১৮ জুলাই, ১৯৪৯ তারিখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সুবিয়াকো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার। টেস্ট ক্রিকেটের কিংবদন্তী তারকা। বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং শুধুমাত্র অস্ট্রলীয়দের মধ্যেই নয়, বৈশ্বিকভাবে বীর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তরুণ ফাস্ট বোলারদের অনেকের মাঝেই ডেনিস লিলি’র ন্যায় বোলার হবার আকাঙ্খা লক্ষ্য করা যায়। ফাস্ট বোলিংয়ের ধারাকেই পরিবর্তন করে ফেলেন। পিঠের আঘাত থাকলেও নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করতেন, পেশীকে সবল রাখতে সচেষ্ট হতেন, সমজাতের অনুশীলনসহ খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস চালিয়ে যান।
অনেকের কাছেই পূর্ণাঙ্গ বোলার হিসেবে বিবেচিত হতেন। এক দশকেরও অধিক সময় অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেন। দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং করার পরও অধিনায়কের কাছ থেকে আরও এক ওভার বোলিংয়ের আমন্ত্রণ পেতেন। প্রায়শঃই অপ্রত্যাশিতভাবে দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনতেন। নিখুঁত বোলিং ভঙ্গীমায় অগ্রসর হতেন। টেস্টে ল্যান্স গিবসের তৎকালীন ৩০৯ উইকেটের বিশ্বরেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন।
আধুনিক গতিসম্পন্ন খেলোয়াড়দের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছেন। দৌঁড়ানোর ভঙ্গীমা বেশ সুন্দর ছিল। শক্তিমত্তা সহযোগে দূরন্ত গতিতে লেগ-কাটার, আউট-সুইঙ্গার বোলিং করতেন। শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ায় নয়, বিশ্বের সর্বত্র একই ধারা বহমান রাখতেন। প্রথম পর্যায়ে অনেকটা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ন্যায় অগ্নিগোলকসম বোলিং করে ২২ গজের পুরোটা জুড়ে রাজত্ব কায়েম করেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে প্রধান অস্ত্ররূপে খুবই সঠিকমানের বোলিং করে নিজের সেরা সময়ে অবস্থান করেন। এ ধরনের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে সেরা ব্যাটসম্যানদেরকেও সন্ত্রস্ত থাকতে দেখা যায়। অন্যথায়, ক্রুদ্ধান্বিত, হতাশায় আচ্ছন্ন অবস্থায় ভিন্ন আচরণে অগ্রসর হতেন।
খেলায় পুণরায় ফিরে এসে বোলিং ভঙ্গীমার পরিবর্তনে ঘটাতেন। একই ধরনের বোলিং করলেও তীক্ষ্ণতার সাথে ব্যাটের কিনারা বরাবর বল ফেলতেন। পরবর্তীকালে এ ধরনের বোলিংকে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যান। বেশ নির্দয়তার সাথেই বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। রিচার্ড হ্যাডলি’র যাদুকরী বোলিং তাঁর সাফল্যে ভাগ বসালে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়তেন, ‘লিলি আর কি করতে পারবে?’ ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার ও অবিসংবাদিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটান। তিনি তাঁর সময়কালে অসাধারণ ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বিশ্ব সেরা বোলারদের তালিকায় অবিশ্বাস্যভাবে স্থান করে নিয়েছেন। খুব কমসংখ্যক ক্রিকেট বিশ্লেষকই তাঁকে এ স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করার প্রয়াস চালাতে পারেন।
১৯৬৯-৭০ মৌসুম থেকে ১৯৮৮ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে তাসমানিয়া ও ওয়েস্টার্ন তাসমানিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে ২০ বছর বয়সে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। পরের মৌসুমে অ্যাশেজ সিরিজে অংশ নেন।
১৯৭১ থেকে ১৯৮৪ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৭০ টেস্ট ও ৬৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭০-৭১ মৌসুমে নিজ দেশে রে ইলিংওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৯ জানুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের ষষ্ঠ টেস্টে সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। আট-বল নিয়ে গড়া ২৮.৩ ওভার বোলিং করে ৫/৮৪ বোলিং বিশ্লেষণ গড়ে অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ০/৪০ লাভ করেন। পাশাপাশি, একবার ব্যাটিংয়ের নেমে ১০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সাত-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৭২ সালে ফিরতি অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড গমন করেন। এ সফরে উভয় দলের মধ্যে অসাধারণ বোলার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। ১৭.৬৭ গড়ে ৩১ উইকেট দখল করেছিলেন। এরফলে, ১৯৭৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। কিছু সময় পিঠের আঘাতের কারণে স্বাভাবিক খেলা প্রদর্শন করতে পারেননি ও খেলার বাইরে থাকেন। ১৯৭৪ সালের অ্যাশেজ সিরিজের মাধ্যমে পুণরায় টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের ফাস্ট বোলার জেফ থমসনের সাথে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা, কার্যকর ও অবিস্মরণীয় উদ্বোধনী বোলিং জুটি গড়েন। বিশ্বের সর্বত্র এ ধারা বজায় রেখে পেস ও নিষ্ঠুর আগ্রাসী ভূমিকা তাঁরা বহমান রাখেন। ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিং বিভাগের ত্রাসরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে বিই কংডনকে বিদেয় করে টেস্টে ১৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অকল্যান্ড টেস্টে সবমিলিয়ে ১২৩ রান খরচায় ১১ উইকেট দখল করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং করেন। খেলায় তিনি ৫/৫১ ও ৬/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ২৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা প্রায় দুইদিন বাকী থাকতেই ১০ উইকেটে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে দলের বয়োজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়ে পরিণত হন ও বলে পেস কমিয়ে দেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার চতুষ্টয়ের বিপরীতে প্রায় একাকী লড়েছেন। মেলবোর্নে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে খেলায় দশ উইকেট নিয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা আনেন। পাশাপাশি কালো অধ্যায়ের সাথেও নিজেকে যুক্ত করে রেখেছেন। মাঠে জাভেদ মিয়াদাঁদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। তাসত্ত্বেও তারকা ক্রিকেটার হিসেবেই নিজেকে মর্যাদার আসনে নিয়ে যান। ফাস্ট বোলিংয়ের ইতিহাসে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন।
ব্যাটিংয়ে তেমন পারদর্শী ছিলেন না। তাসত্ত্বেও, ব্যাট নিয়ে সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট চলাকালে অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট নিয়ে খেলতে নামেন। মাইক ব্রিয়ারলি’র অভিযোগের ফলে গ্রেগ চ্যাপেল দুঃশ্চিন্তায় পড়েন। আম্পায়ারদ্বয় ব্যাটটিকে অবৈধরূপে আখ্যায়িত করেন। রডনি হগকে ব্যাট পরিবর্তনের জন্যে বলা হলে তিনি অস্বীকার করেন ও জবাব দেন যে, অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট হাতে লক্ষ লক্ষ লোক টেলিভিশনে আমাকে দেখবে। এরপর, গ্রেগ চ্যাপেল লিলি’র কাঠের ব্যাট নিয়ে মাঠে নামেন ও উইলোটি দেন। এরপর শান্ত ভঙ্গীমায় অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট নিয়ে মাঠ থেকে ফিরে আসেন।
ব্যথা ও পিঠের সমস্যা নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন। অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ক্যারি প্যাকারের পরিচালনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। মে, ১৯৭৭ সালে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের অন্যতম খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে নয়টি সুপারটেস্টে অংশ নেন। এ পর্যায়ে ২২.৫০ গড়ে ৪৬ উইকেট দখল করেছিলেন।
১৯৮০-৮১ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে ছয় টেস্টে অংশ নিয়ে ৩৭ উইকেট লাভ করেন। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৮০ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৩৬ ও ৬/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্রায়েম উডের অসাধারণ ব্যাটিংনৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
বিশ্ব সিরিজ কাপের দ্বিতীয় আসরেও শীর্ষ বোলার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেন। ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। সব মিলিয়ে খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ২৩.৯২ গড়ে ৩৫৫ উইকেট পেয়েছেন। সংখ্যার দিক দিয়ে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড ছিল। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৩৫০ উইকেট ও ওডিআইয়ে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। এছাড়াও, ১৩.৭১ গড়ে ৯০৫ রান তুলেছিলেন।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুরদিকের দিনগুলোয়ও নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এ পর্যায়ে দীর্ঘ সংস্করণের ন্যায় তেমন গুরুত্ব দেয়া হতো না। অধিক ওডিআইয়ে অংশ নেননি। তাসত্ত্বেও, ২০.৮২ গড়ে ১০৩ উইকেট দখল করেছিলেন। শতাধিক ওডিআই উইকেট সংগ্রহকারীদের তালিকায় আফগানিস্তানের রশীদ খান ও জোয়েল গার্নারের পর বোলিং গড়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম খেলায় নির্ধারিত ১২ ওভারে ৫/৩৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে সর্বকালের সেরা বিশ্ব একাদশের দশটি তালিকার গড়পড়তা নয়টিতেই ঠাঁই পেয়েছিলেন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে পার্থের ওয়াকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দুই ওভার বোলিং করার পর খেঁই হারিয়ে ফেলেন। দলনায়ক ইয়ান চ্যাপেলের কাছে বিরতির আবেদন করলে গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি’র সাথে পরামর্শক্রমে তৃতীয় ওভার বোলিংয়ের জন্যে প্রস্তুতি নেন। এরপর, তারকাসমৃদ্ধ বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে ৭.১-৩-২৯-৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ৫৯ রানে গুটিয়ে ফেলতে যথার্থ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন।
১৯৭২ সালের অ্যাশেজ সফরে ১৭.৬৭ গড়ে ৩১ উইকেট পান। অনেকেরই অভিমত, পরের বছর মেরুদণ্ডের আঘাতের কারণে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে বিঘ্ন ঘটায়। কিন্তু, ফিজিওথেরাপি গ্রহণ করে নিজের উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হন।
১৯৭৪-৭৫ মৌসুমের খ্যাতনামা অ্যাশেজ সিরিজে কিথ ফ্লেচারের মুখোমুখি হন। ব্যাটিংয়ের জন্যে প্রস্তুতি নেয়া অবস্থায় ‘শুভেচ্ছা, ফ্লেচ। এখন তোমার এটি প্রয়োজন’ বলেই ফ্লেচারের মাথা বরাবর বাউন্সার মারেন। আরেকবার মাইক গ্যাটিংকে উদ্দেশ্য করে উত্যক্ত করতে মন্তব্য করেন, ‘ওহে গ্যাট, রাস্তা ছেড়ে দাও। আমি স্ট্যাম্পগুলো দেখতে পাচ্ছি না।’ আরও কিছু উত্তেজনাকর বাক্য ব্যবহার করতেন। ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করেছেন: ‘আমি জানি যে কেন তুমি খারাপ ব্যাটিং করছো। তোমার কিছু শট ব্যাটের নিচেরদিকে রয়েছে।’ যখন ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি আসতেন, তখন বলতেন ‘ভুল প্রান্তে এসে পড়েছো।’
অ্যাডিলেড ওভালে অভিষেক টেস্টে পাঁচ উইকেট লাভ করেছিলেন। এসসিজিতে নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালীন মন্টি নোবেল স্ট্যান্ডে পায়চারী করেন। সেখানে ঐ স্ট্যান্ডে কিথ মিলারকে দেখতে পান। রে লিন্ডওয়ালের ঠিকানা জানতে চান। তিনিই হয়তোবা তাঁকে বোলিং শেখাতে সক্ষম হবেন। অনেক সময়ই একাকী বিড়বিড় করে কথা বলতেন। হেডিংলিতে কয়েকটি ওয়াইড বল ছোঁড়ার পর পুণরায় বোলিংকালীন বলছিলেন, ‘কাম অন, ডেনিস. হোয়াট ইজ দ্যাট, ডেনিস?’
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এক পর্যায়ে নয়জন ফিল্ডারকে স্লিপ অঞ্চলে দাঁড় করিয়ে বোলিং করেছিলেন। বল হাতে নিয়ে ২/১১৯ ও ২/৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
দলীয় সঙ্গী কিম হিউজের সাথে বনিবনা ছিল। গ্রেগ চ্যাপেল ও রডনি মার্শকে সাথে নিয়ে কিম হিউজের বিরুদ্ধে অবস্থান করেন। ১৯৮১ সালের অ্যাশেজ সিরিজেও সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়। হেডিংলি টেস্টের চূড়ান্ত দিনের পূর্বে রডনি মার্শের সাথে ৫০০ : ১ বাজী ধরেন।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ১৯৮৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৬৫ ও ৪/৮৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, তাঁকে কোন ইনিংসেই মাঠে নামতে হয়নি। গ্রেগ চ্যাপেলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীতে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে ২৩.৪৬ গড়ে ৮৮২ উইকেট এবং ১৩.৯০ গড়ে ২৩৭৭ রান পেয়েছেন।
ঘন চুল, চকচকে গোফ ও গলায় স্বর্ণের চেইন পড়ে দক্ষতার সাথে রাজত্ব কায়েমের পরও ক্রিকেটের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন স্ব-মহিমায়। অবসর গ্রহণের পরও নিজেকে উচ্চ আসনে নিয়ে যান। নতুন প্রজন্মের ফাস্ট বোলারদের গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন। এছাড়াও, অবসর গ্রহণের পর নৈশভোজন পরবর্তী বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
১৯৭৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৬ সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যানুয়েল কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৮১ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মাননা হিসেবে ক্রিকেটে অসামান্য ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ এমবিই উপাধীতে ভূষিত হন। ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া দিবসের সম্মাননায় অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদবী লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। এ. লিলি নামীয় সন্তানের জনক।