|

ডেভন কনওয়ে

৮ জুলাই, ১৯৯১ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে থাকেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন ও সেখানেই শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডে চলে আসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় ১০০টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও ৭০টি লিস্ট-এ ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন দেশে তাঁকে ক্রিকেটার হতে সহায়তার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁর অন্যতম শক্তি ছিল যে, তিনি সকল স্তরের ক্রিকেটেই দক্ষ ছিলেন।

নিউজিল্যান্ড পৌঁছে শুরুতে ইউনিভার্সিটি ক্লাবে যোগ দেন। সুপার স্ম্যাশ প্রতিযোগিতায় ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডসে যুক্ত হন। শুরুতে অধিকাংশ সময়ই তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়। তবে, নিয়মিত উইকেট-রক্ষক টম ব্লান্ডেলের জাতীয় দলে খেলার ফলে আরও অধিক খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান। পরবর্তীতে, ওয়েলিংটনের পক্ষে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের সকল স্তরে খেলেন ও পর্যাপ্ত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। সেপ্টেম্বর, ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলার সুযোগ পান।

আক্রমণাত্মক ব্যাটিংশৈলীর অধিকারী। সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাটিংয়ে নামেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওয়েলিংটন, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গটেং, ডলফিন্স, কোয়াজুলু-নাটাল ইনল্যান্ড ও লায়ন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস ও সাউদার্ন ব্রেভের পক্ষে খেলেছেন। ৫ মার্চ, ২০০৯ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত গটেং বনাম ইস্টার্নসের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।

২০২০ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২৭ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০আইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। এরফলে দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় হিসেবে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলার গৌরব অর্জন করেন।

২০২১ সালে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২ জুন, ২০২১ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রতিপক্ষীয় জেমস ব্রেসি ও অলি রবিনসনের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রথম ইনিংসে ২০০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রান তুলে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। প্রথম ইনিংসে তিনি রান আউটে বিদেয় নেন। ঐ ইনিংসে ২২টি চার ও ১টি ছক্কার মার ছিল। এ পর্যায়ে হেনরি নিকোলসের সাথে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৭৪ রান সংগ্রহ করেন। সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি বিদেয় নেন ও দল ৩৭৮ রান তুলে। ঐ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান ও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। এ ইনিংসের কল্যাণে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭৭তম অবস্থানে চলে আসেন ও রেকর্ডসংখ্যক ৪৪৭ রেটিং পয়েন্ট লাভ করেন। অভিষেকে সংখ্যার দিক দিয়ে যে-কোন নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ও বৈশ্বিকভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চস্থানীয়। টেস্ট অভিষেকে সপ্তম ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান। কেবলমাত্র টিপ ফস্টার (৪৪৯) ও কাইল মেয়ার্স (৪৪৮) তাঁর চেয়ে অধিক পয়েন্ট লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ১৯০৩ সালে সিডনিতে টিপ ফস্টার অভিষেকে ২৮৭ রান তুলে তাঁর তুলনায় অধিক রান পেয়েছেন।

ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ২০২১ সালের আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ১০ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হন। ৩৮ বল থেকে জয়ের জন্যে ৭২ রানের দরকার অবস্থায় লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে জোস বাটলারের স্ট্যাম্পিংয়ে বিদেয় নিলে অসন্তুষ্ট চিত্তে স্বীয় হাতে ব্যাট দিয়ে আঘাত হানলে ডানহাতের পঞ্চম মেটাকার্পাল ভেঙ্গে যায়। এ প্রতিযোগিতায় উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন ও ছয় খেলা থেকে ৩২.২৫ গড়ে ১২৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় তাঁর দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হলে রানার্স-আপ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এরফলে, ২৫ নভেম্বর থেকে ভারতের মাটিতে দুই-টেস্ট নেয়া সিরিজে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হন।

২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে মমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ১১ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে অংশ নেন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়ক টম ল্যাথামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১১৭ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। এ সিরিজে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

২০২৪-২৫ মৌসুমে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, এজাজ প্যাটেলের স্মরণীয় বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা মাত্র ২৫ রানে পরাভূত হলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০২৫ সালে মিচেল স্যান্টনারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৫৩ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৩৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

Similar Posts

  • |

    ক্লড ফ্লোকেট

    ৩ নভেম্বর, ১৮৮৪ তারিখে কেপ কলোনির আলীওয়াল নর্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯১০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯০৪-০৫ মৌসুম থেকে ১৯১০-১১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত…

  • | |

    মাইক ব্রিয়ার্লি

    ২৮ এপ্রিল, ১৯৪২ তারিখে মিডলসেক্সের হ্যারো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, সাংবাদিক ও লেখক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ‘ব্রিয়ার্স’ বা ‘স্কাগ’ ডাকনামে পরিচিতি পাওয়া মাইক ব্রিয়ার্লি ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। এক পর্যায়ের ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তাঁর দক্ষ পরিচালনায়…

  • |

    অলোক কাপালী

    ১ জানুয়ারি, ১৯৮৪ তারিখে সিলেটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। মাঝারিসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অনেক উদীয়মান ও প্রতিভাবান বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের ভীড়ে তিনিও নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত করতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাট্রিক লাভ ব্যতীত বাংলাদেশ দলে তেমন সাফল্যের…

  • | | |

    ডন ব্র্যাডম্যান

    ২৭ আগস্ট, ১৯০৮ তারিখে জন্মগ্রহণকারী নিউ সাউথ ওয়েলসের ছোট্ট, অপরিচিত শহর কুটামুন্ড্রা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, লেখক ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। কুটামুন্ড্রায় জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবকাল বাউরেলে অতিবাহিত করেন। বাউরেল ইন্টারমিডিয়েট হাই…

  • |

    ইন্ডিকা গালাগে

    ২২ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে পানাদুরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করে দলে কিছু অবদান রাখেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লিকলিকে দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। বেশ লাফিয়ে বলে সিম আনয়ণে দক্ষতা প্রদর্শনসহ বাউন্স প্রদানে সক্ষম। ফিল্ডার হিসেবেও মাঠের যে-কোন স্থানে অবস্থান করেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় পানাদুরাভিত্তিক শ্রী সুমঙ্গলায়…

  • |

    কেনেথ হাচিংস

    ৭ ডিসেম্বর, ১৮৮২ তারিখে কেন্টের টানব্রিজ ওয়েলসের কাছাকাছি সাউথবোরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯০০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। টনব্রিজ স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী চার ভ্রাতার সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। সার্জন পিতার সন্তান হিসেবে তাঁরা সকলেই টনব্রিজ স্কুলের পক্ষে ক্রিকেট খেলেছেন। তন্মধ্যে,…