সময়ে কেবলমাত্র বিষেন সিং বেদী ভারতের পক্ষে ২৫ উইকেট পেয়েছিলেন। খুব সহজেই বিশ্বের সেরা বোলারে পরিণত হন।
১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। এ সফরে ভারত দল বিদেশের মাটিতে তাদের প্রথম সিরিজ বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৬/১০৪। খেলায় তিনি ০/৮৪ ও ৬/৯৪ লাভ করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
এরপর, ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। আবারও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক জিটি ডাউলিংকে বিদেয় করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে খেলায় তিনি ১/৮৩ ও ১/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, উভয় ইনিংসে ৭ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিক দল ৬ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/৩২ ও ৩/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে ১ রান তুলেছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড সফরে উপেক্ষিত হন। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে নিজ দেশে দারুণ খেলেন। চিপকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪/১৬ নিয়ে দলকে ৪ উইকেটে জয় এনে দেন। দুই মৌসুম পর একই মাঠে ১১১ রানে ৯ উইকেট দখল করলে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে পরাজিত করতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। এ মাঠে ৫ টেস্ট থেকে ১৮.৬৭ গড়ে ৩৬ উইকেট পেয়েছিলেন।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ডিআর ও’সালিভানকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৬/৭৪। খেলায় তিনি ৩/৬৪ ও ৮/৭৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ২৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭৮ সালে বিষেন বেদী’র নেতৃত্বে পাকিস্তান গমন করেন। ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৯৪ রান খরচ করেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে এটিই ভারতের পক্ষে তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। পাকিস্তান সফরের পর বিষেন বেদী ও ভাগবত চন্দ্রশেখরের সাথে তিনিও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লে খুব দ্রুত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
২০০৭ সালে অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগের সাথে যুক্ত হন। তবে, ২০০৯ সালে বিসিসিআইয়ের সাধারণ ক্ষমার আওতায় চলে আসেন। ‘ওয়ান মোর ওভার’ শীর্ষক স্বীয় আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর বেশ কয়েকবার ভারত দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে বেনসন এন্ড হেজেসের বিশ্ব সিরিজের শিরোপা বিজয়ে ভারত দলকে পরিচালনা করেন। চেন্নাইভিত্তিক এনসিএ ও এমএসি স্পিন ফাউন্ডেশনের স্পিন কোচের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৪ সালে বিসিসিআইয়ে স্পিনার চতুষ্টয় – বেদী, চন্দ্র, প্রসন্ন ও বেঙ্কটকে সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদানের কথা ঘোষণা করে।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। শিমা প্রসন্ন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।
