| |

ডগলাস জার্ডিন

২৩ অক্টোবর, ১৯০০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মালাবার হিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ও নিজের সময়কালে শীর্ষস্থানীয় শৌখিন ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পান।

ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ বিতর্কের মূল হোতা হিসেবে ক্রিকেটের খলনায়ক হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পরিগণিত হয়ে আসছেন। শারীরিক আঘাত দিয়ে ও ব্যাটসম্যানদের নিরাপত্তা না দিয়ে অ্যাশেজ জয়ে ভূমিকা রাখেন। দ্রুতগতিসম্পন্ন বল, শর্ট ডেলিভারিগুলো ব্যাটসম্যানদের শরীর বরাবর লক্ষ্য করে হ্যারল্ড লারউড ও বিল ভোসের সহায়তা নিয়ে লেগ-সাইডে অবস্থানকারী ফিল্ডারদের মুঠোয় পুরতে উইকেট পতন ঘটান। এ ধরনের কৌশল অবলম্বনে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে; বিশেষতঃ রান সংগ্রহে তৎপর ডন ব্র্যাডম্যানের প্রতিকূল হয়ে দাঁড়ায়। তবে, নিজ দলের সকল সদস্য এ ধরনের কৌশল গ্রহণে সাড়া দেয়নি ও ক্রিকেটের গতিশীলতা রুদ্ধ করে।

ম্যালকম রবার্ট জারডিন ও অ্যালিসন দম্পতির একমাত্র পুত্র ছিলেন। ১৯২৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অনুমোদনপ্রাপ্ত হন। তবে, কখনও আইনপেশায় জড়িত হননি ও ব্যাংকের কেরাণী হিসেবে কর্মজীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সার্ভিসেসের পক্ষে খেলেছেন। ১৯২০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।

১৯২৮ থেকে ১৯৩৪-৩৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ২২ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯২৮ সালে নিজ দেশে কার্ল নুনেসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ জুন, ১৯২৮ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। হ্যারি স্মিথের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ইনিংস ও ৫৮ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯২৮-২৯ মৌসুমে এমসিসি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের ৪-১ ব্যবধানের সিরিজ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ৬৪.৮৮ গড়ে রান তুলেছিলেন। অ্যাডিলেডে ডব্লিউ. আর. হ্যামন্ডের সাথে তৃতীয় উইকেটে ২৬২ রানের জুটি গড়ে নিরবিচ্ছিন্ন ছিলেন।

১৯৩১ সালে নিজ দেশে টম লরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৫ আগস্ট, ১৯৩১ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ টেস্টটি শেষদিনের শেষ বিকেলে শুরু হয়েছিল। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলার একমাত্র ইনিংসে ২৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে ব্যাপকভাবে নিন্দিত বডিলাইন সিরিজ খেলতে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান।

১৯৩৩ সালে নিজ দেশে জ্যাকি গ্র্যান্টের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৪ জুন, ১৯৩৩ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৭ রানে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ভারত সফরে যান। ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৪ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬৫ ও ৩৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২০২ রানে জয় পেয়ে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

দাতব্য তহবিল গঠনের খেলায় অংশ নিয়েছেন। ১৯৩৩ সালে ‘ইন কুইস্ট অব দি অ্যাশেজ’ শিরোনামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সময়কালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট ক্লাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৪ সেপ্টেম্বর, ১০৩৪ তারিখে লন্ডনের সেন্ট জর্জেস এলাকায় আইরিন মার্গারেট পিটের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ফিয়ানাচ নাম্নী এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। ১৮ জুন, ১৯৫৮ তারিখে সুইজারল্যান্ডের মন্ট্রিয়াক্স এলাকায় ৫৭ বছর ২৩৮ দিন বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর দেহাবসান ঘটে। পার্থশায়ারের ক্রস ক্রেগ এলাকায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। এরপূর্বে, ১৯৫৭ সালে সাউদার্ন রোডেশিয়া সফরকালে আফ্রিকান জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর থেকে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ পূর্বে ডি. আর. জার্ডিন একাদশের পক্ষে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের বিপক্ষে দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ১ আগস্ট, ১৯৫৮ তারিখে মৃত্যু পরবর্তী £৭১,২৭৪ পাউন্ড-স্টার্লিং মূল্যমানের সম্পদ রেখে যান।

Similar Posts

  • | | | |

    ফ্রাঙ্ক হার্ন

    ২৩ নভেম্বর, ১৮৫৮ তারিখে মিডলসেক্সের ইলিং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা – উভয় দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। খ্যাতনামা ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারের সন্তান ছিলেন। খাঁটিমানের রক্ষণব্যূহ গড়ে…

  • | |

    মার্ভ হিউজ

    ২৩ নভেম্বর, ১৯৬১ তারিখে ভিক্টোরিয়ার ইউরোয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘ম্যাড মার্ভ’, ‘সুমো’ কিংবা ‘ফ্রুটফ্লাই’ ডাকনামে ভূষিত মার্ভ হিউজ ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। খুব ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন।…

  • | |

    দোদ্দা গণেশ

    ৩০ জুন, ১৯৭৩ তারিখে কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৯০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটকের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঘরোয়া…

  • | | |

    লাসিথ মালিঙ্গা

    ২৮ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে গল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়েও পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেপারমাডু মিল্টন ও স্বর্ণা থিনুয়ারা দম্পতির সন্তান। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি…

  • | |

    অশান্ত ডিমেল

    ৯ মে, ১৯৫৯ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার প্রথমদিককার প্রাণবন্তঃ ও সেরা ডানহাতি ফাস্ট বোলার ছিলেন। পর্যাপ্ত বাউন্স ও আউট সুইঙ্গার প্রদান সক্ষম ছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ব্যাটসম্যানকে বলের কাছাকাছি নিয়ে যেতে…

  • | |

    ক্লেম হিল

    ১৮ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হিন্ডমার্শ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবারের ১৬ সন্তানের অন্যতম ছিলেন। পিতা এইচ. জে. হিল অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা…