১২ আগস্ট, ১৯৪০ তারিখে ট্রান্সভালের প্রিটোরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘ব্লান্টার’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ডানহাতে ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন ও ডানহাতে মিডিয়াম-পেস বোলিং করতেন। খেলাকালীন চশমা পরিধান করতেন। মাঠ ও মাঠের বাইরে খুব সহজেই তাঁকে সনাক্ত করা যেতো। শারীরিক সচেতনতার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুম থেকে ১৯৮২-৮৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে বোল্যান্ড, ইস্টার্ন প্রভিন্স, ট্রান্সভাল ও ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুম থেকে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম পর্যন্ত ট্রান্সভালের পক্ষে খেলার পর ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে ১৯৮০-৮১ মৌসুম পর্যন্ত ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের পক্ষে খেলেন। এছাড়াও, ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে ডার্বিশায়ারের পক্ষে তিন মৌসুম খেলেছেন।
১৯৬১ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৩০ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্ট অভিষেকের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের পক্ষে একাধারে খেলেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে ডারবানে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। হ্যারি ব্রোমফিল্ড, কলিন ব্ল্যান্ড, গুফি লরেন্স, কেনেথ ওয়াল্টার, কিম এলজি ও পিটার পোলকের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাট হাতে নিয়ে ১৫ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, খেলায় তিনি ০/১৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারী দল ৩০ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন ১৫ রান অতিক্রম করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৪৭ ও ৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১৫ ও ০/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
এরপর, ১ জানুয়ারি, ১৯৬২ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৫১ ও ১৬ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে জ্যাক অ্যালাবাস্টারের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। পাশাপাশি, ০/৪০ ও ০/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৭২ রানে জয় পেলে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে। প্রসঙ্গতঃ এটিই নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ও বিদেশের মাটিতে প্রথম জয় ছিল।
১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ট্রেভর গডার্ডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ঐ সিরিজে ৬০৩ রান তুলেন। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে বেশ সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৬৭ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। খেলায় তিনি ১১৪ ও ০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৭১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৪ জানুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১১৪ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম মোকাবেলায় শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। খেলায় তিনি ২০১ ও ৪৭* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে জিডি ম্যাকেঞ্জিকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৫১। বল হাতে নিয়ে ৩/৬ লাভ করেন। সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় নিয়ে আসে।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ট্রেভর গডার্ডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে ওয়েলিংটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২২ ও ৯২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩৮ ও ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর পিটার ফন ডার মারউই’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২২ জুলাই, ১৯৬৫ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ৫২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩১ ও ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে নিজ দেশে বব সিম্পসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগতভাবে বেশ সফল ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে জিডি ম্যাকেঞ্জিকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৬। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৮৫ ও ০/১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। পাশাপাশি, ১৯ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেন। স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২২ জানুয়ারি, ১৯৭০ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১২৭ ও ১৬ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে জন গ্লিসনের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৫ ও ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ চারটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। স্বাগতিকরা ১৭০ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৫ মার্চ, ১৯৭০ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৩ ও ২৭ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/২৭ ও ২/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৩২৩ রানে জয় পেলে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
হেডিংলিতে বিশ্ব একাদশের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে লড়েছিলেন। অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের প্রচলন ঘটলে নিজেকে ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি ঘটান। এরফলে অনেক দক্ষিণ আফ্রিকান খেলোয়াড়ের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ ঘটে ও তিনি ডব্লিউএসসি ক্যাভেলিয়ার্স দলের অধিনায়ক মনোনীত হন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ দলকে প্রশিক্ষণ দেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনবার বিয়ে করেছেন। তন্মধ্যে, প্রথম সংসারে এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে জার্সির জেনারেল হাসপাতালে ৬৫ বছর ১৪০ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুকালীন পত্নী কলি বার্লোকে রেখে যান। হিল্টন অ্যাকারম্যানের সাথে তাঁকেও নিউল্যান্ডস মাঠে সমাহিত করা হয়।
