৯ আগস্ট, ১৯২৬ তারিখে বার্বাডোসের রকলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে নিয়মিতভাবে অংশ নিতেন। ব্যাটিংয়ে সবিশেষ দক্ষতা ও বোলার হিসেবে অফ কাটার সহযোগে মিডিয়াম-পেস কিংবা অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। দক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বীতামুখর ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বিশেষতঃ কাঁধের সমস্যায় দীর্ঘদিন খেলতে পারেননি।
১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস ও ত্রিনিদাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫৮ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ২২ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১০ নভেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। জিমি ক্যামেরন ও অ্যালান রে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংস ৪৫ রান সংগ্রহসহ বিজয় হাজারে’র ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২৭ ও ০/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৫১-৫২ মৌসুমে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৫১ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেয়ে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে নিয়মিত অধিনায়ক জেফ স্টলমেয়ারের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর, নিউজিল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ বিজয়ে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের চতুর্থ টেস্টে স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিক্রম করেন। কেনসিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত খেলায় প্রতিপক্ষের ৬৬৮ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ এক পর্যায়ে ১৪৬/৬ হয়। একদিনেরও অধিক সময় ক্লেয়ারমন্ট দেপিয়াজা’র সাথে জুটি গড়ে সপ্তম উইকেটে ৩৪৭ রান সংগ্রহ করেন। তাঁদের সংগৃহীত রান ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে রেকর্ড হিসেবে চিত্রিত হয়েছিল ও টেস্টে অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৯ রান তুলেন ও খেলায় সাত উইকেট লাভ করেন। পরবর্তীতে এটিই তাঁর একমাত্র টেস্ট শতকে পরিণত হয়। বার্বাডোস টেস্টের পূর্বে ১৩ টেস্ট থেকে ৪২৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে ক্যারিবীয় দলের নেতৃত্বে থেকে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৩ মার্চ, ১৯৫৬ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/২০ ও ৫/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ৯ মার্চ, ১৯৫৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক জেআর রিডকে বিদেয় করে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৫৬। খেলায় তিনি ০/৪৫ ও ৭/৫৩ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২৮ ও ১০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, ২৬ বছর ও ৪৫ টেস্টে অংশ নেয়ার পর নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট বিজয়কে আটকাতে পারেননি। খেলায় তাঁর দল ১৯০ রানে পরাজিত হলেও ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম ও একমাত্র সফরে যান। এ সফরের শুরুতে দূর্দান্ত খেলেন। ওরচেস্টারে প্রথম খেলায় ৬২ রান খরচায় ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। কিন্তু, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনসহ কাঁধে আঘাতের ফলে খেলায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। ১১ মে, ১৯৫৭ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের সদস্যরূপে এসেক্সের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় ১২ উইকেট পান।
১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে নিজ দেশে ইমতিয়াজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৭ জানুয়ারি, ১৯৫৮ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৬১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। হানিফ মোহাম্মদের (৩৩৭) ত্রি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। বেটি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির পাঁচ কন্যা ছিল। ৯ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে বার্বাডোসে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৭৫ বছর ৯২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। স্যার গ্যারি সোবার্সের প্রতিভা সম্পর্কে তিনি অবগত হন। তাঁর ভ্রাতা ইএস অ্যাটকিনসন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে টেস্ট খেলেছেন।