১২ জানুয়ারি, ১৯৪০ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৬০-এর দশকে নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
লিনউড হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। তবে, বেশীদূর পড়াশুনো করতে পারেননি। উদীয়মান ফাস্ট বোলার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও, মারকুটে ভঙ্গীমায় ছক্কা হাঁকাতে পারতেন। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুম থেকে ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সব মিলিয়ে ১৪২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২২.৭১ গড়ে ৫১৮ উইকেট দখল করেছিলেন। এছাড়াও, একটি শতক ও ১৩টি অর্ধ-শতক সহযোগে ১৭.২২ গড়ে ৩৪৯৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে ক্যান্টারবারির সদস্যরূপে ওতাগোর বিপক্ষে ৫৩ মিনিটে ১০৩ রান তুলেন।
১৯৬১ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩২ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ফ্রাঙ্ক ক্যামেরন, আর্টি ডিক, গ্যারি বার্টলেট ও পল বার্টনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২/৬৪ ও ৩/৫১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, খেলায় তিনি ব্যাট হাতে ০ ও ১০ রান সংগ্রহ করেন। স্বাগতিকরা ৩০ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে জড়ান। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে আরএ ম্যাকলিনকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৫১। খেলায় তিনি ২/৭০ ও ৪/৬৮ পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন বোলিং করে এ সফরে ১৯ উইকেট দখল করেছিলেন। সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।
১৯৬২-৬৩ মৌসুমে নিজ দেশে টেড ডেক্সটারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১০ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ৬০ ও ২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৯৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ২১৫ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে হানিফ মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২২ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৪/৬৮। খেলায় তিনি ৪/৪৫ ও ৩/৩৪ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলেন। জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ২ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে খেলেন। বল হাতে নিয়ে ৩/৮৭ ও ০/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৪ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২৭ মে, ১৯৬৫ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে টিডব্লিউ কার্টরাইটকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৪৫। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/১০৮ ও ০/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ১৭ জুন, ১৯৬৫ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে জি. বয়কটের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২/৬২ ও ৩/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১১ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে নিজ দেশে মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ভারতের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/১০৮। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৮৬ ও ০/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১০ ও ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। আবারও ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ভারতের প্রথম ইনিংসে ইএএস প্রসন্নকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৫/৮৬। তবে, পিচের মাঝখানে দৌঁড়ানোর ফলে তাঁকে আর বোলিং করার সুযোগ দেয়া হয়নি। খেলায় তিনি ৬/৬৩ ও ০/৩৭ লাভ করেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১ রান সংগ্রহ করেন। স্বাগতিক দল ৬ উইকেটে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে নিজ দেশে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৩ ও ২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৭০ ও ১/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৩ মার্চ, ১৯৬৯ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/১১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজের সমাপ্তি ঘটে।
ইংল্যান্ড সফরেই নিজের স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। তবে, পরবর্তী সফরেই পিঠের আঘাতের কবলে পড়ে স্বাভাবিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে ব্যাহত হয়। ১৯৬৯ সালে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২১ আগস্ট, ১৯৬৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। এ টেস্টেই প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ফিল শার্পকে বিদেয় করে এ সাফল্য পান। ১/৫৪ ও ০/৩৫ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ১৬ ও ১১ রান সংগ্রহ করেন। ৮ উইকেটে জয় পেলে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
টেস্টগুলো থেকে ৩১.৪৮ গড়ে উইকেটগুলো লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে খেলার জগৎকে বিদেয় জানান। এ পর্যায়ে বোলিংকালে তাঁর ভার্টিব্রা স্থানচ্যূত হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে তিনটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন ও সবগুলোই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৬০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
১৯৬১ সালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অ্যালমেনাক কর্তৃক বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। এরপর, ১৯৬২ সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যানুয়েল কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। এ প্রসঙ্গে অ্যালমেনাকে উল্লেখ করা হয় যে, ‘তিনি ছাত্রদের স্বপ্নীল ক্রিকেটার, ফাস্ট বোলার ও ছক্কা হাঁকানোয় পারদর্শী’। ১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ড স্পোর্টস হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। লরেটা টড নাম্নী ক্যান্টারবারি মহিলা দলের ডানহাতি ফাস্ট বোলারের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তবে, অসুস্থতার কারণে নিউজিল্যান্ড মহিলা দলে খেলার সুযোগ পাননি। ডেবি ও ভিকি নাম্নী দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। পরবর্তীতে, তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পুণরায় বিবাহ করেন। তবে, পৃথকভাবে বসবাস করতে থাকেন। অক্টোবর, ১৯৮৯ সালে তাঁর ২২ বছর বয়সী পুত্র ওয়েনকে ক্রাইস্টচার্চের ক্যাথেড্রাল স্কয়ারে অজ্ঞাতনামা আততায়ী গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে পাপারুয়া কারাগার থেকে বন্দুকধারীকে মুক্তি দেয়ার পর আত্মহত্যা করে। জীবনের শেষদিকে ক্রাইস্টচার্চে ট্যাক্সিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ২৯ এপ্রিল, ২০০৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে ৬৭ বছর ১০৭ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুবার্তায় ‘তিনি তাঁর শেষ ওভার বোলিং করেছেন’ বলে পঠিত হয়।
