|

এনামুল হক, ১৯৮৬

৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলা সিলেটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। লাফিয়ে ও মিতব্যয়ী বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। ২০০১-০২ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে পূর্বাঞ্চল ও সিলেট বিভাগ এবং ভারতীয় ক্রিকেটে মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, চিটাগং কিংস, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।

২০০৩ সালে ডেভ হোয়াটমোর বাংলাদেশের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হবার পর কার্যকর অথচ বয়সের ভারে ন্যূহ মোহাম্মদ রফিকের জুটি হিসেবে উপযুক্ত স্পিনাররূপে এনামুল হককে মনোনীত করেন। ২০০৩-০৪ মৌসুমে বাংলাদেশ সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্যে বোর্ড সভাপতি একাদশের সদস্য করা হলে বয়সের কারণে কিছুটা বিহ্বলতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ পর্যায়ে বয়স ১৬ বছর হলেও অধিকাংশ দর্শকেরই ধারনা যে, আরও দুই বছর বয়সে বড়। তবে, ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের কাছে ঠিকই সমীহের পাত্রে পরিণত হন। দ্বিতীয় দিনের পড়ন্ত বিকেলে দূর্দান্ত বোলিং করেন। কোন উইকেট খরচ না করেই ইংল্যান্ডের চার উইকেটের পতন ঘটে। নিজে লাভ করেন তিনটি। ফলশ্রুতিতে, পরের সপ্তাহেই সরাসরি উদ্বোধনী টেস্টের জন্যে মনোনয়ন পান।

২০০৩ থেকে ২০১৩ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে সব মিলিয়ে ১৫ টেস্ট ও ১০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। মোহাম্মদ রফিকের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষতা ও নিপুণতার স্বাক্ষর রেখে আবারও ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদেরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন। ২/৫৩ ও ০/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়। অভিষেক সিরিজে চার উইকেট দখল করেছিলেন। বলকে মুঠোয় পুড়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। এক পর্যায়ে দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে ভাবা হয়েছিল।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে টাটেন্ডা তাইবু’র নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ে দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব খেলেন। মোহাম্মদ রফিকের ৫/৬৫ লাভের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৪৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। তন্মধ্যে, ৬ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে শেষ উইকেট লাভের মাধ্যমে ৩৪ টেস্ট পর বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। ঐ খেলায় স্বাগতিক দল ২২৬ রানের ব্যবধানে জয় পেয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এরপর, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও অপূর্ব খেলেন। ১৪ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেস্টে ৭/৯৫ পান। ১২ উইকেট পেলেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১৮ উইকেট নিয়ে দলের প্রথম সিরিজ বিজয়ে অংশ নেন। বাংলাদেশ দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে ও তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

ঐ বছরের শেষ দিকে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁকে খেলানো হয়নি। তবে, ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম সফরে পুণরায় ফিরে আসেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান।

২০০৮-০৯ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় মহারাষ্ট্র দলের সদস্য ছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে পর্যাপ্ত সফলতার সন্ধান পাননি। এরফলে, জুলাই, ২০০৯ সাল থেকে দলের বাইরে অবস্থান করেন। প্রায় এক বছর পর পুণরায় জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ লাভ করেন। নভেম্বর, ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে চলে যান। এছাড়াও, দল থেকে বাদ পড়েন। গত চার বছরে কোন ইনিংসেই চারের অধিক উইকেট লাভ করতে ব্যর্থ হন।

কয়েক মৌসুম মন্দ সময় অতিবাহিত করার পর ২০১১-১২ মৌসুমে বাংলাদেশের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট প্রতিযোগিতা জাতীয় ক্রিকেট লীগে ৫৯ উইকেট লাভের মাধ্যমে নিজের সক্ষমতা জানান দেন। ডিসেম্বর, ২০১১ সালে প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে ৩০০ প্রথম-শ্রেণীর উইকেট দখলের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। এরপর, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের নিলামে চিটাগং কিংসের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ৯ খেলা থেকে ১৩ উইকেট লাভ করেন। এরফলে, ২০১২ সালের এশিয়া কাপ খেলার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের ওডিআই দলে তিনি ঠাঁই পান।

২০১৩ সালে ওল্ভারহাম্পটন ক্রিকেট ক্লাবের বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। দলটির পক্ষে ১১ খেলা থেকে ৩০ উইকেট দখল করেন। ছন্দ ফিরে আসলে তাঁকে পুণরায় জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২০১২-১৩ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ১৭ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৩৩৫ রানের পরাজয়ের কবলে পড়ে সফরকারীরা। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ৩/১৩৩ ও ০/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে রাখা হলেও কোন খেলায় তাঁকে খেলানো হয়নি।

Similar Posts

  • | |

    গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্ন

    ২৬ মে, ১৯৬৬ তারিখে ওয়াইকাতোর হ্যামিল্টনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ২০০১-০২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে নর্দার্ন…

  • |

    রবিউল ইসলাম

    ২০ অক্টোবর, ১৯৮৬ তারিখে উপকূলীয় শহর সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২০০০-এর দশকের পরবর্তী সময়ে স্বল্পসংখ্যক বাংলাদেশী পেস বোলারদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তাঁর একনিষ্ঠ সুইং বলগুলো অগোচরে ছিল। শুধুমাত্র গণমাধ্যমে কিংবা…

  • | | |

    ডেভিড হটন

    ২৩ জুন, ১৯৫৭ তারিখে বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের উত্তরণে অসম্ভব ভূমিকা পালন করে গেছেন। জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সূচনালগ্নে সেরা দুইজন ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের…

  • | |

    দেবাং গান্ধী

    ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে গুজরাতের ভাবনগর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…

  • |

    ইন্ডিকা গালাগে

    ২২ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে পানাদুরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করে দলে কিছু অবদান রাখেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লিকলিকে দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। বেশ লাফিয়ে বলে সিম আনয়ণে দক্ষতা প্রদর্শনসহ বাউন্স প্রদানে সক্ষম। ফিল্ডার হিসেবেও মাঠের যে-কোন স্থানে অবস্থান করেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় পানাদুরাভিত্তিক শ্রী সুমঙ্গলায়…

  • | | |

    কেন রাদারফোর্ড

    ২৬ অক্টোবর, ১৯৬৫ তারিখে ওতাগোর ডুনেডিনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওতাগো এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গটেংয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, গটেং…